বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পূর্ব প্রকাশের পর -
খুলনা শিপইয়ার্ডের চালিকা শত্তিু নামে পরিচিত ক্যারেজ, যার মাধ্যমে জাহাজসমূহ পানি হতে ইয়ার্ডে উঠানো-নামানো হয়, তার অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। যা ১৯৫৭ সালে নির্মাণের পর হতে আর মেরামত করা হয়নি। এ ক্যারেজটি প্রযুত্তিুগত দিক থেকে খুবই উন্নতমানের। এই ক্যারেজের মাধ্যমে ৭ শ’ টন পর্যন্ত জাহাজকে এতো নিরাপদভাবে উঠানো নামানো যায় তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না। ঠিক যেমন মা তার শিশুকে আপন কোল থেকে উঠায়-নামায়। জাহাজের গায়ে একটি আচরও লাগে না। সারা বিশে¡ মোট ৩টি এ ধরনের ক্যারেজ পশ্চিম জার্মানি তাদের প্রযুত্তিুতে স্থাপন করেছিল। ১টি জার্মানে, ১টি পাকিস্তানে ও তৃতীয়টি খুলনা শিপইয়ার্ডে। জানামতে এখন শুধু খুলনা শিপইয়ার্ডের ক্যারেজটিই সচল আছে। অন্য দুটি ক্যারেজ ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রায় ভেঙ্গে পড়া এ ক্যারেজটি খুবই নিখুতভাবে মেরামত করেছিল নৌ বাহিনী। ফলে মেরামত ও মেরামত পরবর্তী জাহাজসমুহ নিয়মিত উঠা নামা শুরু করে। নুতন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। খুলনা শিপইয়ার্ড ভরে যায় জাহাজে। মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। দরিদ্র শ্রমিকদের মুখে ফুটে উঠে হাসি। ফিরে আসে প্রতিদিনের ব্যস্ততা। নিয়মিত বেতন ভাতাদি ও উৎপাদন বোনাস পেতে শুরু করে পুরোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা। আবার উৎসব মুখর হয়ে উঠে শিপইয়ার্ডের পরিবেশ। কঠিন নিয়মানুবর্তিতায় হুইসেলের সুর বাজার আগেই সকলে উপস্থিত হয় কর্মক্ষেত্রে। সাথে সাথে বাড়ে উৎপাদন, তার সাথে বাড়ে লাভের পরিমাণ, আর তারই একটা অংশ যায় সবার ঘরে বোনাস হিসেবে। এমনি করে পাল্টে যায় পুরো প্রেক্ষাপট। স্বপ্ন দেখায় এক নতুন সম্ভাবনার। নৌ বাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ডের অর্থের চাকা সচল হয়। অতীতের প্রায় ৯০ কোটি টাকা দেনা-পাওনার বোঝা মাথায় নিয়ে রুগ্ন শিল্প খুলনা শিপইয়ার্ড পরিনত হয় অর্থনৈতিক নির্ভর লাভজনক প্রতিষ্ঠানে। গুনগত মানস¤পন্ন সেবা প্রদান করে সরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানসহ বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সম‚হকে। সরকারী কোষাগারে ৩৪ কোটির বেশি টাকা জমা দেয় বিভিন্ন কর হিসাবে। নির্ধারিত সময়ে পৌরকর, পানি ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে সরকারী ্্এ প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটির কোন দেনা নেই, বরং সরকারী ও বেসরকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের নিকট আছে পাওনা। পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ১টি প্রাইমারী স্কুল, একটি মাধ্যমিক স্কুল ও ১টি মাদ্রাসা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। ¯¦ল্প ও বিনা বেতনে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার আয়োজন করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে দেয়া হচ্ছে বিনামুল্যে স্কুলের পোষাকও। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো লোকের এবং তাদের পরিবারবর্গের জন্য রচিত হয়েছে এক সুন্দর ভবিষ্যতের।
প্রায় দেড় দশকের লোকসানী ও রুগ্ন শিল্প খুলনা শিপইয়ার্ড নৌ বাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনায় গত এক দশকে নীট মুনাফা করেছে দুই শতাধিক কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি লাভের ধারা অব্যাহত রেখে প্রতিষ্ঠিত করেছে এক সফল দৃষ্টান্ত। নতুন পথ দেখাচ্ছে রুগ্ন ও ভগ্ন শিল্প কল-কারখানাগুলোকে। অতীতে বন্ধ হয়ে যাওয়া কিংবা বর্তমানে রুগ্ন হিসাবে বিবেচিত কল-কারখানাগুলো চালু করার জীবনী শক্তি প্রদান করে নৌ বাহিনীর পরিচালনায় খুলনা শিপইয়ার্ড। আশার আলো ছড়ায় বহু কর্ম সংস্থানের। ¯¦প্ন দেখায় দেশকে শিল্পোনায়নের ধারায় ফিরে যাবার। দেশকে স্বনির্ভর করার এ যেন এক চেতনা। আমরা যে করতে পারি, আমরা যে ঘুরে দাঁড়াতে পারি, আমরা যে সাফল্য আনতে পারি এ যেন তারই এক বাস্তবতা।
নৌ বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ড এখন স¤প‚র্ণ সুস্থ সবল একটি শিল্প। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত যন্ত্রপাতিই অতি পুরাতন। তাছাড়া, প্রযুত্তিগত দিক থেকেও খুলনা শিপইয়ার্ড অনেক পিছিয়ে আছে। তাই নৌ বাহিনী কর্তৃপক্ষ এখন দৃষ্টি দিয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডের আধুনিকায়নে। ইতিমধ্যে আধুনিকায়নের অনেক কাজ স¤পন্ন হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে আরো করা হচ্ছে, যার তালিকা নিম্নরুপ ঃ সিএনসি কাটিং মেশিন ত্রুয় ও স্থাপন, অটো শর্ট বøাষ্ট ও পেইন্টিং মেশিন ক্রয়’ অত্যাধুনিক প্রেস বেন্ডিং মেশিন ক্রয়, সর্বাধুনিক ৩০ টন ক্ষমতাস¤পন্ন মোবাইল ক্রেন ক্রয়, সব আবহাওয়ায় জাহাজ নির্মানের জন্য সেড নির্মাণ, শিপ ডিজাইন সফটওয়্যার ক্রয় ও প্রশিক্ষণ, ষ্টোরেজ ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট উন্নতকরণ, বিভিন্ন ধরনের ওয়েল্ডিংয়ের জন্য উন্নততর প্রশিক্ষণ, ক্রেতাদের জন্য উন্নতমানের আবাসন ইত্যাদি। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।