Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৭শ’ কোটি টাকা

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে গ্রাহকের ব্যয় বাড়বে-

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাত বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৮ বার : নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না গ্রাহক : বর্ধিত দাম আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে : মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলেছেন বিশেষজ্ঞরা
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে বিদ্যুতের বর্ধিত দাম। ভোক্তা পর্যায়ে প্রায় দেড় কোটি গ্রাহকের বিল বাড়ছে। জনজীবনে বর্ধিত এই বিলের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন এবং মধ্যবিত্তের খরচ বাড়বে। পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়বে। বেসরকারী সংস্থা সিপিডির গবেষণায় বলা হয়েছে, বিদ্যুতের খুচার দাম ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ায় সাধারন গ্রাহকদের বার্ষিক সরাসরি খরচ বাড়বে ১৭শ’ কোটি টাকা। এই অর্থ বিতরণকারী কোম্পানি-সংস্থাগুলোর কোষাগারে যাবে জনগণের পকেট থেকে। এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি নয়, কমানো যায়। বিইআরসির শুনানিতে আমরা সেটি হিসেব কষে প্রমাণও করেছি। এরপরও মূল্য বৃদ্ধি শুধু অযৌক্তিকই নয় বরং স্বেচ্ছাচারিতাও।
ভোক্তা পর্যায়ের পাশাপাশি বিতরণকারী সংস্থা- কোম্পানি পর্যায়েও বিদ্যুতের পাইকারি দাম বেড়েছে। যদিও বিদ্যুতের খুচরা দাম বাড়ানো হলেও পাইকারি দাম বাড়েনি বলে ঘোষনা দিয়েছিল এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এবারে দেড় কোটি গ্র্াহকের বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে। ৬০ লাখ গ্রাহকের বিল পরিবর্তন হবে না এবং ৩০ লাখ গ্রাহকের বিল কমবে। এদিকে সব শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য খুচরা পর্যায়ে বিদুতের দাম বাড়ায় জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেনন অর্থনীতিবিদ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। তারা বলছেন, গত সাত বছরে বিদ্যুতের দাম আট বার বাড়লেও নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুত পাচ্ছেন না সাধারন গ্রাহকরা বরং গ্রাহরা বিভিন্ন ভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলেও সরকার বেশি দামে উৎপাদনের সুযোগ গুলো ক্রয় করছে। এরপর ঘনঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মতই বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে। নিম্নআয় এবং মধ্যবিত্তের খরচ বাড়বে। শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে দামবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। ক্ষুদ্রশিল্প, বাণিজ্যিক ও শিল্প বিদ্যুতের দাম বাড়ায় পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়বে। ফলে একদিকে বাণিজ্যিক খরচ বাড়বে অন্যদিকে বিভিন্ন ধরণের পণ্যের দামবৃদ্ধিও ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুতের যে দাম বাড়ানো হয়েছে, আমি মনে করি এটি খুবই সামান্য এবং মামুলি ব্যাপার। জনজীবনে এর প্রভাব পড়বে না। দাম বৃদ্ধির কাজটি বিইআরসি নিজস্ব বিবেচনা থেকে বাড়িয়েছে, এক্ষেত্রে আমাদের কোনো প্রভাব নেই। সমালোচক বা নিন্দুকরা এ নিয়ে সমালোচনা করলেও দামবৃদ্ধি অযৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, গ্রামে-গঞ্জে লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের বিল বাড়েনি। নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের বিল সামান্য বেড়েছে। মিনিমাম চার্জ একটা নেওয়া হত, সেটাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতায়ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নয়, কমানো যায়। বিইআরসির শুনানিতে আমরা সেটি হিসেব কষে প্রমাণও করেছি। এরপরও দামবৃদ্ধি শুধু অযৌক্তিকই নয় বরং স্বেচ্ছাচারিতাও। তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে সরকার এবং বিইআরসি বরাবরের মত বলছে- সবকিছুরই দাম বাড়ে তেমনি বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়েছে। এটি যৌক্তিক নয়। তাহলে গণশুনানি কেন? এখন প্রমাণিত হলো- গণশুনানি অকার্যকর এবং অর্থহীন। এটি লোকদেখানো প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয়। তিনি আরো বলেন, সরকার কমদক্ষ এবং বেসরকারি রেন্টাল বিদ্যুতে গ্যাস দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়াচ্ছে। অথচ পিডিবির বিদ্যুকেন্দ্রগুলো গ্যাসের অভাবে অপেক্ষাকৃত কম খরচের বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ওই গ্যাস পিডিবি পেলে কম খরচে বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়। প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে জনগণের ওপর খরচের বোঝা চাপানো হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী ইনকিলাবকে বলেন, জনগণের রক্ত চুষে খেতে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও লুটপাট করতে আমাদের এখানে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। যেখানে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা সেখানে পূর্বের তুলনায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসায় এখন বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৩৫ পয়সা। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণাকে তিনি অযৌক্তিক ও গণবিরোধী নয় ভোটারবিহীন সরকারের লুটপাট নীতির বহিঃপ্রকাশ বলেও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। তাদের এই ঘোষণাকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গোটা দেশটাকে গিলে খেতেই রক্তচোষা সরকার উন্মত্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজারসহ সমস্ত অর্থনীতিক খাতকে তিলে তিলে খেয়ে তাদের স্বাদ মিটেনি। তাই বার বার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গরীবের রক্ত পান করাটাই যেন তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। এর আগে গত মার্চে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর আগে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধুমাত্র লুটপাটের জন্যই গরীবের সর্বশেষ সম্বলটুকু আত্মসাৎ করে সরকার আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ালো।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে যে গণশুনানি হয়েছিল সেখানে আমরা এর বিরোধিতা করি। কারণ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষ চাপে পড়বে। সিপিবির এই নেতা বলেন, হঠাৎ করে খুচরা পর্যায়ে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ৩৫ পয়সা বাড়ানো হলে সাধারণ জনগণ অতিরিক্ত চাপে পড়বে।
গত নভেম্বর মাসে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুতের গড় খুচরামূল্য ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিইআরসি। বিদ্যমান গড় দাম ৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যূতের দাম ৬ টাকা ৮৫ পয়সা কার্যকর হবে আজ ১ ডিসেম্বর থেকে। গ্রাহকশ্রেণি এবং ধাপভেদে এ দাম সাড়ে ৩ টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির কাছে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি গড়ে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল জানিয়ে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, যেকোনো মূল্য সমন্বয়েরই কমবেশী প্রভাব থাকে। তাহলে যে হারে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হয়েছে তা খুব বেশি কিছু নয়। তবুও হয়ত গ্রাহক পর্যায়ে কিছুটা প্রভাব পড়বে। সেটি সহনীয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। বিইআরসি থেকে জানা গেছে, বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিইআরসির আদেশ বিশ্লেষনে করে দেখাগেছে, শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ছাড়া অন্য সব বিতরণকারী সংস্থা- কোম্পানির জন্য পাইকারি মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যমান মূল্যহার অনুযায়ী পিডিবির বিতরণ অঞ্চলগুলোতে ২৩০ কেভির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৯৮ পয়সা। নতুন মূল্যহারে এটি বেড়ে দাড়িয়েছে ৫ টাকা ৩৫ পয়সা। ১৩২ কেভি এবং ৩৩ কেভির বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম যথাক্রমে ৫ টাকা ৬ পয়সা ও ৫ টাকা ১২ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ৪০ ও ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। ডিপিডিসির ১৩২ কেভি এবং ৩৩ কেভির বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম যথাক্রমে ৫ টাকা ৬৮ পয়সা ও ৫ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ৮৭ পয়সা ও ৫ টাকা ৯২ পয়সা। ডেসকোর ১৩২ কেভি বিদ্যুতের দাম ৫ টাকা ৬৮ পয়সা থেকে ৪৮ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ১৬ পয়সা। ৩৩ কেভির দাম ৫ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা হয়েছে। ওজোপাডিকো’র ১৩২ কেভি এবং ৩৩ কেভির বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম যথাক্রমে ৪ টাকা ৫৮ পয়সা ও ৪ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ টাকা ৭৮ ও ৪ টাকা ৮৩ পয়সা। তবে পল্লী বিদ্যুতের এবং নেসকোর পাইকারি বিদ্যুতের দাম কমেছে। আরইবির ১৩২ কেভি বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ১৭ পয়সা থেকে ১০ পয়সা কমে হয়েছে ৪ টাকা ৭ পয়সা। ৩৩ কেভির দাম ৪ টাকা ২৩ পয়সা থেকে কমে ৪ টাকা ৫৭ পয়সা হয়েছে। নবগঠিত নেসকোর বিতরন এলাকা আগে পিডিবির অধীনে ছিল। এবারই প্রথম নেসকোর জন্য মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়। নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, নেসকোর ১৩২ কেভি এবং ৩৩ কেভির বিদুতের ইউনিট প্রতি দাম যথাক্রমে ৫ টাকা ৬ পয়সা ও ৫ টাকা ১২ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪ টাকা ৪৪ পয়সা ও ৪ টাকা ৪৯ পয়সা।
বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় পাইকারি মূল্য ৪ টাকা ৯০ পয়সা। সেটি নতুন মূল্যহারে ৬ পয়সা কমে হয়েছে ৪ টাকা ৮৪ পয়সা। নেসকো পিডিবির চেয়ে কম দাম পাওয়ায় এবং পল্লী বিদ্যুতের দাম কমানোয় পাইকারি বিদ্যুতের গড় দাম কমেছে। তবে অন্যান্যদের পাইকারি দাম বেড়েছে।
সাধারন গ্রাহকের ব্যয় বাড়বে ১৭শ’কোটি টাকা
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুতের খুচার দাম ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ বাড়ায় সাধারন গ্রাহকদের বার্ষিক সরাসরি খরচ বাড়বে এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই অর্থ বিতরণকারী কোম্পানি-সংস্থাগুলোর কোষাগারে যাবে জনগণের পকেট থেকে। বিদ্যুৎনির্ভর পণ্য উৎপাদন খরচবৃদ্ধি এর বাইরে রয়েছে।
বিইআরসির ঘোষনায় বলা হয়, ২০১৮ সালে পিডিবি প্রায় ৬ হাজার ১০০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে। এর মধ্যে সঞ্চালন লস দুই দশমিক ৭০ শতাংশ বা প্রায় ১৬০ কোটি ইউনিট। ফলে পাইকারি হিসাবে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে ৫হাজার ৯৪০ কোটি ইউনিট বিদ্যুত বিক্রি করবে পিডিবি। এদিকে গড় বিতরণ লস ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ৫৭০ কোটি ইউনিট। ফলে ৫ হাজার ৩৭০ ইউনিট বিদ্যুত গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি করা হবে। এ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় চার টাকা ৭৯ পয়সা। আর হুইলিং চার্জ ২৬ পয়সা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৫ টাকা ৫ পয়সা। এর সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণ লোকসান যোগ করে ব্যয় দাঁড়াবে ৫ টাকা ৬১ পয়সা। এর সঙ্গে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গড় ব্যয় এক টাকা ২৪ পয়সা যোগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের গড় বিক্রয়মূল্য ব্যয় দাঁড়াবে ৬ টাকা ৮৫ পয়সা। বর্তমানে বিদ্যুতের গড় মূল্য ৬ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে গ্রাহকদের সরাসরি ব্যয় বাড়বে বছরে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
শিল্প কারখানায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে
বিদ্যুতের দাম এবার সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে শিল্প ও বাণিজ্যখাতে। কিছুদিন পর পর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি অনিশ্চয়তা তৈরি করে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন,বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে শিল্পের উৎপাদন খরচ আরেক দফা বাড়বে। এর প্রভাব রপ্তানি শিল্প এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়েও পড়বে। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে সরকার পাঁচ বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা দিয়ে রাখলে ভালো হয়। এর বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধি বা কমার সাথে দর সমন্বয় হবে। এ রকম পরিকল্পনা থাকলে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। ফের বিদ্যুতের দর বাড়ায় উৎপাদন ব্যয় আরেক দফা বাড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে ব্যবসায়ীদের জন্য দামবৃদ্ধি বড় সমস্যা হবে না। কিন্তু সেটি এখনই নিশ্চিত না হওয়ায় শিল্পে-বাণিজ্যে খরচ বাড়বে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, খাতওয়ারি দেখা যাবে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যয় বেড়ে যাবে। চালসহ নিত্যপণ্যের চড়া দামে এমনিতেই নাভিশ্বাস ভোক্তাদের। আর এই মুহূর্তে বিদ্যুতের বাড়তি দাম তাদের ফেলবে আরো ভোগান্তিতে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বরং একে যৌক্তিক পর্যায়ে নেয়া জরুরি।



 

Show all comments
  • বাবুল ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:০৯ এএম says : 0
    আমাদের গুণধর সরকার কী এগুলো বুঝেন না
    Total Reply(0) Reply
  • আরফান ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ২:১৫ এএম says : 0
    বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বরং একে যৌক্তিক পর্যায়ে নেয়া জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০০ পিএম says : 0
    সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কি জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে না? তাদের কি কোন দায় দায়িত্ব নেই ?
    Total Reply(0) Reply
  • Murtuza Chowdhury ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০১ পিএম says : 0
    জনবান্ধব কোনো সরকার এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Nayan Kumar ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০২ পিএম says : 0
    সরকার ভর্তুকি কমানোর কথা বলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করে জনসাধারণকে এক দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Bimol Biswas ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০৭ পিএম says : 0
    এটা জনসাধারণের উপর জুলুম ছাড়া কিছু নয়। সমস্যা হচ্ছে, জনসাধারণের নীরবে তা সহ্য করা ছাড়া তার প্রতিবাদ করার কোনো উপায় নেই। যে দুয়েকটি রাজনৈতিক দল বাদ-প্রতিবাদ করে, তা সরকার থোড়াই কেয়ার করে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকারের উপর কথা বলার কেউ নেই। যে সরকার জনগণের হওয়ার কথা, সে এখন নিজের হয়ে গেছে। জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থই বড় করে দেখছে। সে মনে করছে, যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা জনগণকে মেনে নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Lokman Hossain ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০৮ পিএম says : 0
    যে দেশে সরকার জনগণের সুখ-দুঃখের কথা বিবেচনা করে না, কেবল নিজের লাভের কথা চিন্তা করে, সে দেশের জনগণের দুঃখের অন্ত থাকে না। বাংলাদেশের মানুষ এখন এই দশার মধ্যেই পড়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০৯ পিএম says : 0
    এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১২ পিএম says : 0
    গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের এখন রক্ত ঝরতে শুরু করেছে। পরিবহন ভাড়া, বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • বুলবুল আহমেদ ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:১৩ পিএম says : 0
    লোকসান ও ভর্তুকি না থাকার পরও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কার স্বার্থে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুতে

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
১০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ