পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিরা-উপশিরার মতো অনেকগুলো খাল-ছরা চট্টগ্রাম নগরীর বুকজুড়ে প্রবাহিত। পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল-ছরা প্রাণপ্রবাহ। বৃষ্টিতে ও পাহাড়-টিলার ঢলে বন্দরনগরীর ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। আবার বঙ্গোপসাগরের কিনারায় অবস্থান হওয়ায় জোয়ারে তলিয়ে যায় নগরীর উপকূলবর্তী এলাকাগুলো। বৃষ্টি আর জোয়ার একত্রিত হলে নগরীর বিশাল এলাকায় পানিবদ্ধতা সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রতিবছর লাখ লাখ নগরবাসী কষ্ট আর দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এবারের বর্ষা মওসুমে এবং তার আগে-পরে দফায় দফায় নগরী তলিয়ে যায়। পানিবদ্ধতার ভয়াবহতা অতীতকে ছাড়িয়ে গেছে। মূলত মহানগরীর উপর দিয়ে প্রবাহিত খাল-ছরাগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণেই পানিবদ্ধতা জটিল সমস্যা-সঙ্কটে রূপ নিয়েছে। খাল-ছরাসমূহ নির্বিচারে দখল, ভরাট ও দূষণের কারণে সৃষ্ট বেহাল দশায় খালে পানি ধারণ ও নিষ্কাশনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
এমনকি প্রতিটি খালের শেষপ্রান্ত কর্ণফুলী নদীর মোহনা ভরাট ও বেদখল হয়ে গেছে অনেকাংশে। এতে করে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি খাল-ছরা হয়ে কর্ণফুলী নদী দিয়ে সাগরে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। যা পানিবদ্ধতাকে প্রকট করে তুলেছে। এখন শুষ্ক মওসুমে চট্টগ্রাম নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রাণপ্রবাহ খাল-ছরাগুলো বেদখলমুক্ত করে সংস্কারের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামীতে পানিবদ্ধতার সমস্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ নিয়ে উৎকণ্ঠিত চট্টগ্রামবাসী। বন্দরনগরীর অন্যতম প্রধান খাল চাক্তাই খাল দীর্ঘদিন যাবত ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ হিসেবেই পরিচিত। অতীতে এ খালের উপর দিয়ে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের মালামালবাহী শত শত নৌকা ছুটে যেত বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন গন্তব্যে। আজ খাল মৃতপ্রায়। অব্যাহত দখল দূষণে খালটি ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে। চাক্তাই খাল বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার-চাক্তাই এলাকা হয়ে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় গিয়ে মিশেছে। ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬০ থেকে ৪০ ফুট প্রস্থের এ খালটি ক্রমেই দখল, ভরাট, দূষণে সংকুচিত হয়ে গেছে। এতে করে বর্ষাকালে এমনকি বর্ষার আগে-পরেও চাক্তাই খাল উপচে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায়। ফলে দেশের প্রধান পাইকারি ও ইন্ডেন্টিং বাজার, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জ, আছদগঞ্জ লোকালয়ে পানিবদ্ধতায় কোটি কোটি টাকার মালামাল বিনষ্ট হয়। ডুবে যায় নিত্যপণ্য ভর্তি শত শত দোকানপাট, গুদাম ও আড়ত। চাক্তাই খাল পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে।
অন্যদিকে খালগ্রাসী ভূমিদস্যুরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। চাক্তাই খালের দু’পাড়ে গড়ে উঠেছে শত শত অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট ও দালান। চাক্তাই খাল পুনঃখননের নামে এ যাবত কোটি কোটি টাকা পকেটে গেছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের। দখলদারদের তালিকা হলেও উচ্ছেদের উদ্যোগ নেই। চাক্তাই খাল দখল হয়েছে মোহনা পর্যন্ত। বসতঘর, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আড়ত ও গুদাম তৈরি করে ভাড়া তুলছে দখলবাজরা। ব্যাহত হচ্ছে খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ।
চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ওমর আজম বলেন, পরিকল্পিতভাবে চাক্তাই খাল খনন ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী নুরুল হক বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালীন চাক্তাই খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে দখলদাররা আবারও আগের জায়গায় চলে এসেছে। যেখানে উচ্ছেদের সময় টিনশেডের দোকান ছিল সেখানে এখন পাকা দালন হয়েছে। চাক্তাই খালের প্রস্থ যেখানে ৬০ ফুট ছিল সেখানে সংকুচিত হয়ে ৪০ ফুটে চলে এসেছে।
মহেশ খালে অবৈধ স্থাপনা
হালিশহর-আগ্রাবাদ এলাকা হয়ে কর্ণফুলী নদী দিয়ে সাগরে মিশেছে মহেশখাল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, ২৫নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড, ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড ও ৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে অবস্থিত এ খালটি। প্রায় ৬ কিমি দীর্ঘ খালটির প্রস্থ ৩০ ফুট থেকে ৪০ ফুট। ভরাট, দূষণ-দখলে খাল সংকুচিত হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্দর নিমতলা থেকে দক্ষিণ আগ্রাবাদ হয়ে দক্ষিণ কাট্টলী পর্যন্ত মহেশখালের দুই পাড়ে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাড় দালান নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদারা। বৃষ্টির সাথে জোয়ার হলেই মহেশখাল দিয়ে পানি নামতে না পেরে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে পানিবদ্ধতা। এ পানিবদ্ধতায় আগ্রবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বড় অংশ অচল হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে খালে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বাঁক সোজাসহ বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে চসিক। মহেশখালের উপর তিনটি আরসিসি সেতু ও চার কিলোমিটার প্রতিরোধ দেওয়াল করছে সিটি কর্পোরেশন। জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৪১ কোটি টাকা প্রকল্পিত ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ত হবে। প্রকল্পের আওতায় ২৬নম্বর ওয়ার্ডের ডাইভারশন খালের মুখ থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত উভয় পাশে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ফইল্যাতলী বাজার সংলগ্ন গয়নার ছড়ার মুখ থেকে স্টেডিয়াম হয়ে রেললাইন পর্যন্ত ১ দশমিক ২৭ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা হবে ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার। ডাইভারশন খালের মুখ, ২৬নম্বর ওয়ার্ড অফিসের দক্ষিণ পাশ ও আব্বাস পাড়া সংলগ্ন খালের উপর ৬০ ফুট দীর্ঘ তিনটি সেতু নির্মিত হবে। এলাকার বাসিন্দা মোঃ নিশাত বলেন, মহেশখালের দ্রæত সংস্কার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে পানিবদ্ধতা দূর হবে না।
মির্জাখালও বেদখল
নাছিরাবাদ থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলীর সাথে যুক্ত হয়েছে খালটি। নগরীর ৮নং শুলকবহর ওয়ার্ডে অবস্থিত মির্জাখাল। শুলকবহর হয়ে সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় পাশ ঘেঁষে খালটি প্রবাহিত হয়েছে। ৪ কিলোমিটার বিস্তৃত এ খালটির প্রস্থ ২৫ থেকে ৩০ ফুট। খালের পাড়ে ছোট বড় অসংখ্য স্থাপনা। অবৈধ স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বড় দালান, বসতপ্রস্ত ও দোকানপাট। সরেজমিনে দেখা যায়, মির্জাপুল সংলগ্ন কিছু অংশ ছাড়া খালটির উভয় পাশে যেভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে তাতে খাল পাড়ের পার্শ্ববর্তী রাস্তা থেকে খাল আছে কিনা মনে হয় না। এছাড়া দখল, দূষণ ও সংস্কারের অভাবে খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে বৃষ্টিতে আশে পাশের এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। মির্জাখালের পশ্চিম দিকে মির্জাপুল সংলগ্ন খাল পাড়ের উপর একটি ৬ তলা, একটি ৪ তলা দালানসহ বেশ কয়েকটি দালান উঠেছে। এলাকার দোকানদার খোরশেদ আলম বলেন, ১৯৬৯ সাল থেকে আমি এখানে বসবাস করছি। খালটি এখন আগের অবস্থানে নেই। ময়লা আবর্জনা ও পলি মাটিতে এ খালটি ভরাট হয়ে গেছে। তিনি জানান, বৃষ্টি হলে খাল সংলগ্ন এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ খালটি দ্রæত সংস্কার করা না হলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
আবর্জনার ভাগাড় চশমা খাল
চশমা খাল শুলকবহর থেকে শুরু হয়ে ষোলশহর হয়ে নাছিরাবাদ পলিটেকনিক পর্যন্ত বিস্তৃত। চশমাখালের পাড়ে সারি সারি দালান গড়ে উঠেছে। খালটির প্রায়ই অংশ পলি মাটিতে ভরে গিয়ে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাব, দখল দূষণে চশমা খালটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। খালটি ভরাট হয়ে নালায় পরিণত হতে চলেছে। চশমা খালের বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ৫০ বছর ধরে এ খালটি দেখে আসছি। এটি এখন আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। খাল দখল করে এখানে দালান, দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে। পলিমাটিতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালটি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বর্ষাকালে খাল উপচিয়ে রাস্তাঘাট ডুবে যায়। বসতঘরে পানি উঠে। বৃষ্টির সাথে পাহাড়-টিলার ঢল নেমে রাস্তাঘাট একাকার হয়ে যায়। প্রতিবছর বর্ষাকালে শুলকবহর, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ এলাকায় মানুষ পানিবদ্ধতার আতঙ্কে ভোগে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।