Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এত সেনা নিহত হয়নি

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রায় ঘোষণা হবে আজ
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়নি। এটা ছিল নির্বিচারে হত্যা (মাস কিলিং)। ওইদিন দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যা করা হয়। একাত্তর যে বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, সেই বাহিনীর এই বিদ্রোহ কলঙ্কজনক। আট বছর আগে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের কারণ হিসেবে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উঠে এসেছে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে এসব মন্তব্য উঠে আসে।
গতকাল রোববার হাইকোর্টের রায় পড়া প্রথম দিনের মতো শেষ হয়েছে। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে মামলাটির রায় পড়া শুরু হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। আজ (সোমবার) আদেশের অংশসহ মূল রায় ঘোষনা করা হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণে ভিন্ন মত থাকলেও আদেশের অংশের বিষয়ে তিন বিচারপতিই একমত হয়েছেন। বিচারকরা রায় পড়া শুরু করলেও সাজা ঘোষণা করেননি। কেবল পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন আমিনুল ইসলাম; রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী ও আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে বিচারপতি মো. শওকত হোসেন রায় ঘোষনা শুরু করেন। তার অল্প কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়ার পরই বেঞ্চের অপর সদস্য বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তার পর্যবেক্ষণ দেয়া শুরু করেন। বিকেল পর্যন্ত তিনি পর্যবেক্ষণ দেন। আজ সকালে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার তার পর্যবেক্ষণ ঘোষনা করবেন। এরপরই মূল রায় (আদেশের অংশ) দেয়া শুরু হবে। আজ বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে আদেশের অংশ ঘোষনা শুরু হতে পারে বলে আদালত জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আজ (সোমবার) চ‚ড়ান্ত রায় ঘোষনা করা হবে বলে আশা করি। তিনি বলেন, রায়ে কতজনের মৃত্যুদন্ড, কতজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে, কার সাজা বহাল হবে, কাকে খালাস দেয়া হবে-সেবিষয়ে তিন বিচারপতিই একমত হয়েছেন।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেন তার পর্যবেক্ষণে বলেন, পিলখানায় হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশে একটা ভয়াবহ ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। ওইদিন ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। এমনকি বিডিআর মহাপরিচালকের স্ত্রীকেও হত্যা করা হয় নৃসংশভাবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও এত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়নি। এটা ছিল নির্বিচারে হত্যা (মাস কিলিং)। ওইদিন দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিচার বিভাগের জন্য এটা একটি ঐতিহাসিক মামলা। এ মামলার বিচারকালে বেশ কিছু আইনগত প্রশ্ন ওঠে। আপিল বিভাগে প্রেসিডেন্ট রেফারেন্স পাঠান। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের পর বিচার শুরু হয়। তিনি বলেন, এ মামলাটি আমাদের আদালতে আসার পর ৩শ ৭০ কার্যদিবস শুনানি গ্রহণ করেছি। শুধুই মামলার ৮শ ৫০ জন আসামি এ রায় শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন না, দেশের অনেকেই রায় জানতে চান। কেউ কেউ নির্ঘুম রাত কাটাবে। তাই আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। এটা অনেক বড় রায়। আমরা একটা ভাল রায় দেয়ার চেষ্টা করছি। তাই একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের পর্যবেক্ষণ আলাদা আলাদা থাকতে পারে। তবে গন্তব্য এক। রায়ের আদেশের অংশের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।
১০ হাজার পৃষ্ঠার রায়ে পর্যবেক্ষণ এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি থাকছে বলে জানিয়েছেন বিচারক। রায় পুরো পড়া হবে না জানিয়ে সামারিলি জাজমেন্ট’ (সংক্ষিপ্ত রায়) দেয়ার কথা জানান তিনি। বিচারক বলেন, সেখানে রায়ের ফাউন্ডেশন অংশে কে কোন কারণে কী সাজা পেয়েছেন তা আমরা উল্লেখ করব। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একাত্তর যে বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, সেই বাহিনীর এই বিদ্রোহ কলঙ্কজনক।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মামলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় সংগত কারণেই আইন বিজ্ঞান, অপরাধ বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন, বিভিন্ন দেশে অপরাধের সাজা ও আইনের শাসন সম্পর্কে সংবিধানের নির্দেশনা বিবেচনার দাবি রাখে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ওই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এই হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। এ মামলায় আসামি ছিলেন ৮৪৬ জন। সাজা হয় ৫৬৮ জনের। তাঁদের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড, ১৬০ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়েছিল। খালাস পেয়েছিলেন ২৭৮ জন। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দন্ডিত ব্যক্তিরাও জেল আপিল ও আপিল করেন। আর ৬৯ জনকে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। এসবের ওপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ৩৭০তম দিনে গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন শুনানি শেষে আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। এরপর হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।



 

Show all comments
  • শিপন ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ২:১৪ এএম says : 0
    আমরা এর সুষ্ঠ বিচার প্রত্যাশা করি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ