পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, ছাত্রছাত্রীদের আগামীর সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের মাদরাসাগুলোর ক্লাসে আদর্শ-নৈতিকতার শিক্ষার প্রাধান্য দেয়া হয়। এ বাস্তবতা বুঝে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের মাদরাসার পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছেন। মাদরাসাগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে মাদরাসার শিক্ষিতরাই একদিন দেশের নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ হবে ইসলামি রাষ্ট্র। এ জন্য আলেম-ওলামাদের আরো বেশি করে অধ্যায়ন ও গবেষণা করতে হবে; জ্ঞানার্জনে ব্যাপক পড়াশোনা করতে হবে। কেন না, বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষিতরা প্রচার করেন, মাদসারার ছাত্রছাত্রীরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে জানেন না। মেধা চর্চার মাধ্যমে এই অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। গতকাল জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মাদকের ভয়াল থাবায় ক্ষতবিক্ষত দেশ। দেশব্যাপী ভয়ঙ্করভাবে বিস্তার লাভ করেছে মাদক। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলোÑ নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেঁকে বসেছে ইয়াবা সিন্ডিকেট। ছাত্র-শিক্ষকরাই এর বিক্রেতা এবং খরিদদার। সম্প্রতি সরকারি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যা সুন্দরভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এটি একটি খন্ডচিত্র। যে বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, সেই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই হাল! তারা কিভাবে উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানুষ তৈরি করবে? শিক্ষালয়ে এভাবেই নতুন প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাঁজা-ইয়াবা খায় এমন নজির নেই। প্রতিবেদনে কোনো মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাম নেই। কারণ একটাই মাদরাসাগুলোয় নৈতিক শিক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। সরকার টাকা খরচ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে যে কাজটা করতে পারে না; মাদরাসার শিক্ষক, আলেম-ওলামারা সেটা ফ্রিভাবে শিক্ষা দিচ্ছে। মাদরাসায় জঙ্গিবাদ ও ইয়াবা সিন্ডিকেট নেই এমন কথা প্রায়শই বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী। তারা সঠিক কথাই বলে থাকেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এমন সুনামের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। মাদক ও জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবা থেকে জাতিকে বাঁচাতে হলে আলেমসমাজ তথা মাদরাসা শিক্ষকদের অগ্রণী ভ‚মিকা রাখতে হবে।
বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সাফাওয়াং কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রাজশাহী বিভাগীয় এই প্রতিনিধি সম্মেলন উৎসবমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান স্থলে দেশের মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের হৃদয়ের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন উপস্থিত হলে সভায় তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। এর আগে সকাল ১০টায় কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করেন মাওলানা মো. আব্দুল গফুর।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন রাজশাহী আঞ্চলিক সভাপতি মওলানা আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মোকাদ্দাসুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজী। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সালাম আল মাদানী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী জেলা জমিয়াতের সভাপতি ও বাঘা ফাজিল মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফুর, রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. জাকারিয়া হোসেন, বলিহার স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান মাওলানা মো. রুহুল আমিন, বগুড়া জেলা জমিয়াতের সম্পাদক মো. আব্দুল হাই বারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও জেলা জমিয়াতের সভাপতি মাওলানা মো. মোস্তাফিজুর রহমান, নাটোর জেলা সভাপতি ও আল মাদরাসুল জামহুরিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আখতারুজ্জামান, পাবনা জেলা সভাপতি মো. আনছারুল্লাহ, সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি ও উল্লাপাড়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আতিকুর রহমান, জয়পুরহাট জেলা কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও জমিয়াতের জেলা সভাপতি মো. আব্দুল মতিন, সিরাজগঞ্জ জেলা জমিয়াতের সভাপতি মো. আতিকুর রহমান প্রমুখ।
মাদরাসা শিক্ষকদের এই বিভাগীয় সম্মেলনে সকাল থেকেই বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলা থেকে আসতে শুরু করেন আলেম-ওলামা এবং বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিপুল সংখ্যক আলেমের উপস্থিতিতে মূল অডিটোরিয়াম হলে জায়গার সঙ্কুলান সম্ভব না হওয়ায় পাশের হলরুমে বসার ব্যবস্থা ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে বক্তাদের বক্তব্য শোনার সুযোগ করে দেয়া হয়। তারপরও আগতদের অনেককেই দাঁড়িয়ে থেকেই বক্তৃতা শুনতে হয়। সমাবেশে আগত আলেম-ওলামাদের মধ্যে ছিল আনন্দের বন্যা।
সম্মেলনে বক্তারা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের প্রাণপুরুষ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আব্দুল মান্নান (রহ:)-এর নাম। বক্তারা বলেন, মাওলানা আব্দুল মান্নান যদি জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের হাল না ধরতেন, তাহলে হয়তো মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনব্যাপী অবহেলায় থাকতে হতো। মাওলানা মান্নান মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের প্ল্যাটফরমে দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মন্ত্রী হয়ে তিনি মাদরাসার শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন এমন কামনা করেন সবাই। সমাবেশে আসা আলেম-ওলামা ও শিক্ষকদের অনেকের মুখে মুখে ছিল মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ:)-এর নাম। বক্তারা বলেন, মাওলানা মান্নানের ইন্তিকালের পর অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। সে শূন্যতা পূরণ করে চলেছেন মরহুমের সুযোগ্য পুত্র জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন।
ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন হলো আলেম-ওলামাদের সংগঠন। এখানে হাজার হাজার আলেম আছেন যারা দেশের মাদরাসাগুলো চালান; তারা দেশের রাজনীতি বোঝেন। তাদেরকে ভুল বুঝলে সরকার মারাত্মকভাবে ভুল করবে। কারণ তাদের দাড়ি-টুপি থাকার জন্য তথাকথিত প্রগতিশীলদের চেয়ে যে তারা কম বোঝেন এমন নয়। ব্যক্তিগত জীবনে পরিচ্ছন্ন ও নৈতিক শিক্ষার এই কারিগররা ভালোভাবে জানেন কিভাবে দাবি আদায় করতে হয়। তিনি বলেন, জনমত তৈরি হয় মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে। তাই আলেম-ওলামাদের বুঝতে হবে দেশের মানুষ যে এখনো আলেমদের শ্রদ্ধা করে, বিশ্বাস করে তা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রচেষ্টার কারণেই। তাই যাতে মাদরাসা শিক্ষাকে নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি তৈরি না হয় তার জন্য জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কাজ করে যাচ্ছে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই, কোনো বিভেদ নেই, আমাদের মধ্যে একতা আছে। আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করি। এই জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল; কিন্তু কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারেনি, কখনো ক্ষতি করতে পারবেও না। কারণ এই জমিয়াতুল মোদার্রেছীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাদের ভ‚মিকা আছে। তাদের দোয়া আছে তাদের পরিশ্রম আছে, তাই এই জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেউ ক্ষতি করতে পারবে না।
জমিয়াত সভাপতি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইবতেদায়ি থেকে শুরু করে আলিম-ফাজিল পর্যন্ত সিলেবাসের কোনো পরিবর্তন করতে হলে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে আলোচনা করেই করতে হবে। অন্যাথায় কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। আমরা আশা করব, সরকার এই কাজটা করার জন্য আন্তরিক হবে। তিনি মাদরাসা শিক্ষক ও আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আগামী দিনে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করার জন্য মাদরাসার শিক্ষকদেরকে সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা পালন করতে হবে। কেন না শিক্ষামন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রীরাই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, মাদরাসা থেকে শিক্ষিতরাই নৈতিক চরিত্রের চর্চা করে। তারা কোনো অন্যায় কাজ করে না। তারা সবসময় সৎভাবে চলাচল করে। সম্মানিত মন্ত্রীদের কথার মান মাদরাসা শিক্ষিতরা রক্ষা করেছেন। তাই আমাদের আরো সচেতন হতে হবে যাতে কোনো প্রকার সমালোচনা করার সুযোগ না পায়। তিনি আরো বলেন, মাদক-জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, মেডিক্যালসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম গোয়েন্দা প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে দেশের কোনো মাদরাসার নাম নেই। এটাই তো আমাদের কৃতীত্ব। আমরা চাই আগামীতে বাংলাদেশ হবে ইসলামি রাষ্ট্র, সেখানে মাদরাসা শিক্ষিতরাই দেশ পরিচালনা করবে। এ জন্য আলেম-ওলামাদের আরো বেশি করে অধ্যয়ন করতে হবে, ব্যাপক পড়াশোনা করতে হবে। কেন না বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষিতরা বিভিন্নভাবে সমালোচনা করে, আলেমরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে খুব বেশি জানে না। মেধা চর্চার মাধ্যমে তাদেরকে আমাদের জবাব দিতে হবে। আমাদের এখন থেকে সকল বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসের জায়গা ইসলামে নেই। কিন্তু অভিযোগ করা হয় দেশের মাদরাসাগুলোতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এগুলো শিক্ষা দেয়া হয়। পশ্চিমাদের এই মিথ্যা প্রচারণায় সুর মিলিয়ে এ দেশের কিছু ইসলামবিদ্বেষী শিক্ষিত মানুষ মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে থাকেন। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে, তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের প্রচারণা এবং মাদরাসা সম্পর্কে সরকারের এ ধারণা ভুল। তারা ভুল বুঝে এতদিন অপপ্রচার করেছে। তাদের এ ভুল ভাঙানোর দায়িত্ব আলেম সমাজকেই নিতে হবে। নইলে আলেম সমাজকেও বিভিন্নভাবে আরো ব্যাপক আকারে সমালোচিত হতে হবে।
বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রখ্যাত এই সাংবাদিক বলেন, বর্তমান মুসলিম বিশে^র মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যর দেশ বিশেষ করে সউদী আরবের কাছ থেকে। তারা একদিকে সন্ত্রাসীদের হত্যার জন্য অস্ত্র কিনছে অন্য দিকে বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের উসকানি দেয়ার মাধ্যমে মুসলিম বিশে^ সমালোচিত হচ্ছে। তিনি সউদী আরবের যুবরাজ সালমানের নাম উল্লেখ করে বলেন, সউদী যুবরাজ সালমান নিজের ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করার জন্য বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসের ইন্ধন দিচ্ছে, টাকা দিচ্ছে, অস্ত্র কিনতে সহায়তা করছে। কিন্তু তার পরিণতিতে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হচ্ছে। যার জন্য পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে শুধু মুসলমানদেরকেই। মক্কা-মদিনার দেশ সউদী আরব হলো মুসলমানদের ঐক্যের প্রতীক। যুবরাজ সালমানকে তা অনুধাবন করতে হবে। বাংলাদেশের মুসলমানরা আশা করে, সউদী আরব আবার আগের মতো মুসলমানদের বিভিন্ন বিপদে-আপদে পাশে থাকবে। তারা কোনো দেশে বিভেদ তৈরি করবে না। তাই মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান যে সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, তার সমাধানের জন্য সউদী আরবকেই বেশি অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করতে হবে। একমাত্র সউদী আরবই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। তাই কোনো প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সমর্থন না করে সউদী রাজপরিবারকে মুসলিম দেশগুলোর পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ইসলামি চিন্তাবিদ এ এম এম বাহাউদ্দীন আলেম-ওলামাদের সামনে ব্রাজিল, মেক্সিকো, কলম্বিয়াসহ কয়েকটি দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এসব দেশে বর্তমানে আত্মহত্যার প্রবণতা ব্যাপক হারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ওইসব দেশে মানুষের মধ্যে শান্তি নেই। তাই তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আমাদের দেশের আলেম সমাজকে এ বিষয়ে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে আমাদের দেশের তরুণ সমাজ অন্যায়-অনৈতিকতায় জড়িয়ে না পড়ে। আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনারা যদি ওয়াজ-মাহফিলে, মসজিদে, মাদরাসায় এ বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করেন; তাহলে আমাদের দেশের তরুণ সমাজ অন্যায় পথে পা বাড়াবে না। আমাদের দেশে প্রতি জুমায় মসজিদে মসজিদে কোটি কোটি মানুষ নামাজ আদায় করতে হাজির হন। মসজিদে খুৎবা আর বয়ান শোনেন ইমাম-খতিবদের। এ সময়েই মানুষকে সচেতন করে তোলার উপযুক্ত ক্ষণ; আলেমদের এটা মনে রাখতে হবে। মসজিদগুলোতে যদি সবসময় আল্লাহ-রাসূল এবং ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে বয়ান করা হয়, তাহলে তরুণ সমাজ উপকৃত হবে। দেশে থাকবে না কোনো মাদকের ছড়াছড়ি, অস্ত্রবাজি, ছিনতাই। দেশের মানুষ থাকবে শান্তিতে। আমাদের দেশ হবে এক সমৃদ্ধির দেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
দক্ষ ও সুবক্তা হিসেবে পরিচিত জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী প্রধান বক্তার বক্তব্যে বলেন, এই ডিসেম্বর মাস হলো বিজয়ের মাস। এই মাসে আমাদের দেশ পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনাতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। এই মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শাহাদাত বরণ, দুই লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, লাখ লাখ লোক আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। যার ফলে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন করে মাদরাসা শিক্ষার প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তারই যোগ্য কন্যা প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসা শিক্ষার জন্য আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে নজির সৃষ্টি করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মাদরাসা শিক্ষার প্রতি বৈষম্য থাকার কারণে একটি সময় মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের করুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে, মাদরাসার উপর বৈষম্য করা হয়েছে। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্ঠায় মাদরাসা শিক্ষকদের প্রতি, মাদরাসার প্রতি বৈষম্য কমেছে। মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের অধিকার ফিরিয়ে পেয়েছে। তিনি সমাবেশে আগত আলেমদের উদ্দেশ্য করে বলেন, পূর্বে কখনোই মাদরাসায় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ছিল না, ভবিষ্যতে কখনো থাকবেও না। এ জন্য আলেম সমাজকে দক্ষ ভ‚মিকা পালন করতে হবে। আলেমরাই পারে এ দেশে নৈতিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে। তাদের দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আরো সমৃদ্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ক্ষতি করার জন্য অনেক গোপন ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। আমাদের প্রাণের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ভবিষ্যতে কখনো কেউ ক্ষতি করতেও পারবে না। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রসংশা করে তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, একমাত্র মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই নৈতিকতার চর্চা করে, দেশে তারাই মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে কাজ করছে। তাই মাদরাসা শিক্ষার প্রতি যারা খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন তাদেরকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তেব্যে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. আব্দুস সালাম আল মাদানী বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বাংলাদেশের একমাত্র সংগঠন যে সংগঠন কখনোই মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে না; কেউ এই সংগঠনের ক্ষতি করতে পারবে না। কেন না এই সংগঠন আমাদের প্রাণের সংগঠন; এই সংগঠন তৈরি করতে দেশের প্রখ্যাত আলেমরা কাছ করছেন, তাদের প্রচেষ্ঠায় এ সংগঠন তৈরি হয়েছে। তাই অতিতে অনেকেই ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। আশা করি কেউ ক্ষতি করতে পারবেও না। তাই জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের আলেম-ওলাদের আরো বেশি করে পড়াশোনার পাশাপাশি হৃদয়কে পরিষ্কার করতে হবে। আরো যোগ্য হয়ে গড়ে ওঠার পরামর্শ প্রদান করেন তিনি। তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষকদের এমনভাবে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাতে হবে, যাতে সরকার বাধ্য হয় মাদরাসা শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া মানতে। তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। এ জন্য জমিয়াত কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতেও কাজ করে যাবে, কেউ এই সংগঠনের ক্ষতি করতে পারবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।