Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেষ রাতে হালকা শীত সাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ

মধ্য-হেমন্তেও গরমের তেজ

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কার্তিক মাস গতকাল (মঙ্গলবার) শেষ হয়েছে। অগ্রহায়ণ শুরু হলো আজ। মধ্য-হেমন্তেও সূর্যের কড়া রোদে গরমের তেজ কমছেই না। এ বছরে অসময়ের অতিবৃষ্টির পর অসময়ে গা-জ্বলা গরম অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়ার এ অবস্থাকে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গতকাল কিছুটা ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। একই সাথে লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশের প্রভাবে আবহাওয়ায় বিরাজ করছে উষ্ণতা। গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রার পারদ উঠে যায় সীতাকুন্ডে সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঢাকায় ছিল ৩২.৮ ডিগ্রি সে.। দেশের অধিকাংশ স্থানে তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সে. কিংবা এর ঊর্ধ্বে। যা এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে স্থানভেদে ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সে. বেশি রয়েছে। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ১৪.৮ ডিগ্রি সে.। লেপ-কম্বল, শীতের কাপড় নামাতে হচ্ছে না। বরং এ অবস্থায় দিনের বেলায় তো বটেই রাতেও ফ্যান-এসি চালাতে হচ্ছে। অথচ মওসুমের এমনটি সময়ে হালকা শীতের সাথে সকালে কুয়াশাপাত ও শিশির ঝরার দৃশ্যই আবহমান বাংলার চিরাচরিত রূপ। আবহাওয়ার এই স্বাভাবিকতা এখন প্রায় অনুপস্থিত। যদিও শেষ রাত থেকে খুব হালকা শীত পড়ছে। ভোরে মৃদু কুয়াশার সাথে অল্পক্ষণ ধরে ঝরছে শিশির। এরপরই সূর্যের কড়া রোদে হেমন্তের শীতল আবহাওয়া যেন উধাও।
এহেন বিপরীতমুখী ও খেয়ালী আবহাওয়ায় ভুগছে মানুষ। সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপে অসঙ্গতির সমস্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মওসুমী রোগ-ব্যাধি দেখা দিয়েছে। বিশেষত শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। কার্তিক শেষে অগ্রহায়ণ মাস শুরু হলেও আবহাওয়ায় বিরাজ করছে ভাদ্র-আশ্বিনের মতোই তালপাকা গরম। ভ্যাপসা গুমোট গরম ‘ভাপ’ এখনও কাটেনি। বর্ষার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুমালা অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা, জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি বেশি হারেই রয়ে গেছে। গতকাল সকালে ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার হার ছিল ৮০ শতাংশ। অনেক এলাকায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকায় ভ্যাপসা ধরনের গরমের রেশও আছে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত লঘুচাপটি বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। যার একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আজ (বুধবার) পর্যন্ত আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। আগামী ৩ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাব্য এই বৃষ্টিপাতের পর শীতের প্রকোপ ক্রমশ বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির দেয়া দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, চলতি নভেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ১ থেকে ২টি নি¤œচাপ। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে। তবে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
আগামী ডিসেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তখন রাতের তাপমাত্রা ক্রমেই হ্রাস পাবে। ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২টি মৃদু (সর্বনি¤œ ৮ থেকে ১০ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সে.) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আগামী জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১টি মাঝারি থেকে তীব্র (৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সে.) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র ১ বা ২টি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে সার্বিকভাবে এ মাসের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি সে. বেশি থাকতে পারে। উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪.৫ ডিগ্রি : বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ঘাম-ঝরানো তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামে ৩৪.৫ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৩০.৬ ও ২১.৬ ডিগ্রি সে.। দেশের অধিকাংশ স্থানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা এরও ঊর্ধ্বে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থারত লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসাবে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসগার ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল। এটি বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে.হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরের ৫ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীত

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩
১৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ