Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সবখানে সমানতালে আলোচনা

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নির্বাচনী হাওয়া-১

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


মিজানুর রহমান তোতা : জটিল রাজনীতি থেকে এখন শুরু হয়েছে নির্বাচনী রাজনীতি। গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিফলন হয় ভোটবাক্সে। তাই নির্বাচন ভীষণভাবে মানুষকে আলোড়িত করে তোলে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে আশা আকাঙ্খার রঙীন স্বপ্নিল ছবি। কখনো তা দৃশ্যমান হয়, আবার কখনো হয় না। তবুও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া আমজনতার উচ্ছাস উদ্দীপনা উৎসাহ জাগায়। তেমনি একটা আবহ বিরাজ করছে স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার আন্দোলন সংগ্রামের পীঠস্থান যশোর খুলনা ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। সর্বশেষ আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তত নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্যে নির্বাচনী রাজনীতি নতুন মাত্রায় জোরদার হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমের চারিদিকে সরগরম হয়ে উঠছে ভোটের নানামুখী আলোচনা। গ্রামে মাঠে ঘাটে শহর বন্দর চায়ের আড্ডায় সমানতালে চলছে একই আলোচনা। ভোট রাজনীতির খোলোয়াড়রাও নিজেদের প্রস্তত করছেন। দল বা ব্যক্তির নির্বাচনী রাজনীতির পুঁজি জনপ্রিয়তা। সেটি প্রমাণের জন্যই ভোট। নেতারা নিজেদের ভোটবাক্স কিভাবে সমৃদ্ধ করবেন সেই চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছেন। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় কিভাবে উপস্থাপন করবেন এটিও ভাবনা থেকে বাদ পড়ছে না।
নির্বাচনী রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের কথা, ভোটাররাও বেশ নড়েচড়ে বসছেন। তারা ভাবছেন বড় অট্রালিকা ও দামি গাড়ী থেকে নেমে পায়ে হেঁটে পথের ধুলায় ও জীর্ণ কুটিরের দরজায় মলিন বদনে অনেকেই যখন ভোট ভিক্ষা করতে আসবেন তখন কি বলা যাবে কি বলা উচিত-এসব নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই। কারণ কোন কোন জনপ্রতিনিধির জনকল্যাণের চেয়ে নিজের কল্যাণে বেশী যতœবান হওয়ার নজীর রয়েছে। অহংবোধের ঘন আবরণে ঢাকা অনেক রাজনৈতিক অরাজনৈতিক প্রার্থী ভোট প্রার্থনার কৌশল রপ্ত করছেন। এখন সময় বদল হয়েছে। দ্বারে দ্বারে ভোটভিক্ষা করতে হয়, দিতে নানা আশ্বাস প্রতিশ্রæতি। কর্মী যোগাড় করতে হয়। করতে হয় শো-ডাউন। অথচ অতীতের রাজনীতি ছিল রাজনৈতিক নেতাদের নীতি আদর্শের আকর্ষনে ছাত্র কৃষক শ্রমিক আপামর জনসাধারণ তাদের সান্নিধ্যলাভের আশায় ছুটতেন। এখন ‘আমরাÑওরা’ বিভাজনে অনেকস্থানে এক দল এক গোষ্ঠীর মধ্যেও সংঘাত সংঘর্ষের রাজনীতি চলে। রাজনীতিতে অর্থ হয়ে গেছে মুখ্য আর নীতি আদর্শ হয়েছে গৌণ। এর থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা থাকতে হবে সত্যিকারার্থে যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের। তাহলে রাজনীতির প্রতি যে বীতশ্রদ্ধভাব সৃষ্টি হয়েছে-তার অবসান ঘটবে। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর প্রতি আস্থা বিশ্বাস ভালোবাসা শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে।
এটি অনেকটাই পরিস্কার যে, আসছে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল নিশ্চিত নির্বাচনী মাঠে নামছে। এবারের নির্বাচনে বদলে যেতে পারে অনেক কিছুই। ভোট হবে চরম প্রতিদ্ব›িদ্বতাপুর্ণ। রাজনীতির বাতাবরণে সবক’টি জানালা খুলে গেছে। একাধিক সুত্র জানায়, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের দুর্বল করতে জাতীয় ইস্যু ছাড়াও এলাকা এবং আসনভিত্তিক কোন মারণাস্ত্র কিভাবে ব্যবহার করা যাবে তার ছক আঁটছেন ভোটের খেলোয়াড়রা। এবারের নির্বাচনের কর্মকৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে গতানুগতিক ধারার বাইরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রাজ্ঞ বোদ্ধা রাজনৈতিক নেতারা মুখ খুলছেন না। এটুকু বলছেন নতুন ধারার ইলেকশন পলিসি নির্ধারণের চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে কাছে টানার কৌশল রপ্ত করছে উভয়দল। সেইসাথে নির্দল ভোটারদের কাছে টানার পথ খুঁজে বের করা হচ্ছে। বদ্ধমূল ধারণা আটঘাট বেঁধে এমনভাবে মাঠ প্রস্তত করা হবে যাতে নির্দল ভোটাররা কংক্রিট থাকে। যাতে এবার ভোটের আগেই ভোট হওয়ার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা না হয়। তাছাড়া নির্বাচন দোরগোড়ায় আসলে তালবেতাল পরিস্থিতির মধ্যে ভাসমান ভোটারদের সামাল দেওয়া যায় না। তাই আগে থেকেই তাদের সমর্থন পুরোপুরি নিশ্চিত করার যাবতীয় পরিবেশ তৈরী করা হবে। শেষ সময়ে যাতে কোন বেগ পেতে না হয়। এই পলিসিতে কোন দলের কতটুকু ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে তা এখন বলার সময় আসেনি।
চারিদিকে নির্বাচনী আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে এবার কে কোন আসনে প্রার্থী হচ্ছেন, ভোট রাজনীতিতে কার কি অবস্থান, কোথায় কোথায় পুরাতন প্রার্থী থাকছে, কোথায় আসছে নতুন মুখ, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা কি হবে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কি পরিস্থিতি হবে, সব দলের অংশগ্রহলে নির্বাচন হবে ািক হবে না -এসব নিয়ে তুমুল আলোচনা. তর্কবিতর্ক চলছে। এতে বলা যায় রাজনীতিতে বিরাজ করছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আবহ। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অতিমাত্রায় সরব হয়ে উঠেছেন। সবাই নির্বাচনী মাঠ গুছাতে ব্যতিব্যস্ত। শহর গ্রাম পাড়া মহল্লায় চলছে জোর ভোটের আলোচনা। ভোট রাজনীতি এখন তুঙ্গে। এ অঞ্চলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জাসদ, জেএসডি ও ওয়ার্কার্স পাটিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর তিন শতাধিক প্রার্থী ভোট রাজনীতির মাঠে। তারা কেন্দ্রে ও মাঠে সমানতালে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। যোগাড় করছেন ভোট কর্মী ও সমর্থক। রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের কদরও বেড়ে গেছে। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের আলোচনায় উঠে আসছে ভোট রাজনীতি। চারিদিকে এমন কথাও জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে বর্তমানে সত্যিকারার্থে রাজনীতি আর রাজনীতি নেই। ভোট এলে জনগণের গুরুত্ব বাড়ে। রাজনীতি অর্থ হয়ে গেছে যেন প্রভাব খাটিয়ে যেনতেনভাবে নেতাদের সম্পদ বৃদ্ধি। জনগণের সমস্যা সমাধানে ও জনকল্যাণে এবং স্থানীয় ইস্যুভিত্তিক রাজনীতি অনুপস্থিত।

 



 

Show all comments
  • কাজল ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:১৯ এএম says : 0
    সুণ্ঠ নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় নিশ্চিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ