Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খট খট শব্দে মুখরিত আদমদীঘির শাওইল বাজার এলাকা

শীত এলেই ব্যস্ততা বাড়ে তাঁতশিল্পের

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে মো. মনসুর আলী : বগুড়ার আদমদীঘি তাঁতশিল্পের ইতিহাসে দেশে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা রাখছে শাওইল ও তার আশপাশের গ্রাম। উত্তরবঙ্গের এই তাঁতীগোষ্ঠী আজো ধরে রেখেছে তাঁতসংস্কৃতি। বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রামের নাম শাওইল। এই গ্রামে অনেক আগে থেকেই তাঁতী শ্রেণীর মানুষের বসবাস। আর তার ফলে শাওইল গ্রামে তখন থেকেই এক ভিন্নধর্মী হাট গড়ে ওঠে। এই হাটকে ঘিরে সেখানে গড়ে উঠেছে সুতা, উলের তৈরি পুরাতন কাপড়ের শত শত দোকান ও মার্কেট। দিন-রাত খুচরা ও পাইকারিভাবে শীতের চাদর কম্বল উলের (উলেন) সুতা কেনাবেচা। পর্যায় ক্রমে এই হাটের প্রাচীনতা আর জনপ্রিয়তার জন্য এবং বিক্রি হচ্ছে এলাকার তৈরি চাদর কম্বল গাছা তোয়ালাসহ বিভিন্ন প্রকার শীতবস্ত্র। সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বুধবার বড় হাট বসে।
তা ছাড়াও প্রতিদিনই এই হাটে শীতবস্ত্র বিক্রি বেশি হয় বলে বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে এই হাট ‘চাদর-কম্বল হাট বলেও পরিচিত। ভোর ৪টা থেকে শুরু হওয়া এই হাট চলে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত। এই হাটকে ঘিরে প্রায় ২৫ টি গ্রামে গড়ে উঠেছে তাঁতশিল্প। তারাই কম্বলকেন্দ্রিক এ শিল্পের এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। যখন শাওইলের হাট বসে তখন এলকার রাস্তাঘাট দিয়ে কারিগরেরা মাথায় ও ভারে করে লাইন ধরে তাদের তৈরি করা শীতবস্ত্র নিয়ে এই হাটে আসেন। দূর-দূরান্ত থেকে শীতবস্ত্র কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় সবসময় মুখরিত হয়ে উঠে হাটের আশেপাশের গ্রামের পথঘাট। এই হাটকে ঘিরে চলে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ সারাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীদের চাদর-কম্বল আর সুতা কেনার প্রতিযোগিতা। হাট ঘিরে চারেপাশে শত শত ট্রাক, বেবি ট্যাক্সি, রিকশা-ভ্যানের উপস্থিতি। তাঁতের খট খট শব্দে আর সুতার বুননে মিশে আছে শাওইল বাজারসহ আশে পাশের গ্রামের মানুষের স্বপ্ন। কারো রয়েছে নিজের তাঁত, আবার কেউ শ্রম দিচ্ছেন অন্যের তাঁতে। প্রযুক্তি দাপট তারপরেও এই আদি শিল্প শাওইল গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের আঁকড়ে ধরে আছে। গ্রামজুড়ে একটানা তাঁতের খট খট শব্দে মুখরিত গ্রামের পরিবেশ আর নারী-পুরুষসহ নানা পেশার মানুষের ব্যস্ততা। কেউ সুতা ছাড়াচ্ছেন, আবার কেউ বা চরকা নিয়ে বসে সুতা নলি বা সূচিতে ওঠাচ্ছে কেউ বা সুতা ববিন করছেন। প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় ও ঘরে বসানো পরিপাটি তাঁতযন্ত্র দিন-রাত চলছে। প্রতিটি বাড়িতেই কম করে হলেও ২টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তাঁত রয়েছে। কোনোটা চাকাওয়ালা, আবার কোনোটা একেবারেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে হাতের তৈরি। শাওইল ছাড়াও দত্তবাড়িয়া, মঙ্গলপুর, দেলিঞ্জা, পুশিন্দা, কেশরতাসহ আশপাশের প্রায় ২৫ গ্রামের চিত্র একইরকম। শাওইল গ্রামের চারে পাশে তাঁতীদের অধিকাংশ মানুষের মূল পেশায় তাঁতশিল্পকে ঘিরে। আশপাশের ২৫ গ্রামে ১০ হাজারেরও বেশি তাঁতী পরিবার আছে, আর এ শিল্পকে ঘিরে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। কেউ বংশপরম্পরায় আবার কেউবা নতুন করে। শীত এলেই বেড়ে যায় এ শিল্পের সাথে জড়িত সকল শ্রেণীর মানুষের। শীত মৌসুম ছাড়াও সারা বছর শাওইলসহ আশপাশের তাঁতীরা শুরু করে কম্বল তৈরি ও সুতা বোনা ও সুতার তৈরি বড় চাদর-কম্বল, বিছানার চাদর থেকে শুরু করে লেডিস চাদর-কম্বল, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালেসহ নানা ধরনের শীতবস্ত্র ও পোশাক তৈরির কাজ করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ