Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনা শিপইয়ার্ডের সম্ভাবনা ও সাফল্যগাথা

নৌ বাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনা-২

| প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পূর্ব প্রকাশের পর -
স্বাধীনতা পরবর্তীতে ‘বাংলাদেশ ষ্টীল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ খুলনা শিপইয়ার্ডের পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করে। প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থ বছরে দেখা দেয় কিছুটা লোকসান। তবে সেই লোকসান ছিল স্বাধীনতাত্তোর যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশের জন্যে খুবই স্বাভাবিক। অতি অল্প সময়ের মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড বাংলাদেশী ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায়। ফলশ্রæতিতে পরবর্তী ১৯৭৩-৭৪ অর্থ বছরেই প্রতিষ্ঠানটি লাভ করতে শুরু করে। শুরু হয় নূতন করে কর্মোদ্দীপনা ও কর্মচাঞ্চল্য। শিল্প নগরী খুলনায় আশার আলো প্রস্ফুটিত হয়। নূতন দেশের ¯¦াধীন নাগরিকরা ¯¦প্ন দেখে শিল্পোন্নত বাংলাদেশের। ¯¦াধীনতা প‚র্ববর্তীতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের কল কারখানার চাকা তখনও সচল। বাংলার আকাশে তখনও রত্তিæম স‚র্য। মানুষ তখনও দেশের জন্য নিজের ¯¦ার্থ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। তখনও মানুষ কর্মকে মনে করতো জীবন ধর্মের একটা বিরাট অংশ। আর সেই উদ্দীপনায় উজ্জীবিত হয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডের সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদল লাভের ধারা অব্যাহত রাখে ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছর পর্যন্ত।
কিন্তু হঠাৎ করে উজ্জল আকাশে দেখা দিল কালো মেঘের ছায়া। দেশের অন্যান্য কল-কারখানার মতো খুলনা শিপইয়ার্ডও ১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছর হতে লোকসানের কবলে পড়ে। পর্যায়ক্রমে দেখা দিল উচ্চ মহলের অদ‚রদর্শীতা ও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাব, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও ইউনিয়নের বেপড়োয়া কর্মকান্ড। দিনে দিনে বাড়লো লোকসানের পরিমান এবং সমতালে ঋণের বোঝা। ১৯৯০ সালে খুলনা শিপইয়ার্ডকে রুগ্ন শিল্প ঘোষনা করা হলো। ¯¦প্ন পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদিতে দেখা দিল অনিয়ম এবং এক পর্যায়ে তা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। উপায়ন্তর না দেখে তদানিন্তন সরকার খুলনা শিপইয়ার্ডকে ব্যত্তিæ মালিকানায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
কিন্তু কয়েক দফা চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারলনা। ফলে ক্রমান্বয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনায় আরো অবনতি দেখা দেয় এবং নতুন কাজ আসা বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন হলো স্থবির, যে সমস্ত কাজ হাতে ছিল তা সরবরাহে দেখা দিল অনিশ্চয়তা। সরবরাহ বিল¤ে¦ ঋণের বোঝা বাড়ল আরো বহুন্ডনে। এমতাবস্থায় তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ ও সুচিন্তিত নির্দেশনায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হল। শিল্প মন্ত্রণালয় হতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর হলো খুলনা শিপইয়ার্ড। নৌ বাহিনী প্রধানকে চেয়ারম্যান করে একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হল। নৌ বাহিনীর উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হল খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে। সাথে অল্প কয়েকজন মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হল অন্যান্য গুরুত্বপ‚র্ণ পদে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের ভাগ্যের চাকা এলো এবার নৌ বাহিনীর হাতে। শুরু হলো নৌ বাহিনীর কর্মতৎপরতা। নৌ বাহিনীর দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা, কর্তব্য পরায়নতা, সততা, দেশপ্রেম ও সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সৃষ্টি হল এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অতি অল্প সময়ের মধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ডের ভাগ্যের চাকা সচল হল। নৌ বাহিনী দায়িত্বভার গ্রহণের প্রথম বছরেই দেখা দিল মুনাফা। যেখানে প‚র্ববর্তী ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে মোট লোকসান ছিল ৭.২২ কোটি টাকা, সেখানে ১৯৯৯-২০০০ অর্থ সালে আসল লাভ। কি করে সম্ভব হলো দেড় দশকের ঐ অসম্ভব। ১৯৮৪ হতে ১৯৯৯ পর্যন্ত লাগাতার লোকশান। লোকশানে লোকশানে পাহাড় সমতুল্য ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কি করে সম্ভব হলো আলোর মুখ দেখা ? এ কোন কল্প কাহিনী নয়-নয় আলাদীনের চেরাগ, তাহলে কি করে বদলে গেল খুলনা শিপইয়ার্ডের প্রেক্ষাপট ? (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ