পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত ক’দিন ধরে দেশের শীর্ষ মিডিয়ায় হেফাজতে ইসলাম নামটি বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। সমকাল, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ আরো অনেক দৈনিক ও একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে চাইছে যে, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করবে। এজন্য নাকি তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ২০ টি আসন চেয়ে পত্র লিখেছে। একটি দৈনিক দাবী করেছে যে, হেফাজতে ইসলামের একজন নায়েবে আমীর এই পত্রের খসড়া হেফাজতেরই এক যুগ্ম মহাসচিবকে পাঠিয়েছেন। যারা আবার মুফতি আমীনির সাথে যুক্ত ইসলামী ঐক্যজোটের বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিব। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার দাবী করেছেন, পত্রটি হেফাজত নায়েবে আমীরের রাজনৈতিক দলের অফিসিয়াল ই-মেইল থেকে প্রেরিত এবং এর অপরদিকে যে ই-মেইলটি ছিল সেটিও হেফাজত মহাসচিবের রাজনৈতিক দলের অফিসিয়াল ই-মেইল। তিনি সময় ও তারিখসহ ই-মেইল প্রেরণ গ্রহন ও পত্রটি সংশোধনের পর পুণঃ প্রেরণ ইত্যাদি সহ তার পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশ করেন এবং বলেন, এর (সিসি) কপি তিনি সহ আরো কিছু ঠিকানায় পৌঁছে যা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের কাছে সংরক্ষিত আছে। এ বিষয়ে হেফাজত ও ইসলামী ঐক্যজোট (নেজামী-ফয়জুল্লাহ) উভয় সংগঠনের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার সাথে কথা বলে তিনি কোনো যৌক্তিক জবাব পাননি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এরপর পাশাপাশি সময়ে অন্য অনেক মিডিয়া এ ধরনের রিপোর্ট ও বিশ্লেষন শুরু করে। এতে সারা দেশের কওমী অঙ্গনে বিশেষ করে হেফাজতের সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এক ধরনের কৌতুহল।
এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবের কথা হয়, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীর সাথে। তিনি বলেন, পত্রটি আমাদের অফিসিয়াল ই-মেইল এড্রেস থেকে কেউ প্রেরণ করে থাকতে পারে, তবে আমরা তা জানিনা। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতের ভেতর অনেক রাজনৈতিক দল ও নেতা রয়েছেন। তারা তাদের রাজনীতিতে কার সাথে জোট করবেন বা কাকে সমর্থন দেবেন তা সম্পূর্ণ তাদের নিজের বিষয়। বিষয়টি নিয়ে কথা হয় হেফাজতে ইসলামের অন্যতম সিনিয়র সহ-সভাপতি বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, গণ মানুষের নন্দিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নাম ব্যবহার করে কিছু লোক সরকার থেকে নানা সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে বলে শুনেছি। অনেকে জেলে থাকার কথা হলেও এখন মন্ত্রী এমপি ও এজেন্সীর কর্মকর্তাদের সাথে বসে মিটিং করছে। যার যোগ্যতা বা জনপ্রিয়তা আছে সে যা ইচ্ছা তাই করুক, কিন্তু তৌহিদি জনতার রক্তে রঞ্জিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে যেন তারা বিক্রি না করে। তাছাড়া যে কোনো লেনদেন বা বিনিময়ে জড়িতদের আমি বলবো, ঈমান নষ্ট হয় বা আখেরাত বরবাদ হয় এমন কোনো কাজ কেউ করবেন না। শাপলার শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানী করবেন না। হেফাজতকে দল ও ভোটের রাজনীতির উর্দ্ধে চিরস্থায়ী ঈমানী আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবেই থাকতে দিন।
হেফাজতের একনিষ্ঠ কর্মী ও আল্লামা আহমদ শফীর আধ্যাত্মিক শিষ্য দেশের একজন বরেণ্য আলেম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের সকলের মুরব্বী আল্লামা শাহ আহমদ শফী আল্লাহর একজন মকবুল বান্দা। তার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনি হেফাজতের প্রতিটি বিষয় ইলহামী ভাবে সিদ্ধান্ত নেন। সুতরাং ঈমানী ও আধ্যাত্মিক এই আন্দোলন সাময়িক স্বার্থে বা ভয় ভীতি, প্রলোভনে তার প্রতিষ্ঠাকালীন অঙ্গিকার থেকে সরে যাবে না। শতাধিক বছরের কওমী সাধনা ও দেশের শত সহস্র দীনি কর্মকান্ডের মাধ্যমে সৃষ্ট চেতনার যে জ্বালাময় বহিঃপ্রকাশ হাটহাজারীর হযরতের আহ্বানে হেফাজতের নামে হয়েছিল যে কোনো মূল্যে তিনি এর সম্মান ধরে রাখবেন। যদিও হেফাজতের ভেতর অনেক রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। কিছু দুর্বলচেতা, আদর্শহীন, লোভী ব্যক্তিও এতো বড় সংগঠনে থাকা বিচিত্র নয়। তবে এদের নিজেদের কোনো জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা নেই। হেফাজতের ছাতার নিচেই এরা বড় নেতা। আলাদাভাবে তেমন কিছু নয়। আমার বিশ্বাস, যাদের নামে বদনাম তাদের কর্মকান্ডের ওপর হযরতের কড়া নজর আছে। কেউ অপকর্ম করলে ইলহামীভাবে আল্লাহ মুরব্বীর অন্তরে তা স্পষ্ট করে দিবেন। আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধানে দ্রুত পুনস্থাপন, কুফুরী মতাদর্শ, বিশ্বনবীর সা. শান ও মান রক্ষার চেতনায় যে দাবীর সূচনা তার উল্লেখযোগ্য অংশ মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কেউ হেফাজতের সমর্থন পাবে তা আমরা বিশ্বাস করি না। বিশেষ করে দেশের কোটি কোটি তৌহিদী জনতা বিগত আন্দোলনে যে নজিরবিহীন সমর্থন, দোয়া, ত্যাগ ও কুরবানী করেছে এর শুদ্ধতা ও পবিত্রতার সাথে কিছু ভ্রষ্ট লোকের হীন স্বার্থ ও লোভ লালসার রাজনীতি যায় না। আমার মনে পড়ে হাটহাজারীসহ ঈমানী আন্দোলনের নানা পর্যায়ে জীবন দেওয়া কিশোর তরুণ ছাত্রদের কথা। ৫ মে ২০১৩ গভীর রাতে শাপলা চত্বরে নাম না জানা বহু শহীদের জীবন দানের কথা। লাখো নিষ্পাপ ছাত্র-জনতা ও সমবেত নবী প্রেমিকদের ক্ষুধা তৃষ্ণা, ভয় আতঙ্ক ও অমানবিক নিষ্ঠুরতা সহ্যের কথা। কিছু টাকা, বাড়ি গাড়ি, সংসদে ২/৪ টি আসন, দুয়েকজন নেতার ক্ষণস্থায়ী পার্থিব স্বার্থের বিনিময়ে কোটি মানুষের ঈমানী প্লাটফরমকে কেউ বিক্রি করে দেবে, অন্তত হাটহাজারী হযরতের জীবদ্দশায় তা হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।