পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষুদ্র ঋণে শিউলি বেগম এখন স্বাবলম্বী। মুসলিম এইডের কাছ থেকে সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে মোমবাতি কারখানা গড়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জুগিয়া রাস্তাপাড়া সমিতির শিউলি বেগম সবার মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
শিউলি আক্তার ছিলেন গৃহিণী। দিনমজুর স্বামী আব্দুল মালেকের সংসার চলত দিন এনে দিন খাওয়ার মতো। সংসারে যখন দু’সন্তান তখন চারজনের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। দিগি¦দিক হয়ে পড়েন তারা। ২০০৩ সালে কুষ্টিয়ার একটি এনজিও থেকে মাত্র ৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়িতে গড়ে তোলেন মোমবাতির কারখানা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে কারখানাটিতে ৭টি মেশিন, ২২ জন কর্মচারী নিয়ে প্রতিদিন ৭ হাজার মোমবাতি তৈরি হয়। কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার জুগিয়া রাস্তাপাড়া এলাকার সফল উদ্যোক্তা শিউলি।
শিউলি বেগম জানান, বিয়ের পর দিনমজুর স্বামী সংসার চালাতো। তবে সংসারে অভাব-অনটনের কারণে শহরের মুসলিম এইড নামে একটি এনজিও থেকে মোমবাতি তৈরির প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এরপর মাত্র ৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু করেন মোমবাতি তৈরির কাজ। স্বামীর সাথে কয়েক বছর মোমবাতি তৈরির কাজ করতে থাকে। আস্তে আস্তে ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে ব্যবসার। দু’জন মিলে কারখানার কাজ শেষ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মোমবাতি তৈরি করতে থাকেন। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে অর্ডার আসতে থাকে। এছাড়া সাথে রয়েছে সংসারের কাজ। পরে বেশ কয়েকজন কর্মচারী নিয়োগ দেন। যাদের প্রতি মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা বেতন দিতে হয়। বর্তমানে প্রতিদিনই কারখানা খোলা রাখতে হয়। কারণ গরমকালে বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে মোমবাতির ব্যাপক চাহিদা থাকে।
তিনি আরো জানান, স্বল্প পুঁজি জমিয়ে বেশ কয়েক শতক জমি ক্রয় করেছেন। ১ ছেলে ১ মেয়েকে পড়াচ্ছেন শহরের স্কুলে। এছাড়া ব্যবসার প্রসারের জন্য এনজিও থেকে যে দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন সে টাকাও পরিশোধ করেছেন। এখন প্রায় ২১-২২ জনের মতো শ্রমিক তার কারখানায় কাজ করে। বর্তমানে কারখানা থেকে বছরে প্রায় ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকার মোমবাতি বিক্রয় করা হয়।
শিউলি আক্তারের স্বামী আব্দুল মালেক জানান, ‘বছরের শ্রেষ্ঠ মহিলা ক্ষুুদ্র উদ্যোক্তা’ হিসেবে তার নাম পাঠানো হয়েছে। শুরু থেকে সে ব্যাপক পরিশ্রমী নারী হিসেবে কাজ করেছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে সে একদিন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
মুসলিম এইডের কুষ্টিয়া শাখা ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম জানান, শিউলি আক্তার আমাদের মডেল। সে স্বল্প সময়ে যেভাবে নিজের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তার নজির খুব কম জেলাতে। এছাড়া উপজেলার মঠপাড়া ইউনিয়নের সাবিনা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে দুগ্ধ খামার তৈরি করেছেন। তাছাড়া ছাগল, হাঁস-মুরগিও পালন করা হয় তার খামারে। সেখানেও প্রায় বিশ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে। সেও এখন কোটিপতি।
সিরাজুল ইসলাম জানান, আমাদের এনজিও থেকে প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন এলাকার অভাবী ও হতদরিদ্র মানুষের উন্নয়নে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকি। যেসব নারী প্রশিক্ষণে সফলতা দেখাতে পারে তাদের প্রথমে স্বল্প পরিমাণ টাকা সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়। এরপর তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকলে ঋণের পরিমাণও বাড়ানো হয়। বর্তমানে জেলার প্রায় শতাধিক নারী কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন, কুটির শিল্প, মুদি-মনোহারি, ফেরি ব্যবসা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, তাঁত, নার্সারি, মৎস্য, গরু পালনসহ অন্যান্য খাতে কয়েক শ’ মানুষ ঋণ নিয়ে সাবলম্বী হয়েছে।
শিউলি ও সাবিনার উন্নতি দেখে আরো অনেক নারী তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য এনজিও থেকে প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণ নিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।