Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বেনাপোল বন্দরে

| প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের কার্যক্রম চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল ঘোষণা করলেও বন্দরটি চলছে পুরানো ধারায়। সিসি ক্যামেরাসহ বন্দরের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে দুদেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্য।
বন্দরের বিল সেকশন থেকে শুরু করে সর্বস্থরের অফিসিয়াল কার্যক্রম চলছে হাতে-কলমে। এখানকার অব্যবস্থাপনায় দিন দিন ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছে। বন্দরের মধ্যে অনায়াসে ঘটছে পণ্য চুরিসহ বহির্গাতদের হামলায় মারা যাচ্ছে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে সিসি ক্যামেরা থাকলে একানকার অনিয়ম অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন বৈঠকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ওপর জোরদাবি জানালেও কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিষয়টি তারা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে বেনাপোল বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে রওনা হয়ে চার ঘণ্টায় একটি মালবাহী ট্রাক আমদানি পণ্যের চালান কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে ব্যবসায়ীদের এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। বেনাপোল বন্দর’র আমদানি পণ্য প্রবেশদ্বারসহ দুই কিলোমিটার বন্দর এলাকা জুড়ে কোথাও কোনো সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি। প্রয়োজন ছাড়া বন্দরের মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অবাধে বহিরাগতরা প্রবেশ করছে বন্দরের অভ্যন্তরে। প্রতিনিয়ত চুরি যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। চুরি হওয়া আমদানি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বন্দরের সামনেই নামে-বেনামে বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে।
বন্দরের অভ্যন্তরে সড়কগুলোর বেহাল দশা। বর্ষায় হাটু পরিমান পানি জমে পন্য ডুবে যায় পানির নীচে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, এসব অব্যবস্থানা দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করায় পর পর পাঁচ বছর এখানে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। যদিও সরকার প্রতিবছর এই বন্দর থেকে ২৫০০ থেকে ৩০০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা সংস্থা আনসার কমান্ডার শফিকুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের ১৬ নভেম্বর দায়িত্ব পালনের সময় চোর সিন্ডিকেটের হামলায় তাদের আনসার সদস্য ফিরোজ আহমেদ খুন হয়।
আমদানিকারক বাবলুর রহমান জানান, বন্দরে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে তাদের আমদানিকৃত ২৫ লাখ টাকার পণ্য পুড়ে যায়। বন্দরে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো বা অগ্নিকান্ডের রহস্য উদঘাটন সম্ভব হতো। গত দশ বছরে বন্দরের খুব একটা অবকাঠামগত কোন উন্নয়ন হয়নি। বন্দরের বিভিণœ শেড দিয়ে বর্ষায় পানি পড়ে মালমাল ভিজে নষ্ট হচ্ছে। তার পরও কোন উদ্যোগ নেই পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। বন্দরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। আগুন লাগলে তার তাৎক্ষনকি নেভানোর জন্য ফায়ার ফাইটার গুলো থাকে সার্বক্ষনিক অকেজো। বন্দরের পর্য়াপ্ত শেড না থাকায় ট্রাক টার্মিনালেই খোলা আকাশের নীচে রাখা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মালামাল। বন্দর থেকে মালামাল চুরির জন্য বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চোর সিন্ডিকেট। চোর সিন্ডিকেট সদস্যরা এতোই বেপোরোয়া যে মালামাল চুরিতে কেউ বাধা দিলে তার ওপর চালানো হয় হমালা ও নির্যাতন। সব মিলিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে বর্তমানে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলছে পন্যের শুল্কায়ন কার্যক্রম।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের বন্দর সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এই বন্দরটি আজ পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার আওতায় আসেনি এটা দুঃখজনক। অথচ বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে ৩০০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হযেছে ইন্ট্রিগেটেড চেকপোস্ট। বাণিজ্যিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন, রয়েছে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এসি ওয়ারহাউজ, চোরাচালান প্রতিরোধে স্ক্যানিং ব্যবস্থাসহ আরও অনেক আধুনিক ব্যবস্থা। যার একটিও আধুনিক সুবিধা নেই বেনাপোল বন্দরে। এতে লোকসানের মুখে পড়ে ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্য কমিয়ে দিচ্ছে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, প্রতিটি বৈঠকে বন্দর উন্নয়নের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা বিসয়টি আমলে নেয়নি। প্রতি বছর মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৫% হারে বন্দরের ভাড়া বৃদ্ধি করা হলেও অনেকটা অব্যবস্থানার মধ্য দিয়ে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে সুনজর দিলে প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আয় সম্ভব। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম জানান, বন্দরের সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোর কিছু কিছু উন্নয়ন কাজ পর্যায়ক্রমে চলছে বলে জানান তিনি।
বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে চলতি অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৯৬ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ২০৩ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ৮ কোটি ৭১ লাখ, ২০১৩-১৪-তে ঘাটতি ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ, ২০১২-১৩ তে ঘাটতি ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ১৯৪ কোটি টাকা। বন্দর সুত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে আমদানি হয় ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে চলতি অক্টোবর মাস পর্য›ত ৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩২৩ মে: টন পন্য আমদানি হযেছে। ব্যবসায়ীরা অবিলম্ভে বেনাপোল বন্দরকে সম্পূর্ন ডিজিটাল ও আধুনিকায়ন করে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ