দমকা ও হিমেল হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত সাগর উত্তাল বন্দরে ৩নং সতর্ক সঙ্কেত
সাগরে নিম্নচাপের কারণে হঠাৎ বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। আশ্বিনের গোড়াতেই পাল্টে গেছে স্বাভাবিক আবহাওয়ার চালচিত্র। দমকা থেকে ঝড়ো হিমেল হাওয়া, আকাশ আংশিক মেঘলা কিংবা মেঘাচ্ছন্নসহ বিক্ষিপ্ত হালকা ও গুঁড়িবৃষ্টি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩নং সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। সমগ্র উপকূলীয় এলাকায় বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে নিম্নচাপটি বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭ শ’ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। একজন আবহাওয়াবিদ জানান, এটি কার্যত স্থির থেকে আরও শক্তি সঞ্চয় করে ঘনীভূত হচ্ছিল। নিম্নচাপটির গতি ছিল উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে। আজ (শুক্রবার) স্পষ্ট হবে এর মতিগতি কোন দিকে অর্থাৎ ভারতের নাকি বাংলাদেশের উপকূলভাগ অতিক্রম করতে পারে।
নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর অশান্ত থাকায় সামুদ্রিক মাছ শিকার কমে গেছে। তবে সতর্কতা সত্তে¡ও এখনও শত শত দেশীয় ট্রলার নৌযান বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের ঝুঁকির মধ্যেই অবস্থান করছে। সাগর উপকূল উত্তাল ও দমকা হাওয়া থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানিকৃত খোলা ও বস্তাজাত মালামাল লাইটারিং খালাস, কার্গো জাহাজযোগে পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। তবে বন্দরে স্বাভাবিক কাজ চলছে।
নিম্নচাপের সক্রিয় প্রভাবে মধ্য-হেমন্তে এসে গতকাল দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় রাঙ্গামাটিতে ১৮ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৫ মিমি, চট্টগ্রামে ২ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। হিমেল হাওয়ার সাথে অকাল বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রার পারদ নিচে নেমে গেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.২ এবং ২০.৬ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে রাত ও দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। এরপর থেকে শীতের স্বাভাবিক প্রকোপ শুরু হতে পারে।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নি¤œচাপটি কার্যত স্থির থেকে একই এলাকায় (১৮.১ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৫০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিমি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮১৫ কিমি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নি¤œচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।