Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রংপুরে আনসার নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ: বিক্ষোভ সংঘর্ষে আহত ২০ জন

| প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : রংপুরে আনসার নিয়োগে মাঠ এবং ভর্তি পরীক্ষায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোটি টাকা বাণিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। লেনদেন নিয়ে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মোবাইলে কনফার্মেশন এসএম পাঠাতেও অনেক বিলম্ব করা হয়। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নগরীর মাহিগঞ্জে উত্তেজিত চাকরী প্রত্যাশীদের সাথে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যদের সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয় এবং ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ২০ জন চাকুরী প্রার্থী আহত হন। চাকরী প্রত্যাশীরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পূনরায় শারীরিক ও ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় সাধারণ আনসারের ৩’শ ৫০টি পদে লোক নেয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন লাইনে আবেদন চাওয়া হয়। এতে কয়েক হাজার আবেদন পত্র জমা পড়ে। গত ১৫ নভেম্বর রংপুর স্টেডিয়ামে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে শারীরিক মাপ নেয়া হয়। শারীরিক পরীক্ষায় উর্ত্তীর্নদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য রাত ৮ টায় মোবাইলে এসএমএ দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এসএম না আসায় শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীরা মাহিগঞ্জ আনসার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ের সামনে ভীড় জমাতে থাকে।
অভিযোগ উঠেছে, আনসার নিয়োগের জন্য আগে থেকে জন প্রতি মোটা অংকের টাকা চুক্তি করে শারীরিক পরীক্ষায় ৮’শ ৫০ জনকে উত্তীর্ন করা হয়। এজন্য ঢাকা থেকে আগত দুই আনসার কর্মকর্তার সাথে স্থানীয় আনসার কর্মকর্তাদের রফাদফা না হওয়ায় বুধবার সারা রাত এবং বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মোবাইলে এসএমএস যাচ্ছিল না। পরে ঢাকা থেকে একটি ফ্যাক্স নিয়ে এসে তা টাঙ্গিয়ে দিয়ে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে বিপত্বি বাঁধে। সেখানে দেখা যায় অনেক প্রার্থী যারা মোটা অংকের টাকা দিয়েছিলেন তারা তালিকায় নেই। এরই মধ্যে কিছু কিছু মোবাইলে এসএমএস যায়। শুরু হয়ে যায় ভর্তি পরীক্ষা। শারীরিক পরীক্ষায় উর্ত্তীন পরীক্ষার্থীদের নাম থাকা সত্বেও অনেকেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন নি। আবার যারা টাকা দিয়েছিলেন তাদেরও অনেকের নাম সেখানে নেই। এ নিয়ে সেখানে বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চাকরী প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। এরই মধ্যে পঞ্চগড় জেলার একজন পরীক্ষার্থীকে ব্যাটালিয়নের ভিতরে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। বিক্ষোভকারীরা ব্যাটালিয়নের প্রধান গেট ভাংগার চেষ্টা করে। এসময় আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যপক লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের শহিদুল ইসলাম জানান, আমি ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। আমার ২১ দিনের ভিডিপি ট্রেনিং ছিল। আমি এইচএসসি পাশও করেছি। তারপরেও আমাকে সিলেক্ট করা হয় নি। অথচ যারা ১ থেকে ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। তাদেরকে সিলেক্ট করা হয়েছে। তিনি এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পুনরায় শারীরিক ও ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানান।
এ ব্যপারে আনসারের উপ-পরিচালক ও রংপুর জেলা কমান্ডার আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগে সাধারণ আনসার পদে ৩’শ ৫০টি পদে লোক নেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে কয়েক হাজার আবেদন পত্র জমা পড়ে। এর মধ্য থেকে বুধবার রংপুর স্টেডিয়ামে শারীরিক মাপ যোগ শেষে ৮’শ ৫০ জনকে বাছাই করে বৃহস্পতিবার তাদের নগরীর মাহিগঞ্জ সাতমাথা আনসার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু চাকরি প্রত্যাশীরা এসে জানান, এসএমএসের মাধ্যমে তাদের ডাকার কথা থাকলেও অনেকেই এসএমএস পায়নি। আবার অনেকে এসএমএস পাওয়ার পরও লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এই নিয়ে বিকেলে সেখানকার ব্যাটলিয়ন আনসারদের সাথে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আনসাররা চাকরি প্রার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
টাকার বিনিময়ে নিয়োগ এবংএসএমস দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কোন টাকার লেনদেন করিনি। কেউ যদি বাইরে করে থাকে সেটার সাথে আনসারের কেউ জড়িত নয়। শারীরিক বাছাইয়ের পরও যারা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, তাদের জন্য আমরা বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্ত তারা পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে উল্টো বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ