Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মামলার জট বৃদ্ধির আশঙ্কা

১৫ দিন পরেও নিয়োগ হয়নি প্রধান বিচারপতি

মালেক মল্লিক : | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উচ্চ আদালতে বিচারপতি সঙ্কটে এমনিতেই একেকটি মামলা ঝুঁলে থাকে বছরের পর বছর। বর্তমানে প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য থাকায় মামলার এই জট আরো বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ করার ১৫ দিন পরও নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়নি। আপিল বিভাগের একজন সিনিয়র বিচারপতি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। উচ্চ আদালতে (আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে) ৮৮ জন বিচারপতি রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগ প্রায় দুই বছর যাব বন্ধ রয়েছে। চলতি বছর আপিল বিভাগের দু›জন বিচারপতি অবসরে যান। সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮১ দিন আগেই পদত্যাগ করেন। এতে করে আপিলে বিচারপতি সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ জনে। বিচারপতি কম থাকায় আপিল বিভাগের দুটির মধ্যে একটি বেঞ্চে বিচার কাজও বন্ধ রয়েছে।
প্রধান বিচারপতির পদে নিয়োগ না হওয়ার ঘটনাকে এক ধরনের সংকট হিসেবে দেখছেন আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, পর্যপ্ত সংখ্যাক বিচারপতি না থাকায় মামলা নিষ্পত্তির হার কমছে। প্রধান বিচারপতির নিয়োগ না অন্যান্য বিচারক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে বিচার বিভাগ বর্তমানে অভিভাবহীন। এইভাবে চলতে পারে না। এতে করে আদালতে মামলা জট বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে আইনজীবীরা মনে করেন। সংবিধানে উচ্চ আদালতে বিচারকের কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সময়ে সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
কবে নাগাদ প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ করা হবে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধান বিচারপতির পদটি প্রেসিডেন্ট বেশি দিন খালি রাখবেন না। আর আপিল বিভাগের বিচারপতিও নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রæতই শুরু হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আইনমন্ত্রী।
তবে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ার এক ধরনের সাংবিধানিক সংকট রয়েছে। কারণ প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। আর প্রধান বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিদের শপথ বাক্য পাঠ করান। তাই প্রধান বিচারপতি নিয়োগটা খুবই জরুরি বলে তিনি মনে করেন। এটা সংবিধানে ১৪৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে। যদিও আইন মন্ত্রী এ বিষয়ে অন্যভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিচার বিভাগ অভিভাবকহীন কিনা জানতে চাইলে বর্তমান সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, না এটা বলা যাবে না। পর্যাপ্ত সংখ্যাক বিচারক নিয়োগ না হলে স্বাভাবিকভাবেই মামলার জট বাড়বে।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাই চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বিচারক নিয়োগে আমরা তো কিছু বলতে পারি না। এটা সরকারের বিষয়। বিচারিক সেবা বৃদ্ধি করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। এতে করে মামলার জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেন, বিচার বিভাগ বর্তমানে অভিভাবহীন আছে। দেশে প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও কি দেশ চলতে পারে ? তেমনি বিচার বিভাগেও প্রধান বিচারপতি ছাড়া চলতে পারে না। এইভাবে চলতে থাকলেও বিচার বিভাগের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এই আইনজীবী আরো বলেন, প্রতিদিন মামলার দায়ের হচ্ছে। অথচ উচ্চ আদালতে বিচারপতি কম নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিষয়ে তিন জন সাবেক প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে ছুটি, পদত্যাগ ও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের বিষয় নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। এরপর জনসন্মুখে সেটা প্রকাশ করারও দাবি জানান তিনি। অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন থেকে যাবে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। তিনি ছুটি শেষে দেশে না ফিরে ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়ে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করে কানাডায় চলে যান। পরে ১১ নভেম্বর তার পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা জানায় বঙ্গভবন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এসকে সিনহা। বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ৮১ দিন আগেই তার কার্যকাল শেষ হয়। আর তার পদত্যাগের কারণে সাংবিধানিক এ পদে নিয়োগ দেয়ার প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের মোট বিচারপতি নয়জন। এর মধ্যে চলতি বছর শুরুতে গত একজন বিচারপতি মারা যান। একজন অবসরে যান। এরপর আপিলে ৭ জন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা অবসের যান।
এরপর আপিলে ৬ বিচারপতি থাকেন। গত ১১ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের পর আপিলে বিচারপতি সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ জনে। অপরদিকে হাইকোর্ট বিভাগে আছেন ৮৩ জন বিচাপতি। বিচারপতি কম থাকায় আপিল বিভাগের দুটির মধ্যে একটি বেঞ্চে বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে। বিচারক সংকটে সময়মতো বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মামলার স্তুপ জমে যাচ্ছে। ১ নম্বর কোর্টে বর্তমানে বিচার চলছে। আপিল বিভাগে বিচারক শূন্যতায় মামলার শুনানিতে বিঘœ ঘটছে। বিশেষ করে সরকার রায় বাতিল চেয়ে রিভিউ করার যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তা ৫ জন বিচারপতির পক্ষে শোনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, রায় বাতিল চেয়ে আমরা যে রিভিউ করব তার শুনানি গ্রহণ করতে ৭ জন বিচারপতি লাগবে। সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে প্রায় পাঁচ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। হাইকোর্টে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৯টি মামলার বিপরীতে ৮৩ জন বিচারপতি। আপিলে ১৪ হাজার মামলার বিপরীতে মাত্র ৫ জন বিচারপতি। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারাও বহুবার সৎ ও দক্ষ বিচারকে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে আসছে। গত বছর বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে স্বয়ং প্রধান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছিলেন, জনসংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ করা এখন সময়ের দাবি। দুই বছর আগে আটজন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে প্রধান বিচারপতি সুপারিশ প্রেরণ করলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি এখনো। সুপারিশ আইন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে বলে জানা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ