Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৬ শতাধিক রোগী

চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার, কুষ্টিয়া থেকে : কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গত ৫ দিনে শিশুসহ ৬ শতাধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। ফলে রোগীগদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে। ফলে শীতের কারনেই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এরমধ্যে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে কয়েকদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বল্প লোকবল ও পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রায় ৬ শতাধিক শিশুরোগী ভর্তি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। আবহাওয়া দুর্যোগের কারনে বিভিন্ন বয়সী শিশু এবং বড়রাও জ্বর, বমি, পাতলা পায়খানাসহ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
এদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই শিশু। যাদের বয়স ৩ মাস থেকে ৫ বছর বলে হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্য রেনুকা পারভিন জানান। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডাইরিয়া ওয়ার্ডে রয়েছে ১৪২ জন রোগী তার বেশির ভাগই শিশু। ডাইরিয়া ওয়ার্ডে বেড না থাকাই ওয়ার্ডের মেঝেতে ও হাসপাতালের দর্শনাথীদের খাবার স্থানে রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া ছাড়াও অনেক শিশুই নিউমোনিয়া ও সর্দি-কাশিতে ভুগছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগে বেড ফাঁকা নেই, যার ফলে মেঝেতেও রোগীদের জন্য বিছানা পাতা হয়েছে। শিশুরা বমিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও অনেক শিশু রোগীকে অভিভাবকরা হাসপাতালে নিয়ে এসে বর্হির বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে যান।
হাসপাতালের ডায়রিয়া বিভাগের নার্স ইনচার্য রেনুকা পারভিন হাসপাতালের ভর্তিকৃত রেজিস্ট্রার খাতা দেখে জানান, গত ৩ ডিসেম্বর সারাদিনে মোট ৯৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে, ৪ ডিসেম্বরে ভর্তি হয়েছে ১৪৪ জন, ৫ ডিসেম্বরে ১৩৬ জন এবং ৬ ডিসেম্বর সন্ধা পর্যন্ত মোট ১৪২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এসব রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বলে তিনি জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া কবুর হাটের সুজন জানান, তার ৩ মাসের জমজ ২ পুত্র ওয়ালিদ,খালিদ ও স্ত্রী নাছিমাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেছে ডায়রিয়ার কারনে। চিকিৎসা চলছে, বর্তমানে তাদের অবস্থা বেশ ভালো।
কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ার স্বপন আলী জানান, তার ১৩ মাসের মেয়ে ইয়াছমিনকে ভর্তি করেছে বমি ও ডায়রিয়ার কারনে।
কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুরের ছাইফুল জানান, সে তার ৩ মাসের মেয়ে লিজাকে ভর্তি করেছে ডায়রিয়ার কারনে ।
রোগীর স্বজনদের সাথে কথা হলে, ইয়াছমিন নামের এক রোগীর মা মিলা জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চিকিৎসার মান ভাল, হাসপাতাল থেকে ওষুধ দিচ্ছে।
হাসপাতালে শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ জমির উদ্দিন জানিয়েছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে শিশুসহ নানা বয়সীর মানুষ অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা বেশী অসুস্থ হওয়ার পিছনে তার মায়েরা সচেতন হলে রোগ ব্যাধির সংখ্যা কমে যাবে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতে প্রতি বছরই ঠান্ডা ও জ্বর এবং ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ বছরও ঠিক তেমনী রোগীর সংখ্যার বেড়ে গেছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন এভাবে চলতে থাকলে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি আশংকা করেছেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা.আবু হাসানুজ্জামান জানান, প্রয়োজনের তুলনায় শিশু ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা অনেক কম। তার পরও শিশুদের চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শীতের কারনে শিশুরাই বেশী আক্রান্ত হয় এবং হচ্ছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার পাল বলেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনে শিশুসহ নানা বয়সী মানুষের ডায়রিয়া বেড়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত ঔষধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। সেই সাথে রোগীর কোন সমস্যা যেন না হয় সেদিকে ডাক্তারদের নজর দিতে বলা হয়েছে। কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন জানান, সামনে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ