Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যা ও খরাসহিষ্ণু ধানের বাম্পার ফলন

| প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ থেকে মো. অহেদুল হক : তিন জেলায় আমন মৌসুমে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বন্যা ও খরাসহিষ্ণু ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক।
আকস্মিক বন্যাসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জাত বিনা-১১ প্রতি হেক্টরে ৫.৪১ টন ফলেছে। এ ছাড়া স্বল্প সময়ে খরাসহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের জাত বিনা-১৭ (গ্রিন সুপার রাইস) ধান ৫.৮৯ টন উৎপাদিত হয়েছে।
প্রচলিত আমন জাতে গাছফড়িং বা কারেন্ট পোকা আক্রমণ করে। কিন্তু এ দু’জাতের ধানে গাছফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ করেনি। প্রচলিত জাতে প্রতি হেক্টরে মাত্র দেড় টন ধান উৎপাদিত হয়। পক্ষান্তরে এ দু’জাতে প্রচলিত জাতের তুলনায় অন্তত সাড়ে তিনগুণ বেশি ধান ফলেছে। স্বল্প সময়ে উচ্চ ফলনশীল এ দু’জাতের ধানে সার ও সেচ কম লাগে। তাই কৃষক এ জাতের ধান আবদ করে লাভবান।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিতোষ মন্ডলের জমিতে উৎপাদিত এ দু’ জাতের ধান কেটে পরিমাপ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে বলে গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র আরো জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও বাগেরহাট জেলার ১৬ একর জমিতে বিনা-১১ ধানের ৩০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়। এ ছাড়া ওই তিন জেলার ২৫ একরে ৩৮টি প্রদর্শনী প্লটে কৃষক বিনা-১৭ ধানের আবাদ করেন। প্রত্যেক জেলায় এ ধানের ট্রায়ালে সাফল্য এসেছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক পরিতোষ মন্ডল আরো বলেন, বিনা ধান-১১ জমিতে রোপণের পর আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। প্রায় ২০-২২ দিন এ ধান পানির নিচে ছিল। ধানগাছের গোড়ায় পচন ধরে। এতে আমি হতাশ হয়ে যাই। পরে জমি থেকে পানি নামতে শুরু করায় ধান গাছ নতুন করে কুশি ছাড়ে। এ জমিতে মাত্র ১২০ দিনে এ জাতের ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছি। এ ছাড়া এ ধানে গাছফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়নি। প্রতি বছর এ ধান চাষ করে একই জমিতে তিনটি ফসল ফলানে যাবে।
বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার আটজুড়ি গ্রামের কৃষক প্রহল্লাদ হীরা বলেন, আমি খরাসহিষ্ণু স্পল্প সময়ের বিনা ধান-১৭ আবাদ করেছি। এ ধান মাঠে রোপণ থেকে পাকতে সময় লেগেছে মাত্র ১১০ দিন। এ ধান খরায় পুড়েছে। তারপরও বৃষ্টি পাওয়ার সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভালো ফলন দিয়েছে। এ ধানে সার ও সেচ খুবই কম লাগে। এ কারণে এ ধান আবাদ করে লাভবান হয়েছি। আমাদের দেখাদেখি অনেকেই এ ধানের আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিএডিসির মাধ্যমে এ জাতের ধানের বীজ কৃষকের হাতে পৌঁছে দিলে কৃষক বিনা ধান চাষ করে উপকৃত হবেন বলে তিনি জানান।
গোপালগঞ্জ বিনা উপ-কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শেফাউর রহমান বলেন, আমরা বিনামূল্যে কৃষককে এ দু’ জাতের ধান দিয়েছি। তারা মাঠে প্রদর্শনী প্লট করে ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এ ধানে গাছফড়িং পোকার আক্রমণ হয়। বন্যা ও খরার মতো প্রতিক‚লতায় পড়েও এ ধান ভালো ফলন হয়েছে। এ ধানের আরো বেশি ফলন দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। প্রচলিত জাতের তুলনায় এ ধানের ফলন তিনগুণেরও বেশি হয়েছে। তাই প্রদর্শনী প্লট দেখে তিন জেলার কৃষক এ জাতের ধান আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, আমন মৌসুমে বিনা উদ্ভাবিত বন্যা ও খরাসহিষ্ণু স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন উচ্চফলনশীল জাত ট্রায়ালে তিন জেলায় ভালো করেছে। এ ধান আবাদ করে কৃষক লাভবান হয়েছেন। আমন মৌসুমে দেশে ধানের উৎপাদর বৃদ্ধিতে এ ধান ভ‚মিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ