Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব

দিনাজপুরের ৪ উপজেলার আবাদি জমি ও ফলের বাগান হুমকির মুখে

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দিনাজপুর অফিস ও হিলি সংবাদদাতা : শস্যভান্ডার খ্যাত সুগন্ধি আর কাটারিভোগ ধান উৎপাদনের উর্বর ভ‚মি দিনাজপুর। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফলে ধানের ও উন্নতমানের ফল বাগানের পাশে আইন অমান্য করে ইটভাটা নির্মাণ করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এলাকার প্রভাবশালীরা ঝুঁকে পড়েছেন ইটভাটা নির্মাণে। কৃষি অধিদফতরের প্রত্যয়ন ছাড়াই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ইটভাটা। জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ার কথা থাকলেও ইটভাটা মালিকেরা প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে বানাচ্ছে ইট।
এলাকার কৃষকেরা অভিযোগ করেন, ইটভাটা মালিকেরা কৃষিজমিতে একের পর এক গড়ে তুলছেন ইটভাটা, যার কারণে দিন দিন ক্রমেই কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। ফলবাগান মালিক মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, যে বাগান থেকে প্রতি বছর হাড়িভাঙা, আম্রপালিসহ উন্নত জাতের আম-লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে, সে বাগান সংলগ্ন এলাকায় কিভাবে নির্মাণ হয় ইটভাটা?
এদিকে নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদনগর ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের শতাধিক কৃষক জানান, গ্রাম ও কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ করার সময় তারা স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে অভিযোগ দিলেও ইটাভাটা নির্মাণ বন্ধ তো দূরের কথা, অভিযোগ দেয়ার কারণেই দ্রæত নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে গত ২৫ জুলাই উপজেলার বৈধ ইটাভাটা মালিকেরা দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবরে অবৈধ ইটভাটা তদন্তের জন্য আবেদন করেন। অভিযোগে বলা হয়েছেÑ নবাবগঞ্জ উপজেলার আধুনিক প্রযুক্তির জিগগ্যাগ (হাওয়া) ইটভাটা মালিকেরা জানান, তারা পাঁচ-ছয় বছর ধরে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স এবং প্রয়োজনীয় খাজনাদি পরিশোধের জন্য ইটভাটা পরিচালনা করে আসছেন। চলতি মৌসুমে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে সরকারি বন এলকার সংলগ্ন সরকারের নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে অবস্থান গত ছাড়পত্র ছাড়া যত্রতত্র ইটভাটা নির্মাণ করছে। ইটভাটাগুলো খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো শুরু করেছে। অভিযুক্ত ভাটাগুলো হলো- আরএমএ, ডবিøউআরআর, এমএমবি, এমএসবি, এওএল, ডবিøউএসআর, এফপিডি, আরএমএ এ ছাড়াও পতি্মচান, রামভদ্রপুর ও চকদলু এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা।
নবাবগঞ্জ প্রযুক্তিভিত্তিক ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান জানান, কাঠ পোড়া ইটভাটাগুলো সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ইট প্রস্তুত করে ব্যবসা শুরু করছে। ওই সমিতির সদস্য আনোয়ার হোসেন ও আজিজুল হক জানান, আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ইট পুড়াচ্ছি। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি ও লাইসেন্স ছাড়াই ইট পুড়ছে। জিগজ্যাগ ভাটা মালিকরা জানান, গত বছরের প্রতি টন কয়লা সাত হাজার টাকায় কিনতে হয়েছিল। বর্তমানে তা ১৭ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। উচ্চমূল্যে কয়লা পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করে বিক্রি করতে গেলে দামও বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) মো. আরাফাত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চলতি বছর অবৈধভাবে নির্মিত দুটি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করেছেন। এলাকার কৃষকদের দাবি, কৃষিফসলি ধানী জমি ও ফলের বাগান ধ্বংস করে যারা ইটভাটা নির্মাণ করছে, তাদের বিষয়ে এখনি ব্যবস্থা না নিলে কৃষি ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ