Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান বিচারপতি ইস্যু-- দৃষ্টি বঙ্গভবনের দিকে

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রায় সর্বত্র একই আলোচনা। কে হচ্ছেন দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি। প্রেসিডেন্ট কাকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিচ্ছেন ? তা জানতে সবার মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। সবার দৃষ্টি এখন বঙ্গভবনের দিকে। সংবিধান অনুসারে একমাত্র প্রেসিডেন্টই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন। সরকারের উচ্চ মহল, বিরোধী দলীয় জোট এবং সর্বোচ্চ আদালত অঙ্গণ থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্রই চলছে এ নিয়ে আলোচনা। গত ১০ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮২ দিন আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ করেন। এরপর ১৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করার কথা জানানো হয়।
সংবিধান অনুযারী অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আপিল বিভাগের যে কোনো বিচারপতিকেই প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দিতে পারেন। পুরো বিষয়টি এখন প্রেসিডেন্ট ওপর নির্ভর করছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যখন চাইবেন তখনই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারবেন। এটা সম্পূর্ণ প্রেসিডেন্ট এখতিয়ার। আইনমন্ত্রী আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে বলেন, এটিও প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ওপর নির্ভরশীল। তিনি কখন কাকে নিয়োগ দেবেন সেটা তার এখতিয়ার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতিকে হবেন তা নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্তের ওপর। প্রেসিডেন্ট কাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন তা তিনিই জানেন। আমাদের সংবিধান ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা কেবল প্রেসিডেন্ট। তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিকভাবে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
সবার দৃষ্টি বঙ্গভবনের দিকে কিনা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট গ্রহণ করেছেন। এখন বলা চলে পদটি শূণ্য। রাষ্ট্রের গুরুতপূর্ণ পদে কে আসছেন তা নিয়ে দৃষ্টি থাকাটা স্বাভাবিক বিষয়। আর আমাদের সংবিধান অনুসারে পদটিকে কাকে নিয়োগ দেবেন সেটা নির্ভর করছে প্রেসিডেন্টর এর ওপর। একারণে বলা যায় সারা দেশের মানুষ প্রেসিডেন্ট তথা বঙ্গভবনের দিকে নজর রাখছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল প্রস্তুুত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে প্রেসিডেন্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। প্রধান বিচারপতির এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণের পর আইন মন্ত্রণালয় পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি সংক্রান্ত নথি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট দফতরে পাঠাবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতি পদে নতুন নিয়োগের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধানীর রায় প্রকাশের পর থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্নœ মন্ত্রী ও এমপিদের এবং আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে গত ২ অক্টোবর অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ১৩ অক্টোবর ঢাকা ছাড়েন। বিদেশ যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বিবৃতিতে বলেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানীং একটি রায় নিয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। পরের দিন এঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিবৃতি দেয়ার পর থেকেই অ্যাটর্নি জেনারেল ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা বলে আসছিলেন দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর প্রধান বিচারপতির পদে ফেরা সুদুর পরাহত। সরকারের সঙ্গে প্রায় ৩ মাস টানাপোড়েনের পর সর্বশেষ ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেসিডেন্ট বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ পায়। প্রধান বিচারপতি ছুটি শেষে দেশে না ফিরে বিদেশ থেকে কেন পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন এ নিয়ে নতুন বির্তকও সৃষ্টি হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির হঠাৎ পদত্যাগ পত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, পত্রত্যাগ পত্র নিয়েও সন্দেহ আছে। গত এক মাসের ছুটি নিয়ে ১৩ অক্টেবার বিদেশ যান। বিদেশ যাওয়ার ২৮ দিনের মাথায় তিনি পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগপত্রটিপ্রেসিডেন্ট বরাবর পাঠিয়ে দেয়ার জন্য তিনি নিজে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হস্তান্তর করেন।
১৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ওইদিনই এ সংক্রান্ত নথি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে আইন মন্ত্রণালয় পদত্যাগের কারণে প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের কার্যক্রম শুরু করেছে কিনা শুক্রবার পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে চাননি। তবে মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট গ্রহনের চিঠি মন্ত্রনালয়ের কাছে আছে। প্রেসিডেন্ট আদেশ পেলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই। প্রেসিডেন্ট যখন চাইবেন তখনই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারবেন। এটা সম্পূর্ণ প্রেসিডেন্টর এখতিয়ার। আইনমন্ত্রী আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে বলেন, এটিও প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব। তবে আমি মনে করি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পরপরই আপিল বিভাগে বিচারপতির যে স্বল্পতা রয়েছে তা পূরণ করা হবে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে তা একমাত্র প্রেসিডেন্টই ভালো জানেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা প্রেসিডেন্ট জানেন। তিনি বলেন, আপনারা জানেন দুটি বিষয়ে সম্পূর্ণ প্রেসিডেন্টর এখতিয়ার। এক হলো প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা আর দুই হলো প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা। কাজেই এ বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রেসিডন্ট ব্যাপার। রাষ্ট্রের প্রধান এ আইনজীবী বলেন, প্রধান বিচারপতি যখন নিয়োগ করবেন তখন সবাই দেখবেন আমিও দেখবো। প্রেসিডন্ট কিভাবে নিয়োগ করবেন, কার সঙ্গে আলাপ করবেন বা আদৌ আলাপ করবেন কি-না এগুলো সবই প্রেসিডেন্ট বিষয়।



 

Show all comments
  • হাবিব ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৫১ এএম says : 0
    এব্যাপারে আবার কিছু বলতে গেলে মামলা খাওয়া লাগতে পারে । তাই আমার মত সাধারণ মানুষের চুপ করে দেখাটাই শ্রেয়
    Total Reply(0) Reply
  • নাঈম ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৫৩ এএম says : 0
    ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ