Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ে বিভক্ত ইউপিডিএফ

পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ

দিদারুল আলম রাজু, খাগড়াছড়ি থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পর এবার বিভক্ত হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী বৃহত্তর পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউপিডিএফ’র বিভক্তির খবর প্রকাশ করা হয়। ১১ সদস্যের পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করলো ইউপিডিএফ’র সংস্কার গ্রুপ। নবগঠিত কমিটিতে তপন কান্তি চাকমাকে আহ্বায়ক ও জলেয়া চাকমা তরুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। ইউপিডিএফ’র এই বিভক্তির মধ্য দিয়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ হলো।
এর আগে ২০১০ সালের এপ্রিলে বিভক্ত হয় সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। জেএসএস’র কেন্দ্রীয় অপর শীর্ষ নেতা সুধাসিন্দু খীসার নেতৃত্বে গঠিত হয় জেএসএস (সংস্কার/এমএন লারমা গ্রুপ)। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের আগে তৎকালীন গেরিলা বাহিনী (শান্তিবাহিনী) প্রধান ও বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ছিলো পাহাড়িদের একক সংগঠন। সেই সময়ে ইউপিডিএফ’র প্রতিষ্ঠাতা প্রসিত বিকাশ খীসা ছিলেন সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র সহযোগী ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করে জনসংহতি সমিতি। এরপরই প্রসিত খীসার সাথে সন্তু লারমার বিরোধ শুরু হয়। আর সেই বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয় ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রæয়ারি। পার্বত্য চুক্তির শর্তানুযায়ী ওই দিন গেরিলা নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অস্ত্র সমর্পণ করে শান্তিবাহিনীর সশন্ত্র সদস্যরা। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীতে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জেএসএস ভেঙ্গে ইউপিডিএফ’র জন্ম দেয় প্রসিত বিকাশ খীসা। শ্লোগান দেয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্ত¡শাসন চাই’।
এদিকে ইউপিডিএফ’র সংস্কার গ্রুপকে ‘নব্য মুখোশ বাহিনী’ আখ্যা দিয়ে এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ। মাদক-সন্ত্রাস দুর্বৃত্ত প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে বুধবার বেলা ১১টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার এলাকায় লাঠিসোটা হাতে বিক্ষোভ করে ইউপিডিএফ’র প্রসিত গ্রুপের নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে থেকে অবরোধের ঘোষণা দেয় তারা।
একই সময়ে জেলা সদরের খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে ইউপিডিএফ’র সংস্কার গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহের খবর জানান দেয়। সংবাদ অভিযোগ করে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রসিত বিকাশ খীসা ও সঞ্জয় চাকমার নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালের ২৬-শে ডিসেম্বর আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে ইউপিডিএফ’র আন্দোলন পরিচালনার কৌশল ও পদ্ধতি সঠিক না হওয়ার কারণে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় নেতা সঞ্জয় চাকমা ও দীপ্তি শংকরসহ অনেকে দল ত্যাগ করেছে। এছাড়া দল ত্যাগ করার অপরাধে অনেক নেতাকর্মীকে খুন করেছে প্রসিত খীসার সন্ত্রাসী বাহিনী।
এছাড়াও অভিযোগ করা হয়, গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, বলপ্রয়োগের রাজনীতি, চাঁদাবাজি, গুম, খুন ও অপহরণের রাজনীতি করছে প্রসিত খীসা। প্রসিত খীসা মুখে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের কথা বললেও এ পর্যন্ত দশজনের অধিক দলীয় নেতাকর্মীকেও হত্যা করা হয়েছে। ইউপিডিএফ’র অনেক নেতা এখন পকেট ভারী নেতা হিসেবে পরিচিত হয়েছে। মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হয়ে প্রসিত খীসার ইউপিডিএফ এখন নীতিহীন, আদর্শহীন, লক্ষ্যভ্রষ্ট ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। আর এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীদের আর্থিকদন্ড ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করছে তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ