Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আয়-ব্যয় হিসাব মিলাতে হিমশিম

চড়া সুদে টাকা নিয়ে চন্দনাইশে শীতকালীন সবজি চাষ

প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:২৩ পিএম, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) থেকে এম এ মোহসিন : চট্টগ্রামে চন্দনাইশে সবজিচাষিরা অর্থের অভাবে বিভিন্ন এনজিও, সুদি মহাজন থেকে ছড়া সুদে টাকা নিয়ে মৌসুমি সবজি তথা শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেও চাষিরা আয়-ব্যয় পুষিয়ে আসতে নানাভাবে হিমশিম খাচ্ছেন। চাষিরা জানান, চলতি বছরে দফায় দফায় চারবার বন্যার কবলে পড়ে তাদের সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরপরও তারা সবজি উৎপাদনের হাল ছাড়েননি। চন্দনাইশে উৎপাদিত মৌসুমী শীতকালীন সবজি ও কৃষকদের উৎপাদিত রবিশষ্য চন্দনাইশ ছাড়াও দেশের সর্বত্রে রফতানি হয়। চন্দনাইশের প্রসিদ্ধ কাঁচা তরিতরকারি বিক্রির জন্য দোহাজারি রেলওয়ে সংলগ্ন এশিয়ার মাঠ নামে খ্যাত ওই স্থানে প্রতিদিন সকালে বৃহত্তর কাঁচাবাজারের হাট বসে। এতে চন্দনাইশের দক্ষিণে কক্সবাজার, উত্তরে চট্টগ্রাম শহরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বেপারিরা ট্রাকে করে কাঁচা তরিতরকারি রফতানি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
চাষিরা আরো জানান, দৈনিক পাঁচশত টাকা শ্রমিক মজুরি দিয়ে এবং সার ও পোকা দমণে কিটনাশক প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে হিমশিম খাচ্ছেন। যেহেতু তারা দফায় দফায় চারবার বন্যায় সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও বা এ বছর সবজির দাম আগেকার চেয়ে বেশি। এ ব্যাপারে চাষি আব্দুর রহমান জানান, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ, সংরক্ষণ ও পরিবহনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার কারণে চাষিরা সবজি উৎপাদনের জন্য খ্যাত চন্দনাইশ উপজেলা সবকটি ইউনিয়নে সবজি উৎপাদিত এলাকাসমূহের মেহনতি চাষিরা এ বছর রেকর্ড পরিমাণ সবজি ও কাঁচা ফল-মূল উৎপাদন করেও বন্যার কারণে উচ্চ দামে সবজি বিক্রি করেও লাভের মুখ দেখছেন না।
এবার শীত মৌসুমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারী, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, বরমা, বরকল, কাঞ্চনাবাদ, হাসিমপুর ও ধোপাছড়িসহ তার আশপাশের এলাকায় মোটামুটিভাবে শাক-সবজির ফলন হয়েছে। কৃষকরা জানান, বন্যা ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও অন্যান্য বছরের তুলনায় সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে আশানুরূপ লাভ দেখছেন না। বর্তমানে ভোর থেকে একটানা দুপুর পর্যন্ত রকমারি টাটকা শাক-সবজির বহর নিয়ে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী সড়ক ও সঙ্খ নদীর নৌপথে দোহাজারী কাঁচা তরিতরকারির হাটে এসে সমবেত হন। এদের অধিকাংশই দোহাজারী, সাতবাড়িয়া, বৈলতলি, হাসিমপুর, ধোঁপাছড়ি, বাজালিয়া, লালটিয়া, হাতিয়াখোলা, চাগাচর, খাগরিয়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচা সবজি ব্যবসায়ী। এসব শাক-সবজি এতদঅঞ্চলের চাহিদা পূরণের সাথে জেলার অন্যান্য স্থানেও সরবরাহ করা হয়।
অভিজ্ঞ মহল সূত্র জানায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালি থানায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে এসব শাক-সবজির চাষাবাদ করা হলে খাদ্য ঘাটতি পূরণের সাথে দ্রæত অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব। এলাকার চাষিরা জানান, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা তথা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে সুধি মহাজন ও বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে চাষিদের ঋণ নিতে হবে না। এখানকার মেহনতি চাষিদের প্রতি সরকার সুনজর দিলে স্বল্পমূল্যে সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ পেলেও কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হলে অচিরেই দক্ষিণ চট্টগ্রামে চন্দনাইশের কৃষি-শিল্পনগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
কৃষকরা জানান, দোহাজারী থেকে চট্টগ্রামী ছয়টি ট্রেন ও মালবাহি ট্রেন যুগযুগ ধরে বন্ধ থাকায় কাঁচা তরিতরকারি ব্যবসায়ীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে দোহাজারী লাইনে ছয়টি ট্রেনের স্থলে মাত্র একটি ট্রেন যাত্রিসেবার নামে যাতায়াত করছে। কাঁচা তরিতরকারী ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, শীতের আগমনে শীতকালীন শাক-সবজির পাইকারি বাজারগুলোতে কাঁচা তরিতরকারির মূল্য প্রতি কেজি যথাক্রমে- বেগুন ৪০-৫০ টাকা, শিম ৬০-৭০ টাকা, লাউ ৩০-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫-৪০ টাকা, লালশাক ১৫-২০ টাকা, ধনে পাতা ৩০-৪০ টাকা, ফুলকপি কেজি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধা কপি প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা, বরবটি প্রতি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামীতে কৃষকদের নতুন সবজি এলে সবজির দর আরো কমতে থাকবে। এখানে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে পাইকারি বেচাকেনা। ব্যবসায়ীরা এগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে চার-পাঁচ গুণ বেশি দরে বিক্রি করে থাকেন। মাঝখানে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও বেপারীরা। অনেক সময় চাষিরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারেন না। হতাশ হয়ে অনেক চাষি মাথায় হাত দিয়ে সবজি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হন।
তাই কৃষকরা বলেন, এ অবস্থায় অবসানকল্পে কোনো বাস্তবমুখী পদক্ষেপ একান্তভাবে প্রয়োজন। প্রতিদিন সকাল ও বিকেল পরিবার-পরিজন নিয়ে চাষিরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সবজি উৎপাদন করেন। এখানে পুরোপুরিভাবে বৃহদাকারে সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। চাষিরা জানান, সবজি ক্ষেত দেখলে মনটা ভরে যায়। চাষিরা জানান, তারা সরকারিভাবে সার্বিক সহযোগিতা তথা সহজ শর্তে কৃষিঋণ পেলে আরো অধিক ফলনে সহায়ক হবে। এখানকার কৃষকরে শীতকালীন সবজি ছাড়াও মৌসুমী রবিশষ্য উৎপাদনে আগ্রহী। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের সুদি মহাজন ও বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। এতে আবার দফায় দফায় বন্যার কবলে পড়ে অনেক চাষিকে সর্বস্ব হারিয়ে করুণ মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। অনেক চাষির জায়গাজমি না থাকায় বাৎসরিক বর্গা চাষ নিয়ে চাষাবাদ করতে হয়। এ অবস্থায় বন্যার কবলে পড়ে একবার মূলধন হারিয়ে আবার চাষাবাদ করতে পারেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ