পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের হামলায় ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ নিহত হয়েছেন। হুতি বাহিনীর হামলায় গতকাল সোমবার তিনি নিহত হন। হুতি মিডিয়া তার নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। সালেহর নেতৃত্বাধীন জেনারেল পিপলস কংগ্রেসও (জিপিসি) তার নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
হুতি মিডিয়ার খবরে বলা হয়, সালেহকে বহনকারী গাড়ির উপর হুতি যোদ্ধারা রকেট চালিত গ্রেনেড ছুঁড়লে তিনি নিহত হন।
মিডল ইস্ট মনিটরের সংবাদদাতা জানান, একটি লাশের ছবি দেখানো হয়েছে যার চেহারা সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহর মত। তার মাথায় একটি বিরাট ক্ষত দেখা গেছে।
গতকাল হুতিরা রাজধানী সানায় সালেহ অনুগত বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে পূর্ণ বিজয় লাভের কথা জানায়।্ তারা বলে, রাজধানী থেকে সালেহ অনুগত যোদ্ধাদের নির্মূল করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, তিনি হুতিদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশোধ হিসেবে হুতিরা তাকে হত্যা করেছে।
সালেহ ৩৩ বছর ইয়েমেন শাসন করেন। গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। তা সত্তে¡ও তিনি ব্যাপক প্রভাবশালী ছিলেন। ২০১৫ সালে সউদী নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করলে সালেহ হুতিদের সাথে জোট বাঁধেন ও সউদী জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত হন। কিন্তু সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়ার কারণে গত বুধবার থেকে হুতিদের সাথে তার লড়াই শুরু হয়। শনিবার সালেহ সউদী জোটের সাথে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ প্রেক্ষিতে শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রবিবার থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর সমর্থনে এগিয়ে আসে সউদী নেতৃত্বাধীন জোট।
খবরে বলা হয়, জোটের জঙ্গি বিমানগুলো রাজধানী সানায় গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মত হুতি যোদ্ধাদের উপর বোমাবর্ষণ করে।
এর আগের খবরে বরা হয়, ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট হুতি যোদ্ধাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী সালেহ অনুগত বাহিনীর যোদ্ধাদের সকলের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করবেন। ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী আহমদ ওবায়েদ বিন দাঘর সোমবার বলেন, প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মনসুর হাদি খুব শিগগিরই সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হুতিদের সহায়তাকারী ও বর্তমানে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর তাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত সালেহ অনুগত বাহিনীর যোদ্ধাদের সকালে প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করবেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা রাজধানী সানায় রবিবার ও সোমবার হুতি যোদ্ধা ও সালেহ বাহিনীর মধ্যে প্রচন্ড লড়াইয়ের কথা জানান। গতকাল সকালে সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহর বাড়ির কাছে আল সিয়াসি এলাকায় ভোরবেলায় লড়াই শুরু হয়। এ সময় সউদী জোটের জঙ্গি বিমানগুলো হুতি যোদ্ধাদের অবস্থানগুলোতে কয়েকবার বোমাবর্ষণ করে। শহরবাসীরা জানান, দু’পক্ষই ভারি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারসহ গোলা বিনিময় করছে। হুতিরা সালেহ ও তার পরিবারের শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত সানার কেন্দ্রস্থলে রাজনৈতিক এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে অবস্থিত সালেহর নিজ গ্রামে তার সুরক্ষিত প্রাসাদের দিকেও হুতিরা এগিয়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধক্ষেত্র এলাকার একজন অধিবাসী বলেন, আমরা আতংকের মধ্যে বসবাস করছি। হুতিদের ট্যাংক ও কামানের গোলা আমাদের এলাকায় এসে পড়ছে। লড়াই এমন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে যে আমরা যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারি। সাহায্যদাতা গ্রুপগুলো জানায়, রাস্তায় রাস্তায় লড়াই চলছে। লোকজন ঘরের মধ্যে আটকা পড়েছে। লড়াইয়ে কয়েক ডজন লোক নিহত হয়েছে। রাজধানী সানা পরিণত হয়েছে একটি ভুতুরে শহরে।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অবিলম্বে ইয়েমেনে যুদ্ধবন্ধের আহবান জানিয়েছেন।
ণঊগঊঘ-ঝঅখঊঐ-২
সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইয়েমেনের রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ ১৯৪২ সালে রাজধানী সানা থেকে ২০ কি মি দক্ষিণ পূর্বে বায়তুল আহমার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সানহান বংশের হাশিদ গোত্রভুক্ত। ১৯৫৮ সালে পদাতিক সৈন্য হিসেবে তিনি উত্তর ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৬০ সালে উত্তর ইয়েমেন সামরিক একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে সাঁজোয়া কোরে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬২ সালে নাসের পন্থীদের সমর্থনে সংঘটিত অভ্যুত্থানে তিনি অংশ নেন যাতে বাদশাহ মুহাম্মদ আল বদর ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে তিনি ট্যাংক কোরে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে মেজর পদে উন্নীত হন। তিনি ১৯৭০-৭১-এ ইরাকে উচ্চতর কমান্ড ও স্টাফ কোর্সে স্টাফ অফিসার প্রশিক্ষণ নেন ও লেঃ কর্নেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৬-এ তিনি পূর্ণ কর্নেল হন ও যান্ত্রিক ব্রিগেড কমান্ড করেন। ১৯৭৭-এ তিনি তায়েজ-এর গভর্নর নিযুক্ত হন।
১৯৭৮ সালের ২৪ জুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ বিন হুসেইন আল-ঘাসমিকে হত্যা করা হলে কর্নেল সালেহ নবগঠিত ৪ সদস্যের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্সি পরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন এবং সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ কমান্ডারের ডেপুটি নিযুক্ত হন। ১৯৭৮ সালে পার্লামেন্ট কর্তৃক তিনি ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই সাথে তিনি চিফ অব স্টাফ ও সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ পদে অধিষ্ঠিত হন।
১৯৮০ সালে তিনি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৮২ সালের ৩০ আগস্ট তিনি জেনারেল পিপলস কংগ্রেসের (জিপিসি) মহাসচিব হন এবং ১৯৮৩ সালে প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হন।
‘গভর্নেন্স ইন দি মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা ঃ এ হ্যান্ডবুক’-এ বলা হয়েছে যে সালেহ নিজ পন্থায় ক্ষমতারোহণ ও তার পরিবারকে শীর্ষস্থানে স্থাপিত করেন। তার সাত ভাইকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। অতি সম্প্রতি তিনি পুত্র-কন্যা-জামাতা ও ভ্রাতুষ্পুত্রদের উপর নির্ভর করতে শুরু করেছিলেন। তার ক্ষমতার ভিত্তি ছিল সানহান ও হামদান সানা গোত্র।
আলী সালেহ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের দীর্ঘদিনের মিত্র ছিলেন। তিনি তার কুয়েত আগ্রাসন সমর্থন করেন।
ইয়েমেনের একত্রীকরণের পর ১৯৯৩-র সংসদীয় নির্বাচনে তার দল বিজয়ী হয়। ১৯৯৭-এর ২৪ ডিসেম্বর পার্লামেন্ট তার ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি অনুমোদন করে। ১৯৯৯ সালে দেশের প্রথম সরাসরি ভোটে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৯৬.২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালেও তিনি ৭৭.২ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে তিনি ক্ষমতা হারান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।