বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পর্যটন নগরী কক্সবাজার সৈকতের ঐতিহ্যবাহী হোটেল শৈবালটি এখন বেসরকারী খাতে চলে যাচ্ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার সম্পত্তি সরকারের বেহাত হয়ে যাচ্ছে। ওরিয়ন গ্রুপ নামে একটি প্রাইভেট কোম্পানীর কাছে ৫০ বছরের জন্য মাত্র ৬০ কোটি টাকায় এটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চ‚ড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। কঠোর গোপনীয়তার সাথে এ সংক্রান্ত টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলেও বিশ্বস্থ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এতে পর্যটকসহ স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। পর্যটন কর্পোরেশনের এই পদক্ষেপ পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা।
১৯৬৫ সালে সাগরিকা রেস্তোরা চালুর মধ্য দিয়ে কক্সবাজার পর্যটনে হোটেল শৈবালের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে আজ অবদি রেস্তোরাটি ভোজন রসিকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৮৫ সালে এখানে আবাসিক প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। চড়ায়-উৎরাই পেরিয়ে পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে হোটেল শৈবাল বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছে। ১৩৫ একর ভূমির উপর স্থপিত হোটেল শৈবাল সেই থেকে অর্ধ শতাব্দিরও বেশী সময় ধরে হোটেল শৈবাল পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
১৩৫ একর মোট ভ‚মির ১৩০ একর জমি পিপিপি প্রকল্পের আওতায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। একই সাথে ১৩০ একর জমি ছাড়াও হোটেল শৈবালের অত্যাধুনিক তিন তলা ভবন, সাগরিকা রেস্তোরা ভবন, সুইমিংপুল ভবন, লাইভ ফিস রেস্তোরার দোতলা ভবন, শৈবালের গলফ বার ভবনসহ মোট ১৪০ কোটি টাকার ভবনও হস্তান্তর করা হবে। পর্যটন এরিয়ার প্রাইম লোকেশনে হোটেল শৈবালের প্রতি শতক জমির মূল্য নূন্যতম ৩৫ লক্ষ টাকা ধরা হলে ১৩০ একর জমির মূল্য প্রায় ৪ হাজার ৫৫০ কোটি। এছাড়া হোটেল শৈবালের ভবনসহ আশপাশের অন্যান্য ভবনের মূল্য ১৪০ কোটি টাকা। কিন্তু পিপিপি প্রকল্পের আওতায় বির্তকিত ওরিয়ন গ্রুপকে মাত্র ৬০ কোটি টাকায় শৈবালের সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়টি কার স্বার্থে কেউ জানেনা।
এদিকে হোটেল শৈবাল ৬০ কোটি টাকায় নামে মাত্র মূল্যে ওরিয়ন গ্রুপকে হস্তান্তরের খবরে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি অদক্ষ ওরিয়ন গ্রুপকে হস্তান্তর করা হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজনীতিক বোদ্ধারা। শৈবালের জমি ওরিয়ন গ্রুপকে হস্তান্তরের জন্য পর্যটন করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওরিয়ন গ্রুপকে পানির দামে মূল্যবান এই জমি দেয়ার যোগসাজেশ করেছে বলেও মনে করনে অনেকে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কর্মচারি ইউনিয়ন ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের অধিকাংশ নেতাদেরও টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে যাদের ম্যানেজ করা হয়নি তাদের মুখ খুললে পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে পদস্থ কর্মকর্তারা হুমকী দেন বলেও জানাগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবলিক পার্টনারশীপ ধারণা নিয়ে সচিবালয়ে একটি অফিস রয়েছে। অফিসটি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কাজ করে থাকে। পিপিপি দপ্তরটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত জায়গা নিয়ে কাজ করছে। কক্সবাজারের হোটেল শৈবাল, মোটেল উপল, সিলেটের পর্যটন মোটেল, খুলনা শহরের মুজগুন্নি এলাকার পর্যটন করপোরেশনের জমি নিয়ে মূলত কাজ করে ওই দপ্তরটি। প্রকল্পের শুরুর দিকে কক্সবাজারে আয়োজিত একটি সভায় হোটেল শৈবালের ভবন ও আশপাশের খালি জায়গায় বিভিন্ন কটেজ ও এমিউজমেন্ট পার্ক করা হবে বলে ধারণা দেয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি জমি ও ভবন দখল নিয়ে পরবর্তীতে জানানো হবে শৈবালের জায়াগায় কি হবে? জনসাধারণকে অন্ধকারে রেখে পর্যটন করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। এব্যাপারে গোপনীয়তার মাধ্যমে পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের প্ল্যানিং ডিভিশন পিপিপি এর প্রস্তাবটি প্রস্তুত করে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামে সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ফরহাদ ইকবাল বলেন, প্রাইভেট কোম্পানীর কাছে হোটেল শৈবাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রচার হলে আরো অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে অংশ নিতো। এতে পাওয়া যেত বিশাল অংকের টাকা। কিন্তু গোপনীয়তা রক্ষায় হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি পানির দরে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের যুগ্ন আহবায়ক এইচ,এম নজরুল ইসলাম বলেন, নিজেদের পকেট ভারী করে হোটেল শৈবালের হাজারো কোটি টাকার জমি নামমাত্র মূল্যে দেয়া হচ্ছে। তা সত্যিই দুঃখজনক। তা না করে হোটেল শৈবালের বিদ্যামান ভবন গুলো সুরক্ষিত রেখে শুধু মাত্র খালি জায়গা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা যেত। ভবনগুলো সংস্কার করে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করা হলে পর্যটন শিল্পের আরো বিকাশ হবে।
সেইফ দ্যা নেচার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ.ন.ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, এই ওরিয়ন গ্রুপ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাতা। যে ফ্লাইওভার ধসে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়। তাছাড়া এই কোম্পানীর কারণে ধ্বংস হয়েছে ওরিয়ন ব্যাংক। হোটেল শৈবালে নথিটি দেশের অনেক মন্ত্রণালয়ে ছাড়পত্র পেয়েছে দ্রুত গতিতে। সে হিসেবে অর্থের স্রোতও প্রবাহিত হয়েছে অনেক।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোটেল শৈবালের বিভিন্ন পয়েন্টে ওরিয়ন গ্রুপের সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে। সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে শৈবালে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথেও বাড়াবাড়ি হয় ওরিয়েন্ট কর্মীদের।
এ ব্যাপারে পর্যটন করপোরেশনের কর্মচারির ইউনিয়নের কক্সবাজার উপ-কমিটির সভাপতি মোঃ মহসিন জানান, ওরিয়ন গ্রুপের কাছে হোটেল শৈবাল হস্তান্তর করা হলে শত শত শ্রমিকের চাকরী চলে যাবে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও কেন্দ্র থেকে সাশানো হচ্ছে।
পর্যটন করপোরেশনের কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক সিজান বিকাশ বড়–য়া জানান, ওরিয়ন গ্রুপের কাছে শৈবাল হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তারা এখনো কোন চিঠি পায়ননি। তাই ওরিয়ন গ্রুপের কর্মচারিরা এখানে সাইনবোর্ড লাগাতে আসলে তাদের সাথে তর্কাতর্কি হয়। পরে পিপিপি ও পর্যটন করপোরেশন থেকে কল করে তাদের সাইনবোর্ড লাগাতে বাধা না দেয়ার জন্য বলা হয়।
এদিকে হোটেল শৈবালের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তি দেশের চিহ্নিত চক্রের ক্রীড়ানকে যাতে পরিণত না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।