Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনা শিপইয়ার্ডের সম্ভাবনা ও সাফল্যগাঁথা

নৌ বাহিনীর দক্ষ ব্যবস্থাপনা-১

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কমোডর ইনিছুর রহমান মোল্লা (এল), পিএসসি, বিএন
‘শিল্প বিপ্লব’ মূলত : শুরু হয় আঠার শতাব্দিতে। সে সময় কৃষি, শিল্প উৎপাদন, খনিজ পদার্থ আহরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদিতে আমুল উন্নতি সাধিত হয়। ঐ বিপ্লব প্রথম শুরু হয় গ্রেট বৃটেনে। পরে তা ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এরই ধারাবাহিকতায় বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে আমাদের এ অঞ্চলে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের কারিগরী সহায়তায় গড়ে ওঠে ছোট বড় অনেক কল-কারখানা। এসব কল-কারখানা এ এলাকায় শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। স্থাপন করেছিল জনগনের মধ্যে কর্মচঞ্চলতা ও উদ্দীপনা। তখনকার সময়ে স্থাপিত প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানই ছিল লাভজনক। ফলে আমাদের লোকবলও ঐ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দক্ষ হয়ে ওঠে। আমাদের কল-কারখানার উৎপাদন দ্রব্যাদিও বর্হিবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল। সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হওয়ার।
আমাদের দেশ স্বাধীন হল। পরাধীনতার গ্লানী হতে মুক্তি পেলাম। আমরা আমাদের মতো করে চিন্তা করার সুযোগ পেলাম। শুরু হলো নুতন করে পথ চলা। কিন্তু পথ চলতে গিয়ে আমাদের কি হলো ? হঠাৎ করে সব কিছু যেন থমকে যেতে লাগল। প্রতিষ্ঠিত কল-কারখানাগুলো মুখ থুবড়ে পড়তে লাগল। লাভজনক শিল্প কারখানাগুলো ক্রমান্বয়ে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল। এভাবে কয়েক বছর চলতে না চলতেই অনেক কলকারখানা ঋনের দায়ে বন্ধ হতে শুরু করল। এতদিনের দক্ষ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরা চাকুরী হারালো। বেকার হলো হাজার হাজার শ্রমিক। দুঃখ-দুর্দশা নেমে এলো বাংলার হাজারও পরিবারে। দেশ হারালো শিল্পের ধারাবাহিকতা অথচ সম্ভাবনা ছিল ঐ সকল শিল্প কারখানার ভিত্তি ধরে দেশে গড়ে উঠবে নিজ¯¦ প্রযুক্তি। মেধাবী ও শিক্ষিত সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত করবে নিজ¯¦ কল-কারখানা। কিন্তু সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ হয়ে গেল। কিছু কল-কারখানা হয়ে গেল রুগ্ন এবং কিছু কিছু থম্কে থম্কে পথ চললো ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে চলে গেল ভিনদেশে। আপন দেশের মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অবদান রাখলো বিদেশী অর্থনীতিতে। এমনই এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম ‘খুলনা শিপইয়ার্ড’।
বৃটিশ আমলে এতদাঞ্চলে সরকারীভাবে কোন নৌযান তৈরী বা মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের প্রায় ৫/৬ বৎসর পরে ‘পাকিস্তান ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন পশ্চিম জার্মানীর হামবুর্গের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ষ্টাকেন সহন’ কে খুলনায় একটি আধুনিক শিপইয়ার্ড নির্মাণের জন্য নিযুত্তæ করে। উত্তæ প্রতিষ্ঠান ১৯৫৪ সালের প্রথম দিকে খুলনা নগরীর দক্ষিণ প্রান্তে কাজী বাছা নদীর তীরে প্রায় ৬৯ একর জমির ওপর খুলনা শিপইয়ার্ডের নির্মাণ কাজ শুরু করে। নির্মাণ শেষে ১৯৫৭ সালের ২৩ নভে¤¦র সেটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
শিপইয়ার্ড নির্মাণে সর্ব প্রথম ব্যয় হয় ২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫শ’ টাকা। পরবর্তীতে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধাদি তৈরীতে সর্বমোট ব্যয় হয় টাকা ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। বলাবাহুল্য তখনকার সময় খুলনা শিপইয়ার্ড এ উপমহাদেশের এক উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ নির্মাণ কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। সাফল্যজনক যাত্রার পর হতে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত জার্মান ব্যবস্থাপনায় ও ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জার্মান ও বৃটিশ যৌথ ব্যবস্থাপনায় খুলনা শিপইয়ার্ড পরিণত হয় এক অত্যাধুনিক শিপইয়ার্ডে।
১৯৬৫ সালে খুলনা শিপইয়ার্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করে ‘ইষ্ট পাকিস্তান ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা প‚র্ববর্তী সময় পর্যন্ত পরিচালনা করে। ইতিমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয় বিভিন্ন ধরনের নৌযান। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো মটর লঞ্চ, টুইং লঞ্চ, ওয়াটার বার্জ, ড্যা¤¦ বার্জ, কার্গো শিপ, ষ্টীল পোর্ট ফেরী, যাত্রী লঞ্চ ও পন্টুন ইত্যাদি। এছাড়াও মেরামত করা হয় অসংখ্য নৌযান। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ