Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষমতাসীনদের পকেটের উন্নয়ন হচ্ছে : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে তা শুধু ক্ষমতাসীনদের পকেটে যাচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ডেভেলপমেন্ট কার হচ্ছে? ডেভেলমেন্ট আপনাদের হচ্ছে। আপনাদের এবং গুটি কতক মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে। যারা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে একদিকে বিদ্যুৎখাত থেকে লুটছেন, অন্যদিকে মেগা প্রকল্প, ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেস ওয়ে ইত্যাদি করে লুটপাট করেছেন। এই উন্নয়নের কথা বলে তারা তাদের পকেটের উন্নয়ন করছে। তারা নিজেদের বিত্ত তৈরি করছে, সেই বিত্ত তৈরি ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না। কিছুদিন আগেও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে বাংলাদেশে কিছু সংখ্যক মানুষ অনেক উন্নত হচ্ছে, তাদের বিত্ত বাড়ছে আর কিছু সংখ্যক মানুষ দারিদ্র সীমার আরো নিচে চলে যাচ্ছে। গতকাল (শনিবার) গুলশানে হোটেল লেক শোরে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইউনিভার্সিটি টিচার্স (এগ্রিকালচারাল সায়েন্স) এর উদ্যোগে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিবস উপলক্ষে ‘তারেক রহমানের রাজনীতি এবং কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়।
সেমিনারে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সমঝোতা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, আপনারা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে চুক্তি করে ফেললেন মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো কথা। কিন্তু আমি পেলাম কী? জানতে পারলাম পররাষ্ট্র মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ২০১৬ তে যারা আসলো শুধু তাদের ফেরত নেবে। বাকীগুলোর ব্যাপারে তারা কোনো কথা বলবে না। তাও আবার কখন থেকে ফেরত নেবে, কবে শেষ হবে তাও কিছু বলা হয়নি।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, জাতিসংঘকে সম্পূর্ণ বাইরে রেখে অন্যান্য দেশগুলো যারা ইন্টারেস্টেড তাদের বাইরে এই কাজগুলো করে আসলেন অতিদ্রুততার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী একবারও গেলেন না মিয়ানমারে বা চীনে বা ভারতে বা রাশিয়ায় যে এই জিনিসগুলো আমাদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করা। আমরা বার বার বলেছি যে কূটনৈতিক বিষয়গুলো আমরা দেখতে পেলাম না। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেইস কোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) যে ভাষণ দিয়েছেন তাকে ঐতিহাসিক মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ ভাষণ নিসন্দেহে ঐতিহাসিক। ইউনেস্কোর একটার তালিকায় এই ভাষণ যুক্ত হয়েছে। খুব ভালো কথা তো। অস্বীকার কে করেছে? কিন্তু আপনারা এতো বছর পরে হঠাৎ ঢাকঢোল পিটিয়ে নামছেন, তখন কিন্তু দেশের মানুষ কষ্টে আছে। হাওড় এলাকাগুলোতে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আবারো চালের দাম ৬০ টাকা হয়েছে। বলেছেন বিনামূল্যে সার দেবেন এখন সেই সার তিন গুন আগের চেয়ে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সমাবেশের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে মহাসচিব বলেন, বড় গলায় বড় বড় অনুষ্ঠান করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষকদেরকে সরকারি চিঠি পাঠায় হাজির হতে হবে। না হলে সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে, চাকুরি চলে যাবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চিঠি দেয় হাজির না হলে ৫/৬ দিনের বেতন কাটা যাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন শেষ হয়ে গেছে। এখানে তাদের পছন্দ মতো লোককে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে এবং দলীয়করণ করা হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। বিচার বিভাগ শেষ করে ফেলেছে। প্রধান বিচারপতিকে মতের মিল না হওয়ায় তাকে প্রথমে একমাসের ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং পরে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, স্থায়ীভাবে চলে যেতে হয়েছে এবং তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আজকে সংসদ নেই। যে সংসদ এটাকে সংসদ বলা যায় না। ১৫৪ জন অনির্বাচিত এবং শতকরা ৫ ভাগ ভোটে সংসদ দাঁড়িয়ে আছে। এই সংসদে একটা বিরোধী দল আছে তারা সরকারে আছে। তাহলে রাষ্ট্রের পিলারগুলো কোথায়? টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাসটেইনেবল ইকোনমিক ডেভেলমেন্ট হতে হলে সাসটেইনেবল ডেমোক্রেসি দরকার। সেজন্য সবার আগে দরকার একটা নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সকল দলের অংশ গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। সেই নির্বাচনে অবশ্যই জনগন অংশ নেবে এবং তারা যে রায় সেটা জনগণের সরকার তৈরি করবে। কৃষি উন্নয়নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়ার নানা পদক্ষেপ এবং দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. ইদ্রিস মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর তাজমেরী এস এ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কামরুজ্জামান কায়সার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর আবদুল কুদ্দুস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে প্রফেসর ইসমাইল হোসেন কচি, প্রফেসর মো. মাহবুব আলম, প্রফেসর আমীর হোসেন, প্রফেসর তরিকুল ইসলাম, প্রফেসর মোশাররফ হোসেন, প্রফেসর সিদ্দিকুল ইসলাম, প্রফেসর আবু তালেব, দেলোয়ার হোসেন টিটু, সামিউল ইসলাম, মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, তৌহিদুল ইসলাম, এনামুল কাদির প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গোলাম হাফিজ কেনেডি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ