Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লক্ষীপুরের এডিসি ও ইউএনওকে হাইকোর্টে তলব

২৪ ঘন্টায় কারামুক্ত হলেন সাবেক সিভিল সার্জন

| প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

লক্ষীপুরের সংবাদদাতা : লক্ষীপুরে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সালাহ উদ্দিন শরীফকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদন্ডন্ড দেওয়ার ঘটনায় লক্ষীপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ মুর্শিদুল ইসলাম এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলার ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। এ সংবাদ জেলায় পৌছানোর পর চিকিৎসক ও সুশীল সমাজের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে।
আগামী ১৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টে হাজির এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সালাহ উদ্দিন শরীফকে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী ও আশফাকুর রহমান। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজীম। ব্যারিস্টার আজীম বলেন, পত্র পত্রিকায় এসেছে লক্ষীপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্টে একজন প্রাক্তন সিভিল সার্জনকে সাজা দিয়েছেন। ওই রিপোর্টটা দেখার পর দুইজন আইনজীবী সংক্ষুব্ধ হয়ে, এখানে যে আইনের শাসনের ব্যত্যয় হয়েছে সে জন্য রিট দায়ের করেছেন। রিটের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ব্যক্তি আক্রোশের কারণে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমের যে অপব্যবহার, সেটা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেছেন। এবং ১৩ ডিসেম্বর এডিসি ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হয়ে তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্রও সাথে আনতে বলেছেন। ওই সাবেক ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনও ব্যক্তিগতভাবে আসবেন। এবং আদালতের সামনে ওনার বক্তব্য রাখতে পারবেন।
ব্যারিস্টার আজীম আরও বলেন, মোবাইল কোর্টের যে ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণরুপে অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত একটা আক্রোশের কারণে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম যেভাবে তারা পরিচালনা করেছেন এবং যেভাবে একজন চিকিৎসককে অপদস্থ করা হয়েছে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এতে আইনের শাসনের চরম ব্যত্যয় হয়েছে। ওনার বেলায় এটা হয়েছে তাহলে একজন সাধারণ মানুষের বেলায় কি হতে পারে?।
এদিকে ভ্রাম্যামাণ আদালতে ৩ মাসের সাজা আদেশের পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে জামিন ও কারামুক্ত হলেন সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন শরীফ। একই দিন বেলা ১১ টায় লক্ষীপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদন করলে বিচারক মীর শওকত হোসেন ৫ হাজার টাকা বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন। দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে কারাগার থেকে স্থানীয় চিকিৎসকরা তাকে নিয়ে আসেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। আদালতের আদেশ কারাগারে পৌঁছালে ডাঃ সালাউদ্দিন শরীফকে লক্ষীপুর কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ সময় বিএমএ সভাপতি ডাঃ আশফাকুর রহমান ও স্বাচিপ সভাপতি ডাঃ জাকির হোসেন সহ চিকিৎসক নেতারা তাকে জেল গেইটে অভ্যর্থনা জানান। এসময় সাবেক সিভিল সার্জন তার প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনার পূন:রাবৃত্তি না হয় এবং সিনিয়র চিকিৎসক যেন অসম্মানিত ও অপমানিত না হন এ জন্য জোর দাবী জানান। একই সঙ্গে মোবাইল কোর্টের নামে যে তৎপরতা চালানো হচ্ছে অবশ্যই এটি বন্ধ করাসহ যারা এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডা. আশফাকুর রহমান মামুন, ডা. নিজাম উদ্দিন, ডা. জাকির হোসেন, ডা. নুরুল ইসলাম, ডা. হামিদ প্রমুখ।
ভ্রাম্যমান আদালতের কারাদন্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে সদর হাসপাতালে কর্মবিরতী পালন করছে চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। তাদের দাবী, একটি অনাকাংক্ষিত বিষয়ে সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সালাউদ্দিন শরীফকে তিনমাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যামান আদালত। মামলা প্রত্যাহার ও সাজা বাতিল করা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানান জেলা বিএমএর সভাপতি ডা. আশফাকুর রহমান মামুন। এত করে চিকিৎসা নিতে আশা রোগীরা পড়েছেন চরম দূর্ভোগে। এদিকে সকাল থেকে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবস্থান নেন জেলায় কর্মরত চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলোজিস্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ