Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। গতকাল মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট কার্যলয় থেকে থেকে পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করার কথা জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আজই (মঙ্গলাবার) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আইন মন্ত্রনালয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পদত্যাগ পত্র আইন মন্ত্রনালয়ে এসেছে। এখন পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগে গত শনিবার দুপুরে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছিলেন জয়নাল আবেদীন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ চেয়ে এস কে সিনহার আবেদনটি প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পৌঁছেছে। সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এই আবেদনপত্রটি এসেছে।
গত শুক্রবার প্রধান বিচারপতি সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেসিডেন্ট বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ পায়। প্রধান বিচারপতি ছুটি শেষে দেশে না ফিরে বিদেশ থেকে কেন পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন এ নিয়ে নতুন বির্তক সৃষ্টি হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিচারপতির হঠাৎ পদত্যাগ পত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, পত্রত্যাগ পত্র নিয়েও সন্দেহ আছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছিলেন, সংবিধানের অনুযায়ী যে কোনো বিচারপতি প্রেসিডেন্ট কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাতে পারেন। গত ১২ অক্টোর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগে বিচার বিভাগ ভারমুক্ত হল।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে ৮১ দিন আগেই তার কার্যকাল শেষ হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১ জন বিচারক প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই প্রথম পদত্যাগ করলেন। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে আর কোনো প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রকাশ্যে এত আলোচনা-সমালোচনাও হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক, বিএনপি ও হিন্দু জোট ও বামপন্থী নেতারাও বলেছেন, প্রধান বিচারপতির প্রতি অবিচার করা হল। তাকে অপমান করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়াও বিএনপি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার উচ্চ আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করতে জোড় করে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করারো হল। যেটি বিচার বিভাগের জন্য একটি খারাপ নজির স্থাপন করছে।
সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর প্রথম সপ্তাহের প্রথম দিকে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা একাই অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে আসেন। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানের জন্য দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক করেন। এতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ তৃতীয় একটি পক্ষও ছিল। এতে এসকে সিনহা ১১ অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে সম্মানজনকভাবে দেশে ফিরে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য এজলাসে বসতে চেয়েছিলেন। অন্যথায় পদত্যাগ করতে চান। সূত্রটি আরও জানায়, কিছু দিন আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মাধ্যমে এ দেশ থেকে ই-মেইলযোগে পদত্যাগপত্রের খসড়া নেন। এরপর পদত্যাগপত্র তিনি নিজেই চূড়ান্ত করেন। পদত্যাগপত্রটি সঙ্গে করে তিনি সিঙ্গাপুরে আসেন। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দেশে ফিরে পদত্যাগ করতে চান। কিন্তু তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা দেশে ফিরতে বারণ করেন। সিঙ্গাপুরে বসেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে কানাডায় ফিরে যান। পরিবারের সদস্যরা চান, আর কোনো ঝামেলায় না গিয়ে শান্তিতে তিনি বিদেশেই অবস্থান করবেন। সেখানে একটি বাসাও ভাড়া করা হয়েছে। সেই বাসায় তিনি থাকবেন। তার সঙ্গে পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কারো সঙ্গে দেখা করতে করছেন না। দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করবেন। সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘ দিন থাকতেন পারেন। সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি দেয়ার পর এরপর থেকেই অ্যাটর্নি জেনারেল ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা বলে আসছিলেন এসব অভিযোগ উঠার পর প্রধান বিচারপতির পদে ফেরা সুদুর পরাহত। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশ হয়। পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা। বিদেশ যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বিবৃতিতে বলেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানীং একটি রায় নিয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। প্রধান বিচারপতি দেশ ত্যাগ করার পরের দিন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ