Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনস্বার্থ বিরোধী

মো.তোফাজ্জল বিন আমীন | প্রকাশের সময় : ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিদ্যুৎ মানব জীবনের একটি অপরিহার্য বস্তু। বিশ্ব সভ্যতা বিকাশে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর বিকল্প কোন বস্তু নেই। দারিদ্র্য বিমোচন, নারী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ,দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে চালিকা শক্তি হিসেবে বিদ্যুতের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের শিল্প কারখানা স্থাপন, কৃষিক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার ও জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়লেও সরকার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। অথচ বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানোর কারণে বিভিন্ন মহলে প্রবলভাবে সমালোচিত হলেও দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া কিন্তু থেমে থাকেনি। বরং সব মহলের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকদের ওপর কতটুকু চাপ নতুন করে পড়বে সে বিষয়টি অনুধাবন করার গরজুটু সরকারের নেই। আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে জনজীবনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড.তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, যে হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে তা খুবই সামান্য এবং মামুলি ব্যাপার। ক্ষমতার ভাগিদার যারা তাদের কাছে হাজার কোটি টাকা ও সামান্য টাকা। কিন্তু নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের অবস্থা কী দাঁড়াবে তা বোধ হয় ক্ষমতায় থেকে অনুধাবন করা যায় না। এই দেশে এখনো অনেক গ্রাম বিদ্যুৎহীন। বিদ্যুৎতের লোডশেডিং শহরের মানুষ টের না পেলেও গ্রামের মানুষ হারে হারে টের পায়। যে সমস্ত গ্রাম ও থানা সদরে বিদ্যুৎ আছে সেখানে লোডশেডিং এর ভয়াবহতা এত বেশি যা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। অর্থাৎ দিন-রাতে বেশিরভাগ সময় তাদেরকে বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। মাঝে মধ্যে দু’একবার এসে আবার আকাশের বিদ্যুৎ চমকানোর ন্যায় চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের সার্বিক উন্নয়ন না করে উল্টো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোটা অন্যায়।
মহাজোট সরকারের ক্ষমতার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুতের আলো এখনো সব গ্রামে পৌঁছেনি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো অন্যায় এটা আমরা বলছি না। তবে দেশের সন্তানতুল্য নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের দিকটা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় আর সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় তো এক হয় না? আমাদের পাশ্ববর্তী দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দেশের শহর ও গ্রামের গরীব পরিবারের মধ্যে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অথচ আমাদের দেশের সরকার উল্টো জনগণের কাধে বিদ্যুতের আকাশ ছোয়া দাম চাপিয়ে দিচ্ছে। একটি দেশের সরকার যখন শুধুমাত্র নিজের আমিত্বকে প্রাধান্য দেয় তখন আর সেখানে আইনের সুশাসনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের দাম এবারই প্রথম বাড়ানো হয়েছে তা কিন্তু নয়! এর আগে আরো সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সরকার ২০১০ সালের মার্চে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ২.৬০ টাকা ১০ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩.৩০ টাকা এবং ৪০০ ইউনিটের উপরে ৫.৬৫ টাকা দাম বাড়িয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ১০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বাড়েনি। ২০১১ সালের ফেব্রæয়ারিতে ১০০ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত দাম বেড়েছিল ৩.৪৬ টাকা এবং ৪০০ ইউনিটের উপর ৫.৯০ টাকা।অপরদিকে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি দাম ছিল সাড়ে তিন টাকা। ২০১২ সালের ০১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুতের দাম অঘোষিতভাবে ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাবের বিপরীতে ৩৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এর আগে ২০১১ সালের ১লা ডিসেম্বরে একবার ও ২০১২ সালের ১লা ফেব্রæয়ারিতে একবার ও ১৯ মার্চ একবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে পিডিবির আয় বাড়ানোর কথা হলেও বাস্তবে তার উল্টোটা প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০০৯-২০১০ সাল থেকে বিদ্যুৎ খাতকে উন্নয়নের জন্য যে পরিকল্পনা করেছিল তা যদি সত্যিকার অর্থে কার্যকরী হতো তাহলে ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য ও ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমে আসার কথা ছিল। কিন্ত তা হয়নি। সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর গাল ভরা বুলি আওড়ালেও কি শহর কি গ্রাম সবর্ত্র লোডশেডিং এর যন্ত্রনায় নাকাল মানুষ।
বন্যার রেশ কাটতে না কাটতে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা থাকলেও এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় চাল ক্রয় করতে হচ্ছে নি¤œবিত্ত পরিবারের। দেশের মানুষ যখন চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বিদ্যুৎতের দাম বাড়ানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা সবার আগে দরকার।এই মুহুতে যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় ও বাড়ি ভাড়া অনেক বেড়ে যাবে। বিদ্যুতের দাম যদি বাড়ে ৩০ টাকা বাড়িভাড়া বাড়বে ৩০০ টাকা। সরকার কি করে বাড়তি খরচের বোঝা নাগরিকদের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে উন্নয়নের ফানুস উড়াই তা বোধগম্য নয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ওপর গণশুনানির আয়োজন করে। সেখানে ভোক্তা প্রতিনিধিরা বলেন,বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানি নয় বরং কীভাবে বিদ্যুতের দাম কমানো যায় সে বিষয়ে গণশুনানি হওয়া দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাম না বাড়িয়ে বরং কমানো প্রয়োজন বলে মনে করছে কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বিইআরসি আইন ২০০৩ অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বিইআরসি। এর আগে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ২০১৫ সালে ১ সেপ্টেম্বর। ২০১০ সালের ১লা মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার ও খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশের মানুষ বন্যা, রোহিঙ্গা ইস্যু, হাওরে বিপর্যয় এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেখানে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তা হবে জনস্বার্থপরিপন্থী এটা সংশ্লিষ্টদের অনুধাবন করা প্রয়োজন। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে দেশের শিল্পকারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। মিলকারখানা বন্ধ হয়ে লাখ লাখ চাকরিজীবী বেকারত্বের অভিশাপে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। এই বিষয়টি সরকারের অনুধাবন করা প্রয়োজন। জালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ার ফলে যেখানে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হ্রাস পেয়েছে সেখানে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সম্পর্কে আয়োজিত গণশুনানীতে জালানি বিশেষজ্ঞরাও এ মুহৃর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে,অপচয়,অব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভুল নীতির কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশের নাগরিকরা কিন্তু বিন্দুমাত্র সুবিধা ভোগ করতে পারেনি। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখেনি। এভাবে যদি দিনের পর দিন নাগরিকদের স্বার্থ বিবেচনা না করে বিশেষ শ্রেণীর প্ররোচনায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তাহলে নাগরিকদের মনে দ্রোহের সৃষ্টি হতে পারে এই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখা প্রয়োজন। আমরা আশা করব সরকার দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে বিদ্যুতের সর্বশেষ দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে জনগণ ও শিল্প উদ্যোক্তাদের বাড়তি ভোগান্তি দূর করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যু

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->