Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশ কর্মকর্তাদের জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ আইজিপির

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৮ পিএম

সমাজের সকল পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম। বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের আয়োজনে শিবগঞ্জ স্টেডিয়াম মাঠে জঙ্গি ও মাদকবিরোধী কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
আইজিপি বলেন, পুলিশ দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ তৎপরতা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে। তারা যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে এজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে দেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য কমিউনিটি পুলিশিং কে কাজে লাগাতেও আহ্বান জানান তিনি। সব ধরণের সহিংসতা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠ পর্যায়ের সকল পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আইজিপি। তিনি বলেন, শুধু মামলা নিয়ে, তদন্ত করে, চার্জশিট দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য জনগণ তথা কমিউনিটি পুলিশকে সম্পৃক্ত করে অপরাধ প্রতিহত করতে হবে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধে অভিভাবককে সচেতন করতে হবে। তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো জানিয়ে, সন্ত্রাসবাদের সাম্প্রতিক ধারা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরেন।
আইজিপির নির্দেশনা দেন- যে পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না সে পুলিশ কর্মকর্তার চাকরি করার দরকার নেই। ওসিরা যদি থানায় কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের কার্যক্রমে অবহেলা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আইজিপি আরো বলেন- সারা বিশ্বের পুলিশি কার্যক্রমে কমিউনিটি পুলিশিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাপনা। জনগণকে পুলিশের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়ে অপরাধ রোধ, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থার লক্ষ্যে ২০০৬ সালের দিকে বাংলাদেশে ব্যাপক ভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে রাজশাহী রেঞ্জের ১৬টি জেলার তিনটি পর্যায়ে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা দেশের সব বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে শুরু হয়। প্রত্যেক থানায় স্থানীয়ভাবে সর্বজন স্বীকৃত গণ্যমান্য অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়। প্রতিমাসে থানা-পুলিশ বসে বৈঠক করে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও অপরাধমুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে হবে। মাদক, জুয়া, নারী নির্যাতন, হত্যা, চুরি ডাকাতিসহ সমাজের দাগি অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কার্যক্রমে জনগণের অংশীদারত্ব তৈরি করাই ছিল কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, এখন চেষ্টা চলছে পুনর্গঠিত নতুন কমিটিকে দিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ এবং সাধারণ জনগণের মাঝে পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব কমছে। আর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে এটি সম্ভব হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটি পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে চাই, যার জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকবে। বর্তমান পুলিশের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মাদক এবং জঙ্গিবাদ দমন করা। জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। মানুষকে মেরে ইসলাম কায়েম কোনো ধর্ম নয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য এলাকার জনগণ এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যরা মিলে কাজ করছেন।
কমিউনিটি পুলিশিংকে মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ এখানে যারা কাজ করেন, তারা নি:স্বার্থভাবে কাজ করেন। যেসব থানায় ওসি কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যদের মূল্যায়ন করবেন না, তাদের থানায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তিনি বলেন, জনগণ এগিয়ে এলে সমাজের যে কোনো অপকর্ম দূর করা সম্ভব। আয়োজিত অনুষ্ঠানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ১ শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মোহা. গোলাম রাব্বানী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঈনুদ্দীন ম-ল, ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের আহবায়ক রুহুল আমিনসহ রাজশাহী রেঞ্জের আট জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে সকাল সাড়ে ১০টায় নবনির্মিত চারতলা বিশিষ্ট শিবগঞ্জ থানা ভবন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বিপিএম, পিপিএম। সারাদেশে ১০১টি থানা কমপ্লেক্সের মধ্যে এ শিবগঞ্জ থানা ভবনের উদ্বোধন করলেন তিনি। জানা যায়, ২০১৪ সালে ওই ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। শিবগঞ্জ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র শিবগঞ্জ বাজার এলাকায় এ ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশ বিভাগের ১০১টি জরাজীর্ণ থানা ভবন টাইপ প্লানে নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ওই ভবন নির্মিত হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের আওতায় এই মনোরম ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হাবিবুল ইসলাম জানান, এ ভবনে আধুনিক সুবিধার সবকিছুই রয়েছে। দুটি হাজতখানা, পৃথক পুরুষ ও মহিলা ব্যারাক, কনফারেন্স রুম, ওজুখানাসহ নামাজ ঘর রয়েছে। তিনি আরো জানান, শিবগঞ্জ থানায় বর্তমানে জনবল কাঠামো প্রায় পুরোটায় রয়েছে। একজন অফিসার ইনচার্জ, একজন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত), একজন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ১১ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ২ পিএসআই, ১১ জন সহকারি পরিদর্শক (এএসআই), পুলিশ সদস্য (ফোর্স) ৪৩ জন, এএসপি প্রবীন একজন কর্মরত রয়েছেন। দাপ্তরিক কাজের ব্যাঘাত ঘটায় পুলিশ বিভাগের ১০১ থানা ভবনের টাইপ প্লানে নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এই থানা চত্বরে নতুন চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ