Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীপুর মুক্ত দিবস আজ

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : আজ ১২ ডিসেম্বর, শ্রীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শ্রীপুর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচÐ আক্রমণে লেজ গুটিয়ে ১১ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে শ্রীপুর ছাড়ে পাকহানাদার বাহিনী। এই দিনে শ্রীপুরের মাটিতে ওড়ে লাল-সবুজের পতাকা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শ্রীপুরের ইতিহাস ও কৃষ্টি বই সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল হানাদার বাহিনী শ্রীপুরে অবস্থান নেয়। শ্রীপুর থানা, গোসিংগার কাচারী বাড়ি, কাওরাইদ রেলস্টেশন, সাতখামাইর স্টেশন, গোলাঘাট ব্রিজ, ইজ্জতপুর ব্রিজ, বলদিঘাট হাইস্কুল ও গাজীপুরে গড়ে তোলা হয় আটটি পাক সেনা ক্যাম্প। রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাস থেকে ট্রেনযোগে শ্রীপুরে ছিল হানাদারদের সহজ যোগাযোগ। শ্রীপুর থানায় ছিল হানাদারদের প্রধান ঘাঁটি। স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী নিরীহ নারী-পুরুষ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ধরে এনে এসব ক্যাম্পে বর্বর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করত। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ায় কেওয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম আকন্দের পিতা আলমগীর বাদশা আকন্দকে ধরে এনে শ্রীপুর থানা ক্যাম্পে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সাত খামাইরে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয় সাত নিরীহ ব্যক্তিকে। শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন বদ্ধ ভ‚মি ও সাত খামাইরের গণকবর আজ ও হানাদার বাহিনীর বর্বরতার স্বাক্ষ্য বহন করে। হানাদার বাহিনীর উপর প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযোদ্ধরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আক্রমণের ছক তৈরি করেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নূর মোহাম্মদ ফকিরের নেতৃত্বে উড়িয়ে দেয়া হয় রাজা বাড়ির পারুলী নদীর ব্রিজ, গোসিংগা, কাওরাইদ, ইজ্জতপুর, গোলা ঘাট ও সাতখামাইরে দু‘টি সহ ছয়টি সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে হানাদার বাহিনী বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে পিছু হটতে শুরু করে । মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক গেঁড়িলা আক্রমনে মনোবল ভেঙ্গে যায় হানাদারদের। ৭ ডিসেম্বর জেড আই সুবেদের নেতৃত্বে ইজ্জতপুর ব্রিজ সেনাক্যম্পে হামলা করে মুক্তিযোদ্ধারা। রাতভর প্রচন্ড যুদ্ধে হানাদারদের বুলেটবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন গোসিংগা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র সাহাব উদ্দিন । হানাদার বাহিনী বনের ভিতর পুঁতে রাখে সাহাবদ্দিনের মরদেহ। পাক সেনারা একে একে সব ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়ে শ্রীপুর থানা ক্যাম্পে গড়ে তুলে শক্ত অবস্থান। মুক্তিযোদ্ধারা চার দিক থেকে থানা ক্যাম্প ঘিড়ে ফেলে। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচÐ আক্রমণ। বন্ধ করে দেয়া হয় হানাদারদের রশদ, খাদ্য সরবরাহ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ। মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক নূর মোহাম্মদ ফকির জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচÐ আক্রমণে হানাদার বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পরে। শহীদ হওয়ার চারদিন পর ১১ ডিসেম্বর বিকেল পোনে পাঁচটার দিকে তার নেতৃত্বে এক দল মুক্তিযোদ্ধা ইজ্জতপুর থেকে শহীদ সাহাব উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধারের অভিযান চালায়। এ সময় হানাদার বাহিনীর টহল ট্রেন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাল্টাপাল্টি গুলি বর্ষণ চলে। ১১ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে হানাদার বাহিনী শ্রীপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ১২ ডিসেম্বর ভোরে শ্রীপুর সম্পূর্ণরুপে হানাদার মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পরে। উল্লাসিত জনতার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক। শ্রীপুরের মাটিতে উড়ে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ