পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাকে বিশ্বে মডেল হিসেবে অবিহিত করে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, ‘ফেতনা-ফ্যাসাদের ইসলাম’ এ দেশে কখনো চলেনি, চলবে না। যারা টাকা-পয়সা পাঠিয়ে ওলি-আউলিয়ার এই বাংলাদেশে ‘অন্য ধারার ইসলাম’ কায়েম করার চেষ্টা করছেন, তাদের পতনের খবর দ্রুত পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা যে ধারায় চলছে, তাতে এটি বিশ্বব্যাপী মডেল হয়ে গেছে। এমন কোনো বিষয় নেই মাদরাসায় পড়ানো হয় না। মাদরাসার ক্লাসে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতা ও নারীদের চরিত্র গঠনের শিক্ষা দেয়া হয়। যা সচরাচর অন্য ধারার শিক্ষায় দেখা যায় না। সুশিক্ষা ছাড়া পুলিশ-বন্দুক দিয়ে মানুষকে সচেতন করা বা অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয়। ইসলামি মূল্যবোধের শিক্ষাই তরুণদের অপরাধবিমুখ করতে পারে। অপরাধ বন্ধের চেয়েও সমাজে অপরাধী যাতে না হয় সে দিকে বেশি দৃষ্টি দেয়া উচিত নয় কি? আর সেটা করছেন আলিয়া মাদরাসার শিক্ষকরা। গতকাল ময়মনসিংহ জেলা শহরের মোমেনশাহী ডিএস কামিল মাদরাসা চত্বরে ময়মনসিংহ বিভাগীয় জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশে ঈমানদার, সৎ নাগরিক গড়ার কারিগর।
মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণ, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় এই প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. মো: ইদ্রিস খান। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজী, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক এ এস এম আবদুুল খালেক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন শেরপুর জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি মাওলানা মো: নুরুল আমিন, ময়মনসিংহ জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল ওয়াহাব মাদানী, জামালপুর জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি মাওলানা অবদুুল মোতালেব, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসেন, নেত্রকোনা জেলার সহ-সভাপতি মাওলানা অবদুুল মতিন, তারাকান্দা উপজেলা শাখার সভাপতি মো: আবদুল জলিল, নান্দাইল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো: রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তাগাছার আব্বাসীয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মো: মতিউর রহমান। সম্মেলনের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী কাতলাসেন কাদেরিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল ওয়াহাব মাদানী প্রধান অতিথি ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে জেলা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ড. ইদ্রিস খান প্রধান অতিথির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। এ সময় মুহুর্মুহু করতালিতে তাকে স্বাগত জানানো হয়। প্রতিনিধি এ সম্মেলনে ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও জামালপুর জেলার জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ ও চার জেলার বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা যোগ দেন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনকে ঘিরে মাদরাসার শিক্ষকদের মাঝে সৃষ্টি হয় ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ কার্যত আলেমদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। আলোচনায় প্রায় সব বক্তাই মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, শিক্ষকদের মর্যাদা এবং মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য সাবেক মন্ত্রী মরহুম মাওলানা এম এম মান্নান (রাহ.) অবদানের কথা স্মরণ করেন। একই সঙ্গে তার সন্তান সংগঠনের সভাপতি ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বক্তৃতায় মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা স্মরণ করেন এ এম এম বাহাউদ্দীন। মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরো বেশি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের অতীতের সব ভালো কাজের সঙ্গে আমরা ছিলাম, আছি, থাকব। প্রধানমন্ত্রীকে এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন তাদের বিষয়ে তিনি যত বেশি সতর্ক থাকবেন সেটা ওনার এবং আমাদের সবার জন্য ভালো। মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এখন চলছে ডিজিটাল যুগ। ইচ্ছা করলেই বিজ্ঞানকে পাশ কাটিয়ে আমরা চলতে পারব না। তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। কিশোররা বাবা-মাকে হত্যা করছে। বন্ধু সামান্য কারণে বন্ধুকে হত্যা করছে। স্কুল-কলেজপড়–য়া ছেলেরা মাদক ব্যবহার করে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। এমনকি সঙ্গদোষে অনেক মেয়েও মাদক নিচ্ছে বলে মিডিয়ায় খবর বের হচ্ছে। মাদকের নেশা নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিচ্ছে। অথচ এই কিশোর-তরুণরাই আগামীতে দেশের হাল ধরবে। সমাজে বিশৃঙ্খলা, অন্যায়-অনৈতিকতা এমন পর্যায়ে গেছে যে তা দমনে পুলিশের পেছনে প্রচুর টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পুলিশের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন অপরাধ দমনে দিনরাত কাজ করছেন কিন্তু অপরাধ কমছেই না। সুস্থ ধারা এবং নৈতিকতার শিক্ষা ছাড়া সমাজের এই অন্যায়-অপরাধের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়। পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাজেট বাড়িয়ে বর্তমান সমাজের তরুণদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমানো কঠিন। সমাজের এই অপরাধ-অন্যায় কমাতে না পারলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সুফল মানুষ ভোগ করতে পারবে না এবং উন্নয়নের এই ধারা ধরে রাখা যাবে না। এ জন্যই মাদরাসা শিক্ষার প্রতি অধিক নজর দেয়া অত্যাবশ্যক। মাদরাসাগুলোয় যে শিক্ষা দেয়া হয়, সেটাই কেবল নতুন প্রজন্মকে মাদক এবং অপরাধবিমুখ করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে যে অর্থ ব্যয় করে, তার সামান্য কিছু ব্যয় করে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি মেনে নিলে মাদরাসার শিক্ষক-আলেমগণ রুটি-রুজির নিশ্চয়তা পাবেন। তারা ক্লাসে পড়ানোয় অধিক মনোনিবেশ করতে পারবেন। ইসলামি মূল্যবোধ ও সুশিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়লে তরুণদের মাঝে এমনিতেই অপরাধপ্রবণতা কমে যাবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) বিতর্কিত ডিজির অযাচিতভাবে তিন দফা মেয়াদ বৃদ্ধি, তার বেফাঁস-লাগামহীন কথাবার্তার কঠোর সমালোচনা করে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, ইফার ডিজি মাদরাসা শিক্ষার অপ্রয়োজনীয়তার কথা অসংখ্যবার টিভিতে আলোচনায় বলেছেন। সেই ডিজির চাকরি তিনবার এক্সটেনশন হয়েছে। এ ডিসেম্বরে তার চাকরির এক্সটেনশন শেষ। এই শেষ মাসে এসে তিনি লম্ফঝম্ফ করছেন। উনি আমাদের মাদরাসা শিক্ষার বই ঠিক করবেন দাবি করেছেন, আমরা সেটা মানব না। উনি মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক ঠিক করার কে? এ ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই ঘোষণা দিতে হবে। কারণ সরকারের সেই ক্ষমতা আছে। তা না হলে সরকারের সঙ্গে মাদরাসার শিক্ষকদের একটি অপ্রয়োজনীয় বিরোধ সৃষ্টি হবে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সচেতনভাবে দেখবেন। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, শিক্ষামন্ত্রী, মাদরাসা বোর্ড, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাবান্ধব সব জায়গায় আমরা সহযোগিতা করছি। আমার কথা হচ্ছে- অপ্রয়োজনীয় বিরোধটা ডেকে আনবেন না। আপনার সব ভালো কাজের সঙ্গে আমরা আছি। যদি কোনো কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জনের প্রয়োজন হয়, কোনো সংগঠনের দরকার হয় আমরা আপনাকে সহযোগিতা করব।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন শুধুমাত্র মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবির সংগঠন নয়; এ দেশের মূলধারার একটি সংগঠন উল্লেখ করে জমিয়তের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, দেশের মাদরাসাগুলোতে কত শিক্ষক-কর্মচারী-ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে সরকারের খাতায় সে খবর রয়েছে। প্রায় দেড় কোটি ভোট মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পতাকাতলে রয়েছে। আপনাদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই। মানুষের মন, মতামত ও সচেতন করতে পারে এরকম মানুষ জমিয়তের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছে। প্রধানমন্ত্রী গত নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে আমাদের গণভবনে ডেকে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় চ‚ড়ান্ত করার ঘোষণা দিলেন। তারপর কার্যক্রম শুরু হলো। আমাদের মাদরাসার সঙ্গে জড়িত সকল স্তরের এমপিওভুক্ত, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের ঘোষণা দেবেন এ প্রত্যাশা করছি। আগেও বলেছি, এখনো বলছি; সরকারের অতীতের সব ভালো কাজের সঙ্গে আমরা ছিলাম, আছি, থাকব। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন ৬০’র পর বার্ধক্য ধরা হয়। এটা ৬৫ করার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। এটার সঙ্গে শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা বাড়াতে আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম। প্রবীণ শিক্ষকদের জ্ঞান থেকে শিক্ষা নেয়া সেবা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বাংলাদেশের আলেমদের সংগঠন উল্লেখ করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, যারা চলে গেছেন, আছেন এবং যারা অধ্যয়নরত আছেন সকলে এ সংগঠনের মালিক এবং সদস্য। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষিত লোকের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। ৮০ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী, ২০ হাজারের ওপর প্রতিষ্ঠান, তিন লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়ে এটা বিশাল একটি সংগঠন। আর এর প্রতিষ্ঠা করেছেন পীর-মাশায়েখ-আলেমরাই। সকল খানকায়ে দরবার থেকে শুরু করে আলেম-ওলামারা সকলে এটির সঙ্গে আছেন। এর নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে। মাদরাসা শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি জোর দিয়ে বলেন, মাদরাসা একজন শিক্ষককে সবাই সম্মান করেন। কথাবার্তায় এবং কাজকর্মে আলেমদের সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। লেবাস এবং নিজের এলেমকে গুরুত্ব দিতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার আগ্রহ এবং গুরুত্ব প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এ দেশের যারা শিক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন তারা ওয়াকিবহাল।
ঢাকার ডিজিটাল এক্সপো’র উদাহরণ টেনে এই ইসলামি চিন্তাবিদ বলেন, সউদী আরব থেকে একটি রোবট এসেছে তার নাম সুফিয়া। এ রোবটকে সউদীর নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকায় আসার সময় তার ইমিগ্রেশন, কাস্টমস মানুষের যা যা করা দরকার সবকিছুই করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০ কোটি মানুষের চাকরি খেয়ে ফেলবে এসব রোবট। ইতোমধ্যে শিক্ষকবিহীন ক্লাসরুম যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাতিন আমেরিকা, চীন এমনকি ভারতেও পরীক্ষামূলক শুরু হয়েছে। মানুষের স্থান যন্ত্র নিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু মাদরাসা শিক্ষকরা সেরা। কুরআন, হাদিস, ফিকহ বিভিন্ন নলেজ দিয়ে এটি আমেরিকা, ইউরোপ তৈরি করতে পারবে না।
দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের ঐক্যের প্রতীক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, সউদী আরবে সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। আফ্রিকায় সউদী আরব এক মাসে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তাদের ভাষায় উগ্রবাদ ও সালাফি জঙ্গিদের দমন করার জন্য। এদের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছিল। আফ্রিকা মহাদেশের শাসন ব্যবস্থা পাল্টানো, ধর্মীয় চিন্তাটা পাল্টানো, রাজনীতিটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। সউদী আরবে অন্তত তাদের ভাষায় ১০ হাজার উগ্রবাদীকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। কাউকে ফাইভ স্টার জেলে রেখেছে কাউকে ফাঁসি দিয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেয় উল্লেখ করে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি বলেন, পরিবারে পরিবারে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নারীদের মধ্যে চরিত্রগত সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গার্মেন্টসের মেয়েরা দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে। অথচ তাদের অধিকাংশেরই বিয়েশাদী হয় না। বিয়ে হলেও সবাই সংসারধর্ম করতে পারেন না। স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার ছাড়া নারীদের জীবনের পূর্ণতা কি আসে? উল্টো চিত্র হলো দেশের মাদরাসাগুলোতে ছোট-বড় ক্লাস মিলে প্রায় ৩৫ লাখ ছাত্রী পড়াশোনা করছে। তারা ক্লাসে জীবন এবং নৈতিক শিক্ষা পাচ্ছেন। তাদের শতভাগের বিয়ে হচ্ছে। তারা স্বামী-সন্তান নিয়ে ঘর সংসার করছেন। আমি তো মনে করি, বিনা পয়সায় আলেমরা সমাজ-রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে আসবে না যদি প্রোপার সোলজার তৈরি না হয়। মাদরাসাগুলো তো সেটা করছে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, যে যত কথা বলেন, ষড়যন্ত্র করেন জমিয়তের ঐক্য বিনষ্ট করা যাবে না। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এ দেশের আলেম-ওলামাদের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন। অতীতে যারা বেঈমানি-বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, তারা শেষ হয়ে গেছে। মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ জন্য একটি কমিটি করেছে, এ বাজেটে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিভাবে এবতেদায়ি মাদরাসা হবে, শিক্ষকদের যোগ্যতা কী হবে এসব নিয়ে কমিটি হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক এ এস এম আবদুল খালেক বলেন, মাদরাসা শিক্ষকদের বড় অর্জন মাদরাসা অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। কারণ তারা ঐক্যবদ্ধ। নেতারা ডাকলে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দেন। ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদরাসা শিক্ষকরা হচ্ছেন ডাবল শিক্ষক। কারণ মাদরাসা শিক্ষকরা সাধারণ ও এলেম দুই লাইনেই শিক্ষা দিতে পারেন। এ কারণে তাদের ডাবল সম্মান পাওয়া উচিত। মাদরাসা শিক্ষকরা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছেন।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রাজশাহী বিভাগীয় সম্মেলন আগামীকাল
রাজশাহী ব্যুরো : আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রানের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধি সম্মেলন আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহীর সাফাওয়াং কমিউনিটি সেন্টারে (স্বপ্নিল আয়োজনে) অনুষ্ঠিত হবে। মূলতঃ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূল এবং বেসরকারী মাদরাসা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে এ সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে মূল্যবান বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন। সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখবেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল মওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজী। এতে সভাপতিত্ব করবেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের রাজশাহী আঞ্চলিক সভাপতি মওলানা আব্দুস ছাত্তার। সেক্রেটারী মওলানা মোকাদ্দাসুল ইসলাম জানান, সম্মেলন ঘিরে রাজশাহী অঞ্চলের মাদরাসা শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুস সালাম আল মাদানী। সম্মেলন সফল করার জন্য সকল নেতৃবৃন্দ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে রাজশাহী ছাড়াও বগুড়া নাটোর পাবনা সিরাজগঞ্জ, নওগা, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হতে শত শত প্রতিনিধি অংশ নেবেন। শুরুতে পাঁচশ’ প্রতিনিধি অংশ নেয়ার কথা থাকলেও তা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন।
বেসরকারী মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গত ২১ নভেম্বর থেকে সারা দেশের মাদরাসা শিক্ষকদের নিয়ে সম্মেলন শুরু হয়েছে। ছয়টি বিভাগীয় আঞ্চলিক এসব সম্মেলনে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন, মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমদ মোমতাজী সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখছেন। রংপুর বিভাগ থেকে শুরু হয়ে যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহের পর আগামী ৭ ডিসেম্বর রাজশাহী অঞ্চলের সামবেশে যোগ দিচ্ছেন। সম্মেলন স্থল সাজনো হচ্ছে। সম্মেলন সফল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতাকর্মীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।