Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফটিকছড়িতে মাঠ দখলে আওয়ামী পরিবার : হতে যাচ্ছে পাল্টা কমিটি

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বনাম নজিবুল বশর দ্ব›দ্ব!

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের আধিপত্য ও শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের বৃহত্তর জনঅধ্যুষিত উপজেলা ফটিকছড়ি। গত বছরের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে গোপন ব্যালটে বিজয়ী গ্রুপ বনাম বিজিত গ্রুপ ওই সম্মেলনের পর থেকে একে অপরকে ঘাঁয়েল করতে ‘ক্রাশ’ অভিযানে জড়িয়ে পড়েছে। আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছত্রছায়ায় বিজয়ী মুজিব-নাজিম গ্রুপ ‘আওয়ামী লীগের ব্যানারে’ এবং বিটিএফ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর ছত্রছায়ায় বিজিত সোলায়মান-তৈয়ব গ্রুপ ‘আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে’ পথচলা শুরু করে। বিজয়ীরা বিজিতদের অধিকাংশ নেতা বাদ দিয়ে এক তরফা কমিটি ঘোষণা করায় দু’গ্রুপের পৃথক পথচলা বিরোধ তুঙ্গে পৌঁছে। বিজিত গ্রæপ এ কমিটিকে অগ্রহণযোগ্য ও বির্তকিত বলে ওই প্রস্তাবিত কমিটি বাতিলের দাবি জানালে ফটিকছড়ি উপজেলা আ.লীগে শুরু হয় গৃহবিবাদ এবং গণবিদ্রোহ। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার পদবঞ্চিত গ্রুপ সম্প্রতি ইউনেস্কো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতির শোকরিয়া জানিয়ে ফটিকছড়ির ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ গণমিছিল-আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে তাক লাগিয়ে মাঠ দখলে নিয়েছে ফটিকছড়ি আওয়ামী পরিবার। তাদের নেতৃত্বে আজ-কাল বা যে কোন মুহূর্তে পাল্টা কমিটি ঘোষিত হতে পারে বলে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। ফলে উভয় পক্ষে তীব্র উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্বীকৃতিতে বিজিত গ্রুপের ওই আনন্দ শোভাযাত্রা হলেও নেপথ্য ইস্যূ ছিল মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ সমর্থিত আ.লীগ গ্রুপের বিরুদ্ধে বিটিএফ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপি নজিবুল বশর সমর্থিত আওয়ামী পরিবারের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। ২৫ অক্টোবর ফটিকছড়ির নানুপুরে প্রয়াত সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের স্মরণসভায় অযাচিতভাবে আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন হঠাৎ স্থানীয় এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলে তার সমর্থিত পদবঞ্চিত আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পাল্টা হিসেবে গত ৮ নভেম্বর মাইজভান্ডারে এক কর্মীসমাবেশে এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর তার প্রতিউত্তর দিলে আ.লীগের পদবঞ্চিত বিভক্তিতে বাঁকা আঙ্গুলের ‘ঘি’ উঠে। ওই সমাবেশে এমপির প্রকাশ্য সমর্থন পেলে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাড়ায় পদবঞ্চিত আওয়ামী পরিবার। ফলে আ.লীগ বনাম আওয়ামী পরিবার প্রকাশ্য বিভক্তি দৃশ্যপটে চলে আসে। এরপর আওয়ামী পরিবার ৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা আ.লীগের প্রস্তাবিত কমিটি ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিতর্কিতদের বাদ এবং ত্যাগীদের অন্তর্ভূক্তি করে পূর্ণাঙ্গ নয়া কমিটি না হলে ৯ ডিসেম্বর আনন্দ শোভাযাত্রা পরবর্তী যে কোনো সময় পাল্টা কমিটি ঘোষণার হুমকি দেয়। এর নেতৃত্বে থাকা জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম বাবুকে তড়িগড়ি সভা আহŸান করে জেলা আ.লীগের স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতির সুপারিশসহ বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় আ.লীগের কাছে রেজ্যুলেশন পাঠায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ.লীগ। যাতে ফটিকছড়ি আ.লীগে পাল্টা কমিটি ঘোষিত না হয়। কিন্তু পূর্ব ঘোষণার অংশ হিসেবে আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ফটিকছড়িতে স্মরণাতীতকালের সর্ববৃহৎ বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। এ সময় প্রায় দু’শ গজ দূরত্বে উপজেলা আ.লীগ কার্যালয়ের সম্মুখে আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লেও পুলিশ আ.লীগ ও আওয়ামী পরিবারের মধ্যখানে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আওয়ামী পরিবারের আনন্দ শোভাযাত্রাটি সদরস্থ মনিরা কমিউনিটি সেন্টার সম্মুখ থেকে বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাসস্টেশনস্থ মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম বাবু। আ.লীগ নেতা আহমদর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন উত্তর জেলা আ.লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ ফখরুল আনোয়ার, উপজেলা আ.লীগের সাবেক সেক্রেটারি চেয়ারম্যান এস এম সোলাইমান, জেলা আ.লীগ নেতা এইচ এম আবু তৈয়ব, উপজেলা আ.লীগ নেতা এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী, আহমদ রশিদ মাস্টার, এস এম ফসিউদ্দৌল্লাহ, হাসান সরোয়ার আজম চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল বশর চৌধুরী, মুহাম্মদ আলী সিদ্দিকীসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এ ব্যাপক শোডাউনের মধ্য দিয়ে তারা পাল্টা কমিটি গঠনের পথ সুগম করেছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে এবং আজ-কালের মধ্যে ফটিকছড়ি আ.লীগের পাল্টা কমিটি গঠনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ পাল্টা কমিটি গঠিত হলে ফটিকছড়ির দৃশ্যপট ভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে বলেও অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ