পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নন্দিত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ শূণ্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গেজেটের চিঠি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) পৌছানোর পর নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নির্বাচনের প্রস্তুতি কিংবা তারিখ ঘোষণা না করলেও দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার মধ্যে এই নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই নিচ্ছে বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই যোগ্য ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী দিয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করতে চায় উভয় দল। বরাবরের মতো এবারও মেয়র পদে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে এই দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে। আর তাই এই দুটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে চাইছেন অনেকেই। নিজেদেরকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চলছে জোর লবিং। হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সিনিয়র নেতাদের কাছে ছুঁটছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিয়েছেন তারা।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনিসুল হক। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে মাঝপথে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তবে আনিসুল হক খুব অল্প সময়ে ঢাকা উত্তর নগরীকে বদলে দেয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে অসুস্থ্যতার কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর ফলে শূন্য হয়ে যায় ওই সিটির মেয়র পদ। গতকাল (সোমবার) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্রকাশিত ওই গেজেটে বলা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি নির্বাচন) আইনের ১৫ (ঙ) ধারা অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর থকে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচন দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেক্ষেত্রে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারি এই ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের ভোট করতে হবে ঢাকা উত্তরে।
মেয়র পদ শূন্য হওয়ায় এই পদে প্রার্থী দিতে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীরা। নির্বাচনে বিজয় লাভ করতে আনিসুল হকের মতো ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় প্রার্থীই খুজছে দলটি। আনিসুল হক সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও তার ক্লিন ইমেজকেই কাজে লাগিয়েছে আওয়ামী লীগ। হতাশ করেননি তিনি। তাই এবারও ক্ষমতাসীন দলটি একই ধরণের প্রার্থী দিতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এক্ষেত্রে দলের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন মরহুম মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক ও আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক এমপি ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচ বি এম ইকবাল, ঢাকা-১১ আসনের এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ, সাবেক ফুটবলার ও বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির উপ-নির্বাচনে অতীতের মতোই পরিচ্ছন্ন, জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বেছে নেবে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই আসবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, মাত্র দুই দিন আগে মেয়র আনিসুল হক মারা গেছেন। এখনই এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। শোকটা অন্তত শেষ হোক। তিনি বলেন, অবশ্যই আওয়ামী লীগ অতীতের মতো ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবে।
অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নেবে বিএনপি। তবে দলের মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী কে হবেন তা এখনই বলতে নারাজ দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। দলের একাধিক নেতা বলেন, মাত্রই সাবেক মেয়র আনিসুল হকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে এর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করাটা অশোভনীয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তারা জানান। এ ব্যাপারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস-চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য ও বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী-বিশিষ্ট নাগরিকসহ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন খালেদা জিয়া। আলোচনার পরই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দলটি। উপ-নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণ-প্রক্রিয়ায় এবার ভিন্ন কৌশলের চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে দলটির। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেখেই বিএনপি নিজেদের প্রার্থী ঠিক করবে বলেও জানিয়েছেন সিনিয়র একজন নেতা। এক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রার্থীও থাকতে পারে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। গতবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আনিসুল হকের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। তাই এবারও বিএনপির পছন্দের প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষেই থাকছেন দলের নির্বাহী কমিটির এই সদস্য। এছাড়াও বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য জোর তদবির করছেন সাবেক এমপি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব:) কামরুল ইসলাম। তবে এবার কোনো কারণে তাবিথ আউয়াল নির্বাচন না করলে বা মনোনয়ন না পেলে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর কথা চিন্তা করতে পারে বিএনপি। আবার ২০ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় ঐক্যের চিন্তা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নামও চিন্তায় আনতে পারেন বিএনপি হাইকমান্ড। নতুন চমক হিসেবে নাগরিক সমাজের কোনো জনপ্রিয় প্রতিনিধিকেও চিন্তা করতে পারে বিএনপি হাইকমান্ড। এছাড়া আসন্ন উপ-নির্বাচনে চিত্র নায়ক অনন্ত জলিলের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি এবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করতে পারেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে। গত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীও আছেন আলোচনায়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কেবলই পদটি শূন্য হয়েছে। এখনো এই বিষয়ে দলের ভেতরে কোন আলোচনা শুরু হয়নি। সময় এখনো অনেক আছে। সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যোগ্য প্রার্থীকেই ধানের শীর্ষ প্রতীক দেয়া হবে বলে তিনি জানান। জয়ের বিষয়ে কি ভাবছেন জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, জনগণ যদি নিজের ভোট নিজে দিতে পারে তাহলে বিএনপি জিতবে।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপি সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়। সে হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিবে। তবে মেয়র আনিসুল হকের দাফনের দুইদিনের মধ্যে এসব নিয়ে আলোচনা করা অশোভনীয়। সময় যেহেতু আছে তাই দলের নেতারা আলোচনা করেই যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।