Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হস্তান্তরিত ঋণ ঝুঁকিতে ব্যাংকিং খাত

বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৯০ শতাংশ ব্যাংকার এর অভিমত হস্তান্তরিত ঋণ ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি বাড়াবে। বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ৪০ শতাংশ ব্যাংকারের মতে হস্তান্তরিত ঋণ ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে। আর ৫০ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছে, হস্তান্তরিত ঋণ নিকট ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘লোন টেকওভার ইন বাংলাদেশ ঃ ইজ ইট এ হেলদি প্রাকটিসেস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের পরিচালক (গ.উ.ক) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের ঋণ ক্রয় বা টেক ওভার (ঋণ হস্তান্তরের) হচ্ছে। ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত চার হাজার ৩৩৯ কোটি টাকার ঋণ হস্তান্তরের ঘটনা ঘটছে। এটিকে কেন্দ্র করে ব্যাংকগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। অনেকাংশে গ্রাহকের সব ধরণের তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। যা পরবর্তীতে খেলাপী হয়ে পড়ছে।
গোলটেবিল বৈঠকে ঋণ হস্তান্তরের উপর গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা। চার সদস্যের গবেষক দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের সহকারি অধ্যাপক ড. মো. মহব্বত হোসেন, বিআইবিএমের লেকচারার তোফায়েল আাহমেদ এবং লেকচারার রাহাত বানু। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬০ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছেন, পরিচালনা পরিসদের অযৌক্তিক চাপে ঋণ হস্তান্তরে ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। ৫ শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছে, ঋণ হস্তান্তরের অদক্ষতা রয়েছে। এক শতাংশ ব্যাংকার জানিয়েছে, ঋণ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া হয়।
বৈঠকের প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তরা এখন ব্যাংকিং খাতে ঢুকে পড়েছে। সম্প্রতি একটি ব্যাংকে গত তিন বছরে তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন নয় মাস যাবৎ কোনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, দুই থেকে চার লাখ টাকা দিলে এমডি পাওয়া যাবে কিন্তু ব্যাংক চালানোর মতো যোগ্য লোক পাবেন না। ব্যাংকার ভালো হলে নীতিমালার দরকার নাই বলে উল্লেখ করেন।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণ হস্তান্তরের সময়ে সব বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে হস্তান্তর করা উচিত। সব ধরণের যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দিলে খেলাপী হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত ইসলাম বলেন, ঋণ হস্তান্তরের অনেক খারাপ দৃষ্টান্ত আছে। কিছু গ্রাহক ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য সরকারি ব্যাংককে টার্গেট করে। তারা বিভিন্ন কায়দা-কানুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা আর পরিশোধ করেন না।
তিনি আরও বলেন, ঋণ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তা ব্যাংক খাতের জন্য ক্ষতিকারক। এটি বন্ধ করতে হবে। ঋণ হস্তান্তরে যে গ্রাহকের ঋণ নেয়ার ক্ষমতা ১০ কোটি টাকা তাকে ২০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে অন্যান্য বক্তারা বলেন, লোন টেকওভারের (ঋণ হস্তান্তর) ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা করতে হবে। ঋণ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানছে না ব্যাংকগুলো। এখানে এক ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঋণ

২১ অক্টোবর, ২০২২
১৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ