Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭ ব্যাংকের ৮ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খেলাপির লাগাম টানতে না পারলে বাড়বে আরও
ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি। সেপ্টেম্বর শেষে দেশের সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সাতটি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে এই পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৩৪২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর তিনটি হলো রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক। আর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জুলাই-সেপ্টেম্বর ভিত্তিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৭ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সব চাইতে বেশি প্রভিশন ঘাটতিতে বেসিক ব্যাংক। এই ব্যাংকটির ঘাটতি প্রায় ৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। গত জুন শেষে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৮০ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৩৬২ কোটি টাকা। এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাটতিতে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। জুন শেষে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৯২ কোটি টাকা। তবে রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কমেছে। জুন শেষে রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা থাকলেও সেপ্টেম্বর শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটি প্রভিশন ঘাটতি কমাতে পেরেছে ২২৮ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের কোন প্রভিশন ঘাটতি নেই।
বেসরকারি খাতের ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সেপ্টেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৯৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত জুন শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৬৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। সেই হিসেবে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি কমেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতি তৈরি হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের, যার পরিমাণ ৮৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গত জুন শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি ছিল। সেই হিসেবে তিন মাসে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর শেষে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত জুন শেষে ব্যাংকটির এই ঘাটতি ছিল ১৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৮৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। ব্যাংকটি নতুন করে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। তবে বিদেশি মালিকানার কোন ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি নেই। একই ভাবে সেপ্টেম্বর শেষে বিশেষায়িত কোনো ব্যাংকেরও প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়নি।
ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যাতে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এই প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।
বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আউয়াল খান বলেন, যতদিন খেলাপি ঋণ না কমবে ততদিন প্রভিশন ঘাটতি কমানো যাবে না। তারপরও যতটুকু সম্ভব ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে। বিষয়টিতে পৃথকভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে ব্যপকহারে প্রভিশন ঘাটতি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এক দিকে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত ঋণগুলো ঠিকমত আদায় হচ্ছে না। ফলে প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে। আর এটি বেশি বাড়ছে সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। কারণ তাদের জবাবদিহিতা কম। তাই সরকারের উচিত এসব ব্যাংকগুলোকে সাপোর্ট না দিয়ে ঋণ আদায়ের ওপর চাপ দেয়ার পাশাপাশি নতুন ঋণ বিতরণে কঠোর হওয়া। একই সঙ্গে যেসব বেসরকারি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে সেসব ব্যাংকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো দরকার।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা, গত জুন শেষে যা ছিল ৪৩ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে সবগুলো ব্যাংক মিলে প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে ৩৯ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।



 

Show all comments
  • সাজিদ ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৫৭ এএম says : 0
    দেশের অর্থণীতি আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খেলাপি ঋণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ