Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাওরাঞ্চলে পানি : বীজতলা করতে পারছেন না নেত্রকোনার কৃষক

নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল হিসাবে পরিচিত খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জ ও কলমাকান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওরগুলো থেকে এখনো বন্যার পানি সরে না যাওয়ায় হাওরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের সারা বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। কবে নাগাদ বোরো ফসল রোপণ করা সম্ভব হবে তাও অনিশ্চিত। সঠিক সময়ে বোরো আবাদ শুরু করতে না পারলে দেরীতে ফসল উঠবে বলে কৃষকরা মনে করছেন। ফলে গত বছরের মতো আবার আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন হাওর থেকে বানের পানি এখনো সরে না যাওয়ায় এবার দেরীতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে হবে। সময়মতো বীজতলা ও ধানের চারা লাগাতে না পারলে দেরীতে ফসল হবে। তাই ভালো ফলনের আশা করে লাভ নেই।
মল্লিকপুর গ্রামের প্রবীণ কৃষক চন্দন তালুকদার বলেন, ধনু নদীর উৎস এবং সুরমা নদীর মোহনা থেকে উত্তরাঞ্চল খানিকটা উঁচু। আবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ধনু নদী থেকে কিশোরগঞ্জের ইটনা পর্যন্ত হাওর এলাকাটি তুলনামূলক নিচু। ওদিকে ইটনা থেকে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যবর্তী মেঘনার মোহনা পর্যন্ত এলাকাটি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মেঘনার মোহনা থেকে উত্তর দিকে নদী খনন অত্যন্ত জরুরি। না হয় প্রতি বছর অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কৃষক হারুন-অর-রশিদ জানান, হাওরে তাদের প্রায় ৬০ একর জমি আছে। জমির চাষাবাদ ও পত্তন থেকে আসা আয় দিয়েই তার সংসার চলে। গতবারের আগাম বন্যায় সম্পূর্ণ ফসল বিনিষ্ট হওয়ার কারণে তার আর এখন জমি চাষাবাদ করতে আগ্রহ নেই। আরেক চাষি মহসিন মিয়া জানান, আগাম বন্যায় ফসল হারিয়ে অনেক বর্গাচাষি এবার জমি পত্তন নিতে চাইছেন না। তিনি মাত্র ৪০ হাজার টাকায় ১৬ একর জমি পত্তন দিতে পেরেছেন। বাদ বাকি জমি পতিত থাকার আশঙ্কা করছেন তিনি। এ সমস্যা কেবল খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জ উপজেলার নয়। মদন ও কলমাকান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলেরও।
কলমাকান্দার যাত্রাবাড়ী গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, গতবারও ফসল ঠিকমতো ঘরে উঠাতে পারিনি। অন্যের কাছ থেকে ধার-দেনা করে খুবই কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে। এবারো যদি ফসল খারাপ হয়, তাহলে আমাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। নেত্রকোনা কৃষক সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, বছরের পর বছর ধরে হাওরের নদীগুলো খনন না করায় সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর দু-কুল উপচে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায়। হাওরের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কারণেই পানি সরতে দেরী হচ্ছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পাল বলেছেন, চলতি বোর মৌসুমে মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলায় ৪০ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাওরের পানি একটু ধীর গতিতে নামছে। কৃষকরা অনেকটা বাধ্য হয়েই উঁচু ভ‚মিতে বীজতলা তৈরি করছেন। বীজতলা তৈরি করতে খুব সমস্যা হবে না। ব্রি-২৯ ধান রোপণের সময় পার হয়ে গেলেও ব্রি-২৮ জাতের ধানবীজ রোপণের সময় এখনো আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ বছর ব্রি-২৮ জাতের ধান বেশি করে আবাদ করা হবে। যদি আবহাওয়া অনুক‚লে থাকে, তাহলে বোরো ধান উৎপাদনে সময়ও কম লাগবে, ফলনও ভালো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ