Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানবতার কল্যাণে কাজ করুন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্ত প্রার্থনায় পোপ ফ্রান্সিস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ক্যাথলিক খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন, প্রভুর আজ্ঞা অনুধ্যান করে করে তোমরা দেখবে। যা পড়ো তা যেন বিশ্বাস করো। যা বিশ্বাস করো তা শিক্ষা দাও এবং যা শিক্ষা দাও তা অনুশীলন করো। নতুন প্রজন্মের প্রতি পরামর্শ দিয়ে পোপ ফ্রান্সিস আরও বলেন, তোমাদের সেবাকর্মের মাধ্যমে বিশ্বাসী ভক্তজনের আত্মিক বলিদান পূর্ণতা লাভ করবে। তাই যথার্থভাবে বুঝে নিও, তোমরা কী করো এবং যা উদ্যাপন করো তা অনুকরণ করো। প্রভুর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের নিগূঢ়তত্বের উদ্যাপনকারী হিসেবে তোমাদের মধ্যে সমস্ত পাপময়তার মৃত্যু ঘটাতে এবং নবজীবনের পথে চলতে সচেষ্ট থেকো। বিশ্ব মানবতার কল্যাণে কাজ করার আহŸান জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্ত উপাসনা ও যাজকদের অভিষেক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানুষ এবং বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় প্রার্থনা করেন পোপ ফ্রান্সিস। বক্তব্য দেন যিশুর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে। এতে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রায় আশি হাজার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
গত ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো পোপের এটাই প্রথম সফর। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল বাংলাদেশ সফর করেন। বাংলাদেশে আসার আগে মিয়ানমার সফর করেন পোপ ফ্রান্সিস। সেখানে তিনি সবাইকে শান্তির পথে আসার আহŸান জানান।
পোপের আগমন উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। অনুষ্ঠান সাড়ে ৯টায় শুরু হলেও খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন ভোর ছয়টা থেকে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরাও এ প্রার্থনাসভায় যোগ দেন। গলায় কার্ড ঝুলিয়ে প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে আসা নানা বয়সী মানুষের চোখে মুখে ভক্তির সঙ্গে মিশে ছিল উচ্ছ¡াস। তাদের কাছে পোপ হলেন ঈশ্বরপুত্র যিশুর প্রতিনিধি।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে পোপ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পরপরই শুরু হয় উপাসনা পর্ব। ঈশ্বর বন্দনায় ‘এসো তার মন্দিরে করি স্তবগান একসাথে দলে দলে হয়ে এক প্রাণ..,’ প্রার্থনা সংগীতে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। উপাসনা সংগীতের মধ্যেই সকাল ১০টায় মঞ্চে ওঠেন পোপ ফ্রান্সিস। বিভিন্ন খ্রিষ্টীয় আচারে চলতে থাকে অনুষ্ঠান।
১৬ জন ‘ঈশ্বরসেবককে’ যাজক হিসেবে অভিষিক্ত করার আগে উপসনায় আগতদের উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন পোপ। তার স্প্যানিশ ভাষার বক্তব্য বাংলায় তর্জমা করে শোনানো হয়। অভিষেকের আচার চলার ফাঁকে ফঁকেই চলতে থাকে ধর্মসংগীত ও প্রার্থনা। অনুষ্ঠান শেষ হয় মা মেরির বন্দনা গীতে।
বক্তব্যে পোপ বলেন, প্রিয়জনেরা, আজকের এই শুভ দিনে যাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে আপনারা সবাই এসেছেন, আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। আমি জানি, আপনারা অনেকে অনেক দূর থেকে এসেছেন। অনেকে দুই দিনের যাত্রাপথ অতিক্রম করে এখানে এসেছেন। আপনাদের এ উদারতার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, এটা প্রকাশ করে মঙ্গলের জন্য আপনাদের সকলের অন্তরে অনেক ভালবাসা রয়েছে। এটা প্রকাশ করে যিশু খ্রিস্টের জন্য আপনাদের অনেক অনেক ভালবাসা রয়েছে।
খ্রিস্টীয় চার্চের এই প্রধান পুরোহিত বাংলাদেশে যিশু খ্রিস্টের অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, এভাবে সামনের পথে এগিয়ে যান, পর্বতের উপর যিশুর অস্টকল্যাণ বাণীর আলোকে, সেই প্রেরণা নিয়ে। আজকে সকলের কাছে আমার বিশেষ আহŸান, এই নব অভিষিক্ত যাজকদের জন্য প্রার্থনা করতে।
অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিসের মাধ্যমে যাজক বা ফাদার হিসেবে অভিষিক্ত হন ১৬ জন। তাদের উদ্দেশে পোপ ফ্রান্সিস বলেন, স্নেহের সন্তানেরা, তোমরা এখন যাজকপদে উন্নীত হতে যাচ্ছো। তোমাদের পক্ষ থেকে তোমরা শিক্ষাগুরু খ্রিস্টের নামে শিক্ষাদানের পুণ্য সেবাকাজ সম্পাদন করবে। যে ঐশ্যবাণী তোমরা আনন্দের সঙ্গে লাভ করেছো, তা সবাইকে প্রদান করবে। এভাবে তোমাদের জীবনের পবিত্রতা খ্রিস্টবিশ্বাসী জনগণের জন্য বয়ে আনুক সুরভিত হৃদআনন্দ।
পোপ আরও বলেন, প্রিয় সন্তানেরা, তোমাদের বিশপের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ও তার অধীন হয়ে মন্ডলীর মস্তক ও পালক খ্রিস্টের সেবাকর্ম সম্পাদন করতে করতে বিশ্বাসী জনমন্ডলীকে এক পরিবারে একত্রিত করতে সচেষ্ট থেকো। যেন তাদেরকে খ্রিস্টের মাধ্যমে পবিত্র আত্মাতে পিতা পরমেশ্বরের কাছে পরিচালনা করতে পারো। তোমাদের দৃষ্টিগোচরে রেখো উত্তম মেষপালকের আদর্শ, যিনি সেবা পেতে নন, বরং সেবা করতে, যারা হারিয়ে গেছে তাদের খুঁজে নিতে ও মুক্তি দিতে এসেছেন।
খোলা পিকআপে চড়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন পোপ ফ্রান্সিস। এখানে শুধু খ্রিস্টানরাই নন, ছিলেন মুসলিম, হিন্দু ও বুদ্ধরা। অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ছিলেন পোপের সেক্রেটারি অব দ্য স্টেট কার্ডিনাল পিয়াত্রো পারোলিন, ঢাকার আর্চবিশপ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনী কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, বিশ্বাস বিস্তার সংস্থা প্রিফেক্ট কার্ডিনাল ফার্নান্দো ফিলনি, সেক্রেটারি অব স্টেট সহ-সেক্রেটারি আর্চবিশপ জি অ্যাঞ্জেলো বিক্কিও, বাংলাদেশস্থ ভ্যাটিকান রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, ঢাকার সহকারী বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস প্রমুখ।
এরআগে তিন দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার বিকালে মিয়ানমার থেকে ঢাকা পৌঁছান পোপ ফ্রান্সিস। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পোপ। পরে ধানমন্ডিতে গিয়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে বঙ্গভবনে যান পোপ। সেখানে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের পর দুপুরে রাজধানীর ভ্যাটিকান দূতাবাসে পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপর বিকালে তিনি যান কাকরাইলের রমনা ক্যাথেড্রালে। সেখানে আর্চবিশপ হাউজে বিশপদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। শান্তি কামনায় আন্তঃধর্মীয় ও স¤প্রদায়গত ঐক্য বিষয়ক সভায় অংশ নেন।
সফরের শেষ দিন আজ শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে মাদার টেরিজা হাউজ পরিদর্শন করার কথা পোপের। এরপর তেজগাঁও হলি রোজারিও চার্চে খ্রিস্টান যাজক, ধর্মগুরু ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে চার্চের কবরস্থান পরিদর্শন করবেন। দুপুরের পর ঢাকায় নটরডেম কলেজে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করবেন। সফর শেষে বিকাল ৫টায় শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়বেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু। তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ভ্যাটিকানের ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান। পোপ ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে। ক্যাথলিক পুরোহিত হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৯ সালে। পুরো আমেরিকা অঞ্চল এবং দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৫৯ এএম says : 0
    amra jishu kristoke nobi jishabe mani ar tara tader motokore khodar putro jishabe mane ei dhoroner bebodhan buzar jonnei geaner proyojon tobei duniaa jobe shantir jayga.geanchara khodakeo buza jabe na .
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৪৫ পিএম says : 0
    পোপকে বাংলাদেশে স্বাগতম
    Total Reply(0) Reply
  • রহমান মুজিব ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৪৭ পিএম says : 0
    পোপ নির্ভয় নন। তিনি মিয়ানমারের হুমকিতে রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ করতে পারলেন না । কিন্তু বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ করলেন। তিন সকল স্থানে সকলকে সন্তষ্ট করে গেলেন।
    Total Reply(0) Reply
  • রিতা গোমস ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৪৮ পিএম says : 0
    বাংলাদেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা সুখে আছে। তার দর্শন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
    Total Reply(0) Reply
  • সৌরভ ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৪৯ পিএম says : 0
    পোপ যদি ভ্যাটিকানের রাজা হয় তবে খ্রিস্টানরা কি করে ধর্মনিরোপেক্ষ হতে পারে?
    Total Reply(0) Reply
  • নীরব ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৫১ পিএম says : 0
    মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশে অনেক বেশী আতিথেয়তা পেলেন পোপ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানবতার

১১ ডিসেম্বর, ২০২১
১৪ অক্টোবর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ