Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঘের মুখ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাঘের মুখেই ঠেলে দিচ্ছে সরকার -মির্জা ফখরুল

সমঝোতা চুক্তিতে মিয়ানমারের কাছে স্বার্থ বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোন আত্মসম্মানবোধ নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই সরকার মিয়ানমারের কাছে নিজের স্বার্থ বিক্রি করে দিয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার যা যা বলেছে আপনারা তাই তাই মেনে নিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত দেওয়ার কথা বলছেন, ভাল। কিন্তু তাদেরকে কোথায় কার কাছে নিচ্ছেন। বাঘের কাছ থেকে তারা প্রাণভয়ে এসেছে সেই বাঘের মুখে আপনি তাদেরকে দিয়ে দিচ্ছেন। আর আপনাকে আপনার দলের লোকেরা মাদার অব হিউমেনিটি বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। এই ধোঁকাবাজী রাজনীতি চলছে। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত আলোচনা সভা ও চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এতো বড় কুটনৈতিক অর্জন নাকী আর কখনো হয়নি। একে (সমঝোতা চুক্তি) আপনি বলছেন, সবচেয়ে বড় কুটনৈতিক অর্জন করেছেন। এই সমঝোতায় কুটনৈতিক অর্জনটা কী? মিয়ানমারের সাথে চুক্তি হয়েছে একটা। সেই সমঝোতা চুক্তিতে আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন, মিয়ানমার যে দাবি করছে যে, ট্যারোরিস্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে তাদেরকে তাঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ট্যারোরিস্ট অ্যাটাক হয়েছে বলেই তাদেরকে গণহত্যা করা হয়েছে। একবারের জন্য আপনি চুক্তিতে বলেননি গণহত্যা হয়েছে, একবারের জন্য আপনি চুক্তিতে বলেননি যে তাদের এথনিক ক্লিনিং হচ্ছে, তাদেরকে জাতিগতভাবে নিধন করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কী এমন কম্পালশন হলো যে, আপনি আপনার বাংলাদেশের স্বার্থটাকে বুঝে না নিয়ে মিয়ানমারের স্বার্থের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিলেন। চাপটা কোথায় হলো? আসল ঘটনাটা কোথায়? জাতির সামনে বলা উচিৎ। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে, লজ্জ্বার সঙ্গে আমাদের বলতে হয় এই সরকারের কোনো রকমের আত্ম সন্মানবোধ পর্যন্ত নেই। মিয়ানমারের সাথে সমঝোতা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, গতকালই জাতিসংঘের ই্উএনএইচসিআর এর প্রধান বলেছেন যে, এই চুক্তি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এরা (রোহিঙ্গারা) কোথায় যাবে, কোথায় গিয়ে বাস করবে। তাদের ঘর নেই, বাড়ি নেই, সব পুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে, তাদের খাওয়ার কোনো সংস্থান নেই, বাঁচার কোনো সংস্থান নেই।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। এই সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন বিনাভোটে। ২০১৪ সালের যে নির্বাচনের নাটক হয়েছিলো সেখানে ১৫৪টা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। সরকার তো সেইদিন করেছেন। ভোটে ৫ শতাংশ জনগনও ভোট দিতে যায়নি। তাহলে সরকারটা জনগনের নয়, আওয়ামী লীগের। তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট কথা, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এটাকে একটা জনগণের নিরপেক্ষ সরকার তৈরি করতে হবে। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ প্রকৃত প্রতিনিধিদের বেঁছে নিয়ে একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠন করবে। সেটা সকলে কাছে গ্রহনযোগ্য হবে, সবার অংশগ্রহনে হবে।
সংবিধানের দোহাই’ দিয়ে কোনো লাভ হবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে বলতে চাই, এই ‘বো বো’ করে লাভ হবে না। সময় আপনাদের শেষ, এখন পরকালের চিন্তা করুন। আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি দেশনেত্রী বলেছেন, আমরা এদেশে শান্তির রাজনীতি চাই, হিংসা নয়, প্রতিহিংসা নয়। সেই দিকে আসুন, আলাপ-আলোচনা করুন, সমঝোতা করুন। একটা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের দিকে যান। এলোমেলো করে আর ঘুরে লাভ হবে না। এটা বৃথা।
সরকার সাংবিধানিক সংকট তৈরি করেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের পরও প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ না করায় সাংবিধানিক সংকট তৈরি করছেন। সরকার প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বের করে দিলেন। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অযৌক্তিকভাবে, অন্যায়ভাবে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করেছেন। এখন প্রধান বিচার দেশে নেই। যাকে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন তিনি কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হচ্ছে, কোনো কারণে যদি প্রধান বিচারপতি যদি দায়িত্ব করতে না পারেন অথবা পদত্যাগ করেন তাহলে সাথে সাথে প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করতে হবে। সেটা আপনারা করেননি। একইভাবে ব্যাংকগুলো ফোকলা করে ফেলেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সরকার অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি করেছেন। দেশের অর্থনীতি আজকে তাসের ঘরের মতো, একটা ফলস ফাউন্ডেশনের ওপর দাঁড় করিয়েছে মিথ্যা কথা বলে। বলে এখানে (বাংলাদেশে) সাংঘাতিক রকম উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়নের রোল মডেল। রোল মডেলের অবস্থা এমন যে প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখবেন ব্যাংকগুলো কাহিল হয়ে পড়েছে। যেকোনো দিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা ফেল করবে, কলাপস করবে। ব্যাংকগুলো ফোকলা করে ফেলা হয়েছে। আর অন্যদিকে উন্নয়নের নামে ‘মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুট’ চলছে।
সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবু‘র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, গোলাম সারোয়ার, ইয়াসীন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, মহানগর দক্ষিণের এস এম জিলানী, রফিক হাওলাদার, উত্তরের ফখরুল ইসলাম রবিন, রেজাউল হোসেন রিয়াজ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ