Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছুটির মেয়াদ শেষ : প্রধান বিচারপতির ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:৫১ পিএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে ফিরে স্বপদে বসতে পারবেন কিনা তা নিয়েও তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। তবে প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরতে চান। তবে কবে নাগাদ ফিরবেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দেশের বাইরে তথা (সিঙ্গাপুরে) প্রধান বিচারপতির বিষয় নিয়ে দফায়-দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। সেখানে এখন পর্যন্ত উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। সমঝোতা না হলে প্রধান বিচারপতি সহসা দেশে ফিরছেন কিনা তাও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তার দেশে ফিরা নিয়ে যেন এক ধরণের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বলছে, করে নাগাদ প্রধান বিচারপতির ফিরবেন তাদের হাতে কোন তথ্য নেই।
এদিকে প্রধান বিচারপতির ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও ব্রিফিং অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এক মাস ১০ দিনের ছুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পদত্যাগ বা অপসারণ ছাড়া ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনিই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে থাকছেন। ইতোপূর্বেও একজন প্রধান বিচারপতি চেয়ারে না বসেও দীর্ঘ সময় প্রধান বিচারপতির পদে আসীন ছিলেন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আশা করছি তিনি (প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা) দেশে ফিরবেন। প্রধান বিচারপতি নিজেও তো বিদেশ যাওয়ার আগে বলেছেন, তিনি দেশে ফিরবেন।
আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরবেন কি না অথবা পদত্যাগ করবেন কিনা এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন সে অনুযায়ী তিনি ছুটির এসে দেশে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন তা আগামী দু-একদিন না যাওয়া পর্যন্ত বোঝা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতির দেশে বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন প্রধান বিচারপতির তরফে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো, তাঁর দেশে ফেরা বা কাজে যোগদান বিষয়ে নতুন কোনো চিঠি পায়নি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রধান বিচারপতির ছুটিতে গেলে সাধারণত শেষ হওয়ার একদিন আগে দেশে ফেরারও কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের। কিন্তু ছুটির শেষ হওয়ার আগের দিন তথা গত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কোন রকম প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়নি। অন্য সময় প্রধান বিচারপতির ছুটি শেষ হওয়ার এক থেকে দুদিন আগে আপিল বিভাগের কোর্ট অফিসার প্রটোকলের জন্য এয়ারপোর্টে চিঠি পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত প্রটোকলের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বা প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকেও প্রটোকলের ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। এদিকে তার ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কাছে তিনি কোনো দরখাস্ত জমা দেননি। তবে একটি সূত্রে জানা যায়, প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরতে চান। তবে কবে ফিরবেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যায়, প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে দফায়-দফায় বৈঠক করেও উদ্ভূত পরিস্থিতির সমঝোতার চেষ্টা চলছে। যদি কোন সমঝোতা না হয় তাহলে হয়তো প্রধান বিচারপতি কানাডা চলে যেতে পারেন। সেখানে তার কনিষ্ঠ মেয়ে থাকেন। তার কাছে থাকতে পারেন। সমঝোতা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন সমঝোতার হয়নি বলেও জানা যায়। পারিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে, এসকে সিনহা বর্তমানে সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি ১৩ নভেম্বর অথবা তারও আগে দেশে ফিরতে পারেন। সমাধান না হলে দেশে ফিরে পদত্যাগ করতে পারেন। সিঙ্গাপুর চিকিৎসার জন্য চার দিন আগে আসেন।
আদালতে সাধারণ আইনজীবীরা জানিয়েছে, বর্তমানে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তাতে বিচারপতি এসকে সিনহার দেশে ফেরা অনেকটাই দুরূহ হয়ে পড়েছে। কারণ দেশে ফিরলেও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা যদি তার সঙ্গে বিচারকাজে বসতে না চান, সেটি হবে প্রধান বিচারপতির জন্য অবমাননা ও বিব্রতকর। এ অবস্থায় সম্মানজনক সমাধান ছাড়া তিনি দেশে নাও ফিরতে পারেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আইনজীবী বলেন, তিনি বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী তিনি দেশে ফিরবেন। তবে করে ফিরবেন সেটা বলা কঠিন।
গত ৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির দেশে ফিরে আসা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তার দেশে ফেরা না ফেরা মূল বিষয় নয়। প্রধান বিচারপতির মূল কাজ বিচারকার্য পরিচালনা করা। কিন্তু উনার সঙ্গে তো আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা বসতে রাজি নন। তাহলে তিনি কিভাবে বিচারকার্যে বসবেন? এজন্য বারবারই বলছি, উনার পক্ষে ফিরে এসে বিচারকার্য পরিচালনা সুদূর পরাহত। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বলেছিলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসলে অবমাননা হবে। তার এ ধরনের বক্তব্য সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী। আমরা বলতে চাই, যেখানেই থাকুক না কেন পদত্যাগ বা অবসরে না যাওয়া পর্যন্ত বিচারপতি এসকে সিনহাই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। তাকে নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অবমাননাকর বলেও মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এক মাসের ছুটিতে যান বলে সংবাদ দেন আইন মন্ত্রণালয়। ওই ছুটির মেয়াদ শেষ না হতেই ১০ অক্টোবর ছুটির মেয়াদ ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন তিনি। এরপরই ১২ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি বর্ধিত ছুটিকালীন বিদেশে অবস্থানকালে ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বিচারপতি মো. ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। গত ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশ হয়। পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকার সমর্থিত আইনজীবীরা। এমনকি তারা প্রধান বিচারপতি যে অনুষ্ঠানে থাকবেন সেটা বয়কট করারও কথা বলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। গত ১৩ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া যান প্রধান বিচারপতি। যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি বিবৃতিতে বলেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানীং একটি রায় নিয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত।
প্রসঙ্গত, আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অবসরে যাবেন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ