রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে এম বেলাল উদ্দিন : চট্টগ্রামের রাউজানে এক মাসে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেল সাত কিশোরী শিক্ষার্থী। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন রেজা এসব বিয়ে বন্ধ করে দেন। বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাওয়া পাঁচ কিশোরী শিক্ষার্থী এখন স্কুলে পড়াশোনা করছে।
রাউজান উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর বুধবার বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পায় রুপা আক্তার (১৭) নামের রাউজান কলেজের একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের এক ছাত্রী। সে ডাবুয়া ইউনিয়নের হাসানখীল গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে। সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০০ ইং। রুপার সাথে একই এলাকার মাওলানা আবদুল জব্বারের ছেলে জিসানের বিয়ে ঠিক হয়। গত ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার উম্মে হাবীবা মায়া (১৫) নামের এক দশম শ্রেণির ছাত্রী নিজের বাল্যবিয়ে রুখতে স্বহস্তে লিখিত আবেদনপত্র নিয়ে ছুটে যান রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আবেদনপত্রে লিখেন তার নাম উম্মে হাবীবা মায়া, পিতা. আবু বকর, মাতা. রাশেদা আকতার। সে দলই নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তার বয়স ১৫ বছর অঅট মাস। আবেদনপত্রে ছাত্রীটি মর্মস্পর্শীভাবে উল্লেখ করেন, আমি বাল্যবিয়ের শিকার। তাই আমাকে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা করে পড়ালেখার সুযোগ দিলে আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকিব। আমি পড়ালেখা করে দেশের সেবা করতে চাই।
গত ১৭ নভেম্বর, শুক্রবার বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পায় রুবা আক্তার (১৬)। সে উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের পাঠানপাড়া এলাকার মৃত নজু মিয়ার মেয়ে। তার সাথে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার এরশাদের বিয়ে ঠিক হয়। ইউএনও শামীম হোসেন রেজা অনুষ্ঠানে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে অভিভাবদের কাছ থেকে মুচলেকা নেন। মেয়েটির আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইউএনও তার সব দায়িত্বভার গ্রহণ করে। গত ২৬ নভেম্বর রোববার বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা পায় জান্নাতুল ফেরদৌস (১৫) নামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। সে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মো. জাহিরুল আলমের মেয়ে ও গশ্চি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার সাথে পার্শ্ববর্তী পাহাড়তলী ইউনিয়নের দেওয়ানপুর এলাকার মো. ইদ্রিসের ছেলে মো. ইউনুছের বিয়ে ঠিক হয়। সংবাদ পেয়ে ইউএনও শামীম হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্যবিয়ে থেকে মেয়েটিকে রক্ষা করেন। তিনি মেয়ের অভিভাকদের কাছ থেকে ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না দেয়ার শর্তে মুচলেকা নেন। গত ২৭ নভেম্বর মঙ্গলবার বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে রক্ষা পায় জেরিন সুলতানা (১৩) নামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সে জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে ও কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। তার সাথে বিয়ে ঠিক হয় নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন এলাকার মো. রাজা মিয়ার ওমান প্রবাসী ছেলে মো. হাসানের সাথে। ২৯ নভেম্বর, বুধবার রাউজানে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পায় সামিয়া মাহামুদ পায়েল নামের নোয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর ও সামিয়া আকতার হোসনা (১৪) নামের রাউজান ছালামত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীসহ দুজন। সামিয়া মাহামুদ পায়েল উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পটিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাহামুদুল হকের মেয়ে। তার সাথে বিয়ে ঠিক হয় একই এলাকার আলহাজ আবদুল মালেখের ছেলে জালাল উদ্দিন রুমির সাথে। সামিয়া আকতার হোসনা ময়মনসিংহ জেলার গরিপুর থানার বাসিন্দা মো. মুসলিম খাঁর মেয়ে। তার সাথে বিয়ে ঠিক হয় নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার বাসিন্দা অবদুুল রাশেদের ছেলে মো. মোজাম্মেল হোসেনের। এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন রেজা বলেন, ‘রাত বা দিন নেই, বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া মাত্র আমি বা আমার যে কোনো কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছি। জনপ্রতিনিধিদের ভ‚মিকা কেমন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো কারো আইন জানার অভাব বা আইন মানার প্রবণতা নেই, আইন মানতেও তারা চায় না। তারা সবসময় জনপ্রিয়তার চিন্তা করে, ভোটের চিন্তা করে। তবে হাইকোর্টের রোলিং জেলা প্রশাসকের কঠোর বার্তার কারণে জনপ্রতিনিধিরা যদি অবহেলা করে তাদের চাকরি থাকবে না। যেসব শিক্ষার্থী বল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পাচ্ছে তারা আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাচ্ছে, তাদের সমস্ত পড়ালেখার দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। বাল্যবিয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষায়, ইভটিজিং, পারিবারিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক দায়ি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার মায়ের বাল্যবিয়ে হয়েছে, সে তো বাল্যবিয়ে করবে। যার বাবার বাল্যবিয়ে হয়েছে, সে বাল্য বিয়ে করবে। আগামী ১ জুলাই বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।