Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

২৬ ব্যাংককে শোকজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুদ্রাবাজার অস্থিরতায় ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শত চেষ্টার পরেও মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে এক প্রকার ব্যর্থতার মধ্যে দুই দফায় ২৬টি ব্যাংককে শোকজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজার অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংকের হাত রয়েছে, তাদের ওপর ক্ষুদ্ধ হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল করার অভিযোগে দুই দফায় ২৬টি ব্যাংককে শোকজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, যে ২৬টি ব্যাংককে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার তারা সবাই জবাব দিয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোর জবাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জবাব সন্তোষজনক না হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী তাদের বিভিন্ন ধরনের জরিমানা গুনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি করতে ব্যাংকগুলো ডলারের যে মূল্য ঘোষণা দিচ্ছে,ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার চেয়ে দুই টাকা পর্যন্ত বেশি রাখছে। এতে করে একদিকে বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়, অন্যদিকে ডলার সংকটে অস্থির হয়ে ওঠে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রেমিটেন্স ও রফতানি আয়ে কিছু সুবিধা পাওয়া গেলেও আমদানি খাতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি হয়েছে। আর অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ সময়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র সাত শতাংশ। এতে বড় অংকের আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর অনসাইট ও অফসাইটের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অফসাইট হলো ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে তথ্য সরবরাহ করে তা সঠিক আছে কিনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বসেই তা যাচাই-বাছাই করা হয়। আর অনসাইট হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলো যে তথ্য সরবরাহ করে সে অনুযায়ী লেনদেন করে কিনা, তা ব্যাংকে গিয়ে সরেজমিনে যাচাই করা হয়। এর আগে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নরের সভাপতিত্বে উচ্চপর্যায়ে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই কারসাজির অভিযোগে এবং বাজার অস্থিতিশীল করার দায়ে অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকেই প্রথমে ১৭টি ব্যাংককে শোকজ করা হয়েছে। পরে চলতি সপ্তাহে আরও ৯টি ব্যাংককে শোকজ করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য একটি সূত্র বলছে, বাজার অস্থিতিশীল করার দায়ে ৪০টি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, বিদেশি খাতের ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, বেসরকারি খাতের এবি, এনসিসি, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা, সাউথইস্ট, মার্কেন্টাইল, ইউসিবিএল, ব্র্যাক, ইস্টার্নসহ ২৬টি ব্যাংকের কাছে কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে কয়েকটি ব্যাংক সরাসরি জড়িত রয়েছে। তদন্তে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ (২) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে একটি ব্যাংককে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২২ নভেম্বর একটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলারের দর দিয়েছে ৮১ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু করপোরেট গ্রাহকদের জিম্মি করে ওই ব্যাংকটি বাজারে বিক্রি করেছে ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সায়। আরেকটি ব্যাংক একই দিন ডলার বিক্রি করেছে সাড়ে ৮৪ টাকা করে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট দাখিল করেছে তিন টাকা কমে। আরেকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো তথ্যের চেয়ে পৌনে চার টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ