রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা থেকে) : কালের বিবর্তন ও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে দামুড়হুদা থেকে হারাতে বসেছে আবহমান বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য ৫০ প্রজাতির দেশী জাতের ধান। নানা কারনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মানব দেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন প্রজাতির দেশী জাতের ধান। কয়েক যুগ আগেও চিরন্তন বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে নানারকম স্বাদ ও গন্ধের এসব দেশি জাতের ধানের চাষ হতো। স্বকীয় বৈশিষ্টসম্পন্ন এসব দেশি জাতের ধান উৎপাদনে আগ্রহ ছিল দামুড়হুদাসহ পাশ্ববর্তী এলাকার কৃষকদের। উৎপাদন খরচ কম, মানবদেহের জন্য উপকারী এবং সুস্বাদু পিঠা-পায়েশ, মুড়ি-মুড়কি, খৈ ও চিড়া তৈরিতে এসব ধানের জুড়ি মেলা ভার। দেশি জাতের ধান থেকে তৈরি নানা ধরনের এসব খাবারের স্বাদই ছিল আলাদা। ভাদ্র মাসে আউশ ধান উঠলে শুরু হতো নবান্নের উৎসব। আর অঘ্রান মাসে রোপা ও আমন ধান উঠলে শীতের শুরু থেকেই পড়ে যেত পিঠা-পায়েশের ধুম। তখনকার দিনের খেজুরের নলেন গুড় আর নতুন ধানের চালের গুড়া সহযোগে তৈরি পিঠার কথা মনে পড়লে আজও অনেকের জিবে জল এসে যায়।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও উৎকর্ষতার ফলে বর্তমানে গবেষনাললব্ধ উচ্চ ফলনশীল(উফশি-হাইব্রিড) জাতের ধানের চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সেদিকে ঝুঁকে পড়েছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংরার ঐতিহ্যবাহী প্রকৃতিবান্ধব প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশি জাতের ধান। দামুড়হুদা সহ জেলার প্রায় সব এলাকায়ই কয়েক যুগ আগেও প্রায় ৫০প্রজাতির দেশি জাতের ধানের চাষ হতো। তার মধ্যে, আউশবাকুই, আমনবাকুই, বাততুলশী, নড়ে, মধুমালা, মুড়কিমালা, কলামোচা, কইতরচোখি, ভুরুই, কাদামনি, কালবয়রা, বাচ্চু, হিজুলি, , পাখনাকেলে, শাইলকেলে, রোয়াকেলে, কার্ত্তিকশাইল, নাজিরশাইল, লতিশাইল, দিয়াশাইল, ক্যারশাইল, কোচো, মাছরাঙা, কেলেমুন্দ, মানিকমুন্দ, জটা, কেলে, মেঘি, ডহরনাগর, কটকচারা, সূর্য্যমনি, পায়জাম, কালোজিরা, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ উল্যেখযোগ্য। এছাড়া আরও অনেক জাতের দেশি ধানের আবাদ হতো যেসব ধানের নাম এখন আর অনেকেরই মনে নেই। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা এসব ধান দেখা তো দুরের কথা ধানের নামই জানে না। বয়স্ক ও অভিজ্ঞ কৃষকদের বেশ কয়েকজন জানান, দেশি জাতের এসব ধান চাষ করতে সমান জমির প্রয়োজন হতো না। উচু -নিচু-ঢালু সব ধরনের জমিতেই এসব ধানের চাষ করা যেত। নিচু জমি যেখানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এমন জমি, অথবা বন্যার পানি ঢুকে যেখানে অন্য কোন ফসলের চাষ সম্ভব নয় এমন জমিতেও এসব ধানের আবাদ করা যেত। অনেক জাতের আমন ধান ছিল যা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও পানির মধ্যে তা বাড়তে বাড়তে কয়েক দিনের মধ্যেই পানির উপরে উঠে আসতো। তাই বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও এসব ধানের আবাদে লোকসান হতো না। যেসব জমিতে স্থায়ীভাবে ৫-৬ ফুট পানি জমে থাকে সেসব জমিতে উফশী জাতের ধান ডুবে নষ্ট হয়ে যায় সেসব জমিতে দেশি জাতে আমন ধানের আবাদের কোন বিকল্প নেই। প্রকৃতিবান্ধব এসব দেশি জাতের ধান আবাদে ছিল নানারকম সুবিধা। আবাদি জমি সমান করা প্রয়োজন হতো না। এসব ধান আবাদে কোন প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক বা সেচের প্রয়োজন হতো না। তাই এসব ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় পোকামাকড় ও রোগবালাই ছিল কম। অথচ বর্তমানে রাসায়নিক সার, সেচ ও কীটনাশক ছাড়া ধান আবাদের কথা ভাবাই যায় না।
কার্তিক অগ্রহায়ন মাসে ধান উঠার পরই জো থাকতে থাকতে জমি চষে খেসারি, ছোলা, মসুরি ইত্যাদি বপন করে চৈত্র মাসে এসব ফসল তোলা হতো। বৈশাখে বৃষ্টি হলেই আর একবার চাষ দিয়ে ধানের বীজ বপন করে একটু পরিচর্যা করলে বর্য়ার পানি আসার আগেই বেশ বড় হয়ে যেত। তাই বর্ষায় পনি বাড়ার সাথে সাথে ধান গাছও বাড়তে থাকতো। জোর বৃষ্টি হলে ধান পানির নিচে তলিয়ে যেত। পানির উপর ধান মাথা উচু করে কৃষককে জানান দিত ভয় নাই আমরা বেঁচে আছি। আর তা দেখে কৃষকের মন সাহসে ভরে উঠতো। খরার সময়ও এসব ধানের তেমন কোন ক্ষতি হতো না। অপর দিকে উচু জমিতে আউশ ধানের আবাদ হতো । এসব ধান ছিল প্রকৃতি নির্ভর। বৃষ্টির পানিই এসব ধানের জন্য ছিল যথেষ্ট। তাই আলাদা করে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। বন্যা-খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার ক্ষমতা থাকায় এসব ধান আবাদে উৎপাদন খরচ ছিল খুবই সামান্য।
অভিজ্ঞ কৃষকরা জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় নানা প্রজাতির এসব দেশি ধানের জাত সংরক্ষন করা উচিত। কারন, বর্তমানে যে হারে নানাপ্রকার ভেজাল রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে জমির উর্বরা শক্তি কমে গিয়ে হয়ত একদিন এসব জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। আর তখন হয়ত খোঁজ পড়বে দেশী জাতের নানা প্রজাতির এসব ধানের।
তাই সেই দিনের কথা মাথায় রেখে আবহমান গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য এসব ধানের জাত সংরক্ষন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতনমহল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।