Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বৈরী আবহাওয়া- ক্ষতির শঙ্কায় কৃষক

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে সারাদেশে হঠাৎ বৈরী আবহওয়া বিরাজ করছে। দেশের অধিকাংশ স্থানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিসহ বইতে শুরু করেছে শীতল বাতাস। অগ্রাহয়নের শুরুতে এমন বৃষ্টি শীতকালীন সবজির ক্ষেতের মারাত্মক ক্ষতি হবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে সবজির পাশাপাশি পাকা রোপা আমনের ক্ষতিরও শঙ্কা করছে কৃষক। কৃষিবিদরা বলেছেন, বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতে পানি বেধে গেলে ক্ষতি হবে। তবে এখনো সেই ক্ষতির পর্যায়ে যায়নি। এখনই ক্ষতির বিষয়ে কিছু না বললেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন নি¤œচাপের কারণে দেশে আরও দু’দিন এই বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে। বৃষ্টির কারণে ঠান্ডা অনুভূতি সৃষ্টি হলেও এখনই শীত আসছে না। এ মাসের শেষ নাগাদ বা ডিসেম্বরের শুরুতে শীতের দেখা মিলতে পারে।
দু’দিন দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে কাটার অপেক্ষায় থাকা কৃষকের আমন ধান এবং শীতকালীন সবজির ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমে সবজি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাশপাশি শীতকালীন সবজি আলু ক্ষেত পঁচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্যান্য সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, মূলা, গাজর, শালগম, সিম, টমোটো, পেঁয়াজ পাতা (পেঁয়াজের হাই), মটরশুঁটি, লালশাক, পালংশাক ক্ষতির মুখে পড়েছে। আর তাই কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়েছেন। দেশে এ বছর আগাম বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির পর নতুন করে আবার ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে আগাম বন্যার কারণে গত অর্থবছর খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ নয় লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন কমেছে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ২২ দশমিক ৮৮ লাখ মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদন হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ২১ দশমিক ৩৩ লাখ মেট্রিক টনে নেমে আসে। আগাম বন্যায় এবার বোরো ধানের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান বিবিএস সচিব। মার্চ থেকে মে- এই তিন মাস বাংলাদেশে বোরোর চাষ হয়। গত অর্থবছর এই মৌসুমে ১৮৯ দশমিক ৩৭ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছিল। আর এবার বন্যার কারণে তা কমে হয়েছে ১৮০ দশমিক ১৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গম উৎপাদনও আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৬ হাজার মেট্রিক টন কমেছে বলে জানান মোজাম্মেল হক। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বোরো ধানের উৎপাদন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সার্বিকভাবে খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (সরেজমিন উইং) কৃষিবিদ চৈতন্য কুমার দাস বলেন, এই সময়ে বৃষ্টি এবং বাতাস রোপা আমন এবং শীতকালীন শাক-সবজির জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে পানি বাধলে আলু পঁচে যাবে, অন্যান্য শীতকাালীন শাক-সবজি নষ্ট হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বাতাস হলে রোপা আমন ধান মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে নতুন করে উফসী ধান গজাবে। তবে ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টিতে পানি বাধছে কি বাধেনি। একই সঙ্গে কোথায় কি পরিমান বৃষ্টি হয়েছে তা আমার সঠিকভাবে জানা নেই। তাই ক্ষতির হিসাব করা কঠিন হবে।
যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবীদ মো. আব্দুল আজীজ ইনকিলাবকে বলেন, লুঘচাপের কারণে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসও বাড়ছে। আবাহাওয়ার এই বৈরী ভাব খুব শিগগিরই কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আর বৈরী ভাব কেটে গেলে রোপা আমন বা সবজির তেমন ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, বাতাস বেশি হলে ধান শুয়ে পড়তে পারে। ধান তুলতে কৃষকের কষ্ট কিছুটা বাড়বে। তবে তেমন ক্ষতি হবে না। এছাড়া সবজির ক্ষেতে যে সবজি অঙ্কুরিত হয়েছে তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে না। তবে অধিক বৃষ্টি হলে, সবজি ক্ষেতে পানি বেধে গেলে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। বৃষ্টিতে আলুর ক্ষতির বিষয়ে মো. আব্দুল আজীজ বলেন, আলুর ক্ষতি খুব একটা হবে না। কারণ আলু ক্ষেতের দু’পাশে নালা থাকায় পানি নেমে যাবে। তাই ক্ষতির তেমন শঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেন। তবে আবহাওয়ার এই বৈরিভাব পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাই এখনই সার্বিক ক্ষতির বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নি¤œচাপটি সামান্য একটু অগ্রসর হয়েছে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে এবং এর গতিবেগ ঘন্টায় বাড়ছে সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। তবে ২৪ ঘন্টায় এটা মাত্র ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। কিন্তু আগের মতোই শক্তি নিয়ে অবস্থান করছে। আহাওয়া অফিস বলছে, এটা আরো জোরদার হতে পারে। জোরদার হওয়ার মতো গত রাত পর্যন্ত অনুক‚ল পরিবেশও রয়েছে। আবহাওয়া অফিস দেশের চার সমুদ্র বন্দরের জন্য ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নি¤œচাপটি কার্যত : স্থির থেকে একই এলাকায় অবস্থান করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। সকালে নি¤œচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে মাত্র।
এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল পমঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। নি¤œচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার যা দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নি¤œচাপটির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
নি¤œচাপের প্রভাবে আজ শুক্রবার রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিপাতে ঠান্ডার অনুভূতি সৃষ্টি হলে শীত আসতে এখনও অনেকটাই দেরি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা জানান, আর কিছুদিন না গেলে শীত সম্পর্কে মন্তব্য করা যাবে না। বৃষ্টিপাতের কারণে হয়ত এখন কিছুটা ঠান্ডা পড়তে পারে।
ইনকিলাবের বরিশাল ব্যুরো প্রধান বিশেষ সংবাদদাতা নাছিম উল আলম জানিয়েছেন, আসন্ন অমাবস্যার কোটালে ভর করে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক‚লভাগের আমন চাষীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত বরিশালে ১০ মিলিমিটার, পটুয়াখালীতে ১৬ মিলিমিটার, কুয়াকাটা সংলগ্ন কলাপাড়াতে ১৪ মিলিমিটার ও ভোলাতে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকালও দিনভরই মেঘলা আকাশের সাথে সামান্য হালকা বৃষ্টি হয়েছে উপক‚লভাগে। তবে আবহাওয়া বিভাগ থেকে নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হবার খবর দিয়ে বরিশাল ও খুলনাসহ উপক‚লীয় এলাকায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণের সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণের সব নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারী রাখার পাশাপাশি পায়রা সহ সব সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৪০ কিলোমিটার যা দমকা অকারে ৫০ কিলোমিটারেও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়ে সব মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে উপক‚লের কাছাকাছি এসে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আপতত গভীর সমুদ্রে যেতে বারণ তাদের। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় সোয়া ৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১৬লাখ টন চাল উৎপাদনের আশায় বুক বেঁধেছিল কৃষকরা। বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরাও এবার ধানের ভাল দাম পাবার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু গত দু’দিনের হালকা বৃষ্টির সাথে মেঘলা আকাশ দক্ষিণের মাঠে মাঠে সোনালী ধানের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে এখনো ৯৮ ভাগ আমন কর্তনের অপেক্ষায়। যার বেশীরভাগই সোনালী রং ধারণ করছে। অবশিষ্ট ধানের ফুল এসেছে। কিন্তু বর্তমান বিরূপ আবহাওয়া আমনের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। গত দু’দিন বেশীরভাগ চাষিই জমির আইলে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাচ্ছে। খনার বচনে অঘ্রহায়ণের বৃষ্টিকে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যায় পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় সাড়ে ৭শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মত দক্ষিণাঞ্চলে বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত ছিল।
ময়মনসিংহ ব্যুরো থেকে বিশেষ সংবাদদাতা মো. শামসুল আলম খান জানিয়েছেন, ময়মনসিংহে শীতের শুরুতে বৈরী আবহাওয়ায় হঠাৎ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এতে করে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়তে পারেন কৃষক সমাজ। জানা যায়, বর্তমানে ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা জুড়ে কৃষকরা চাষ করছেন গম, ভুট্ট, শাক, শিম, টমেটো, লাউ, সরিষা, মুলা, গাজর, বেগুন, কফি’সহ নানা ধরনের রবি শষ্য। এসব ফসলের মধ্যে অনেক ফসল ইতিমধ্যে বাজারে উঠলেও সরিষা চাষ মাত্র শুরুর দিকে। সূত্রমতে, গত দু’দিন দিনভর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বিভিন্ন জাতের সবজী চাষের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা দেখ দিয়েছে। সেই সাথে এ বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া চলতে থাকলে সরিষা চাষ পিছিয়ে পড়তে পারে। ফলে সরিষাসহ অন্যান্য ফসল ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষকরা গৌরীপুর উপজেলার কৃষক হাফিজ উদ্দিন আকন্দসহ আরো অনেকেই।
তবে ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ জানান, রবি শষ্যের অনেক ফসলই ইতিমধ্যে বাজারে উঠেছে। তবে সরিষা চাষ এখন শুরু পথে। শীতের শুরুতে হঠাৎ এ গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি রবি শষ্যের তেমন ক্ষতি না হলেও সরিষা চাষ পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সরিষা আবাদের লক্ষমাত্র ব্যাহত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো জানান, বৃষ্টি কমে গিয়ে আবহাওয়া ভাল হয়ে গেলে রবি শষ্যে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে ভারী বৃষ্টি হলে রবি ফসল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
নরসিংদী জেলা সংবাদদাতা সরদার আদম আলী জানান, গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফলে সীম, সরিষা, গোলআলু, কাঁচামরিচ, ফুলকপিসহ বিভিন্ন শীতকালীন সব্জীর কমবেশী ক্ষতির মুখে পড়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হতে পারে সীম চাষের। সীম বাগানে বৃষ্টির ছোয়া পেলেই সীমের ফুল ঝরে যায়। এই বৃষ্টির ফলে সীম বাগানের ৮০ভাগ ফুলই ঝরে পড়ার আশংকা করেছে সীম চাষীরা। এরপর ক্ষতি হবে সরিষা চাষের। বৃষ্টিতে সরিষা ক্ষেতে কাঁদা সৃষ্টি হলে সরিষা বীজ পচে যাবে। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কাঁচামরিচ চাষাবাদ। ক্ষেত ভিজে গেলে, পানি জমলে মরিচের বীজও পচে বিনষ্ট হয়ে যাবে। গোলআলু’র চাষাবাদও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যেসব জমিতে ফুলকপির ফুল ধরে গেছে সে সব কপি ফুলে কালো ছিট পড়ে যাবে। গোমট আবহাওয়ার কারণে কপি ফুলে পোকার আক্রমনও হতে পারে। সীম বাগানেও ইছি পোকার আক্রমন হতে পারে। নরসিংদী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যেভাবে বৃষ্টি পড়ছে এই বৃষ্টি ততটা ক্ষতির কারণ নাও হতে পারে। তবে এরচেয়ে বেশী বৃষ্টি হলে বোরো ধানের বীজ তলা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ বছর কৃষি বিভাগ থেকে বোরো ধানের শুকনো বীজতলা করা হচ্ছে। যদি বৃষ্টিপাত হয় তবে শুকনো বীজতলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এছাড়া মাসের শুরুতে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় মাস জুড়ে শীতকালীন ফসল ঘরে তোলা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। বাঙালীর সবচেয়ে বড় ফসল হচ্ছে অগ্রাণী ধান। এই অগ্রাণী ধান দিয়েই বাঙালী সারা বছরের খোরাকি চলে। বৃষ্টিপাতের ফলে যদি অগ্রাণী ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে বাংলাদেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। একইভাবে অগ্রাণ মাসে বাঙালীর প্রধান সব্জী হচ্ছে সীম, গোলআলু, টমেটো, ফুলকপি, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন রবি শস্য। অগ্রাহয়ণ মাসে বৃষ্টিপাত হলে উল্লেখিত শাকসব্জীসহ সকল রবি শস্যের উৎপাদন ব্যহত হয়।
গফরগাঁও উপজেলা সংবাদদাতা মো. আতিকুল্লাহ জানান, দু’দিনের গুড়িগুড়ি বর্ষণে গফরগাঁও উপজেলার জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। বিশেষ করে শীতকালীন শাকসবজীর বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নি¤œ আয়ের কর্মজীবী লোকদের সংসারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। তাদেরকে সারাদিনই ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। বর্ষণের দরুন রাস্তাঘাটে জনশূন্য। মো. আফাজ উদ্দিন (কডি) জানান, সারাদিন ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে অসময়ের বৃষ্টির জন্য। বিশেষ করে পাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশীয় ভাগ এলাকায় পাকা আমন ধান কেটে ক্ষেতে রেখে ছিল শুকানোর জন্য। এ গুলো এখন নষ্ট হওয়ার পথে। অনেকেই আগাম ফসল করার জন্য বীজ রোপন করেছিল। তাও আবার নষ্ট হওয়ার পথে। এ ছাড়াও শীত কালীন সবজিসহ নানান ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।



 

Show all comments
  • আলতাফ ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:০৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি তাদের প্রতি রহমত নাযিল করো।
    Total Reply(1) Reply
    • Tanvir ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম says : 4
      Amin
  • চমক তারা ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    এতদিন শীতের আশা ছিলাম যে শীত আসলে সব কিছুর দাম কমবে এখন এটা আবার কী শুনছি ?
    Total Reply(0) Reply
  • সিরাজ ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৬ পিএম says : 0
    মনে হচ্ছে ভারী বৃষ্টি হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • জালাল উদ্দিন ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৮ পিএম says : 0
    আবার যদি নিত্য পণ্যের দাম বাড়ে তাহলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আনোয়ার আলী ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৯ পিএম says : 0
    বৃষ্টি কমে গিয়ে আবহাওয়া ভাল হয়ে গেলে রবি শষ্যে তেমন ক্ষতি হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • শান্তা ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩১ পিএম says : 0
    এখানে তো আর আমাদের কিছু করার নাই। শুধুমাত্র আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারি এবং তার সাহায্য চাইতে পারি।
    Total Reply(1) Reply
    • Salahuddin ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম says : 4
      So everybody should pray to Allah
  • সবুৃজ ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩২ পিএম says : 0
    এভাবে প্রাকৃতিক দুযোর্গ চলতে থাকলে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যাবে।
    Total Reply(1) Reply
    • Al Amin ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৪ পিএম says : 4
      Sudi ki krisokra, sob kisur dam barar karone sadharon manus nisso hoye jabe

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ