Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীপুরে আমন ধানে পোকার আক্রমণ

| প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কৃষকরা আগুনে পোড়াচ্ছেন ধানগাছ
শ্রীপুর (গাজীপুর) থেকে এম এ মতিন : সারাদেশে এখন ধান কাটার ধুম। নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেনের চোখেমুখে বিষাদের ছায়া। কিভাবে সামনের দিনগুলো খেয়েপড়ে বাঁচবেন, তার কোনো ক‚লকিনারা পাচ্ছেন না তিনি। কারণ তার একমাত্র সম্বল চার বিঘা জমির আমন ধান পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে। একাধিকবার কীটনাশক ছিটিয়েও তিনি ফসল রক্ষা করতে পারেননি। একই এলাকার আরেক কৃষক হুমায়ুন কবির জানান, আমনে এ রোগের আক্রমণ এত তীব্র যে, ধানগাছ মরে খড়ে পরিণত হয়ে যায়। এসব খড় গবাদিপশুও খায় না। কীটনাশক দিয়ে সামলাতে না পেরে অনেকে আক্রান্ত ধানক্ষেত আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন। আলতাফ হোসেন ও হুমায়ুন কবীরের মতো শ্রীপুর বহু কৃষক এবার ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাদামি ঘাসফড়িং ও ব্যাকটেরিয়াল লিফ বøাইটেড (বিএলবি)র হাত থেকে ধানক্ষেত রক্ষা করতে না পেরে বাকি জমি সুরক্ষিত রাখার জন্য আক্রান্ত অংশ পুড়িয়ে দিচ্ছেন কৃষকেরা। অন্তত ২০ জন কৃষক জানিয়েছেন, তারা গড়ে চার বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে দিয়েছেন। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে উফসি জাত ও ২৫ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) এবং প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে দেশীয় প্রজাতির ধানের চাষ হয়েছে।
চলতি আমনের মৌসুমে আবহাওয়া অনুক‚লে না থাকায় এবং অতিবৃষ্টির কারণে কৃষকের ধানের জমিতে বিএলবি রোগ ও বাদামি ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণ হয়েছে। কৃষকের আসাবধানতায় অনেক জায়গায় এ রোগ থেকে ধানের জমিকে রক্ষা করা যায়নি। এ পোকা অতি দ্রæত সময়ে ধানগাছে আক্রমণ করে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধানের শীষ বের আগে ও পরে ব্যাপকভাবে রোগ দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে অনেকে ক্ষেত রক্ষা করতে পেরেছেন। যেসব কৃষক রোগের লক্ষণ দেখে ব্যবস্থা নিতে দেরি করে ফেলেছেন, তারা একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকার আক্রমণ থেকে ক্ষেত রক্ষা করতে পারেননি।
বিন্দুবাড়ি জিওসি গ্রামের আব্দুল হামিদ বলেন, এ সময়ে প্রতি বছর আমরা নবান্ন উৎসব পালন করি। এবার পোকায় ধান নষ্ট করে দেয়ায় আমাদের সামনে এখন অন্ধকার। কি খেয়ে বাঁচব তা ভেবে ক‚লকিনারা পাচ্ছি না। মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক আহাম্মদ আলী বলেন, প্রতি বছর আমরা আমন ধানের চাষ করে থাকি। এবার শুরু থেকেই প্রতিবন্ধকতা ছিল। প্রথমে বীজ সঙ্কট, তারপর আবার পোকার আক্রমণ। সাতখামাইর গ্রামের কৃষক আব্দুস ছাত্তার বলেন, এবার পোকার আক্রমন এত বেশি ছিল যে, ফসলের মাঠে এখন ধানগাছ দাঁড়িয়ে আছে, শুধু ধান নেই। চাউলের দাম বৃদ্ধির কথা বিবেচনায় ধার দেনা করে তিন বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। পোকার আক্রমণে ধান না পাওয়ায় এখন শুধুই অন্ধকার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুুয়িদ উল হাসান বলেন, ১৫-২০ দিন আগেও হঠাৎ প্রচুর বৃষ্টিপাত আবার গরম পড়ায় অর্থাৎ পরিবর্তিত আবহাওয়ার কারণে (দিনে প্রচন্ড গরম ও রাতে ঠান্ডা) ধানগাছে পাতাপোড়া রোগসহ বিভিন্ন রোগ বিস্তারের উপযোগী হয়। এ ব্যাপারে কৃষকদের সতর্ক করতে আমরা ইউনিয়নপর্যায়ে স্কোয়াড গঠন করে কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছি। যারা ওই পরামর্শ মেনেছেন, তারা কিছুটা রেহাই পেয়েছেন, যারা পালন করেনি; তাদের ক্ষেতে রোগের আক্রমণের প্রকোপ হয়ে থাকতে পারে। পরবর্তীতে যাতে ক্ষেতে ওই পোকার জীবাণু আক্রমণ করতে না পারে, তার জন্য ক্ষেতের আক্রান্ত ফসল কিংবা ধানগাছের অবিশিষ্টাংশে (নাড়ার অংশে) আগুন দিয়ে দিয়েছেন কৃষকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ