Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে বেশির ভাগ গরুর খামার

চৌগাছায় গো-খাদ্য সঙ্কট চরমে

| প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবুল কাশেম, চৌগাছা (যশোর) থেকে : যশোরের চৌগাছায় গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্য সহ আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলেও গরু ও গরুর মাংসের দাম কমে যাওয়ায় খামারিরা দারুণ ভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে উপজেলার বেশির ভাগ গরুর খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েকশ’ শ্রমিক-কর্মচারী। এ শিল্পের স্থায়ী কোনো নীতিমালা না থাকায় এবং সরকারি নজরদারির অভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা গরু, মহিষ স্থানীয় বাজার দখল করে রেখেছে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লোকসান দিতে দিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি গরুর খামারগুলো বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার পুড়াপাড়া গ্রামের গরু খামার মালিক আবু মুছা খান, হাকিমপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান খান, দিঘলসিংহা গ্রামের আমজাদ হোসেন, পৌর এলাকার বাকপাড়া গ্রামের মামুন মিয়া ও ইছাপুর গ্রামের কলি মাহমুদ জানান, গরুর প্রধান খাদ্য ধানের বিচালীর দাম অনেক বেশী, এ বছর ধান পাকার মুখে এসে অতি বর্ষণ ও এলোমেলো ঝড়ো হাওয়ায় বেশীর ভাগ ধান মাটিতে পড়ে নাড়া পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বিচালীর দাম আরো এক ধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের গরুর খামারী আবু তৈয়ব, মাজালী গ্রামের ইন্তাজ আলী, রাসেল হোসেন, হামিদুর রহমান জানান এ শিল্প বর্তমানে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার মূল কারণ ভারত থেকে গরু-মহিষ আসা, খাদ্য ও উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। এ বছর তাদের প্রত্যেকের গড়ে লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তারা আরো জানান, দুই বছর আগেও এক বিঘা জমির বিচালীর দাম ছিল ১ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই বিচালীর দাম ৬-৭ হাজার টাকা হয়েছে। একইভাবে খৈল, গমের ভ‚ষি, কাঁচা ঘাসের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। পৌর এলাকার কালিতলা পাড়ার গরু খামারি কুতুব উদ্দীন জানান, গো-খাদ্য তৈরির উপকরণ ভুট্টার কেজি ৩০ টাকা, গমের কেজি ২২ টাকা, কাঁচা ঘাস আটি ১০ টাকা, চাউলের পালিশ কেজি ৩৩ টাকা। বাজারে রেডিমেট তৈরী গো-খাদ্যের কেজি ৩৩ টাকা। সাইফুল ইসলাম জানান, একটি গরুর প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১শ’ ২০ টাকার খাদ্য দিলে মাসে ৩ হাজার ৬শ’ টাকা খরচ হয়। ৩/৪ মাস পালন করার পর বিক্রি করা যায়। গরু-মহিষ ও গোশতের দাম কমে যাওয়ায় গরুপ্রতি প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। ফলে লোকসানের কারণে তারা খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ উপজেলার শত শত শিক্ষিত বেকার স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় গরুর ফার্মের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক ছোট-বড় ও মাঝারি গরুর ফার্ম গড়ে ওঠে। এর মধ্যে মোটাতাজা করণের ফার্মের সংখ্যাই বেশি। দুধের ডেইরী হাতেগোনা কয়েকটি। বর্তমানে গরুর দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি গো-খাদ্য ও আনুষঙ্গিক উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৬০-৭০ ভাগ ফার্ম।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রভাষ চন্দ্র গোম্বামী জানান, স¤প্রতি গো খাদ্যসহ আনুষঙ্গিক উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও সঙ্কটের পাশাপাশি ভারত থেকে গরু-মহিষ এ দেশে আসাই স্থানীয় খামারিদের পালিত গরুর দাম কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা লোকসানের ভয়ে এ খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। তবে উপজেলা প্রাণিস¤পদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাঠপর্যায়ে খামারিদের প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয় পরার্মশ দিয়ে লোকসান ঠেকাতে সচেষ্ট রয়েছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ