পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এজলাসে বসতে না চাওয়া সংবিধান লঙ্ঘন
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের অভিভাবক। তাঁর এখতিয়ার সংবিধানে উল্লেখ আছে। অতীতে বছরে প্রধান বিচারপতি একবার-দুইবার বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতেন। কিন্তু ইদানীং গত এক মাসে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বঙ্গভবনে দাওয়াতের সংখ্যা বেড়ে গেছে; আপ্যায়নের হারও বেড়ে গেছে। কি এত আলাপ? এটা কিসের আলামত? প্রেসিডেন্ট সংবিধানের বাইরে যেতে পারেন না। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নিয়ে একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সভাপতি উম্মে কুলসুম বেগম রেখা, সহ-সম্পাদক শামীমা সুলতানা দীপ্তি, কার্যনিবাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার, অ্যাডভোকেট মৌসুমি আক্তার, মুহাম্মদ হাসিবুর রহমান ও শেখ তাহসিন আলী।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল জনগণের পয়সায় বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। তিনি সাংবিধানিক পদে থেকে দেশের সংবিধান, আইনের শাসন, বিচার বিভাগ ও জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় ঘোষণা মনোপুত না হওয়ায় তিনি প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ বানিয়েছেন। এস কে সিনহা যদি ষোড়শ সংশোধনীর রায় না দিতেন তাহলে তিনি আর অসুস্থ হতেন না। আইনজীবী সমিতিকে তিনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, পত্রিকায় দেখলাম অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে একটি রাজনৈতিক দল পরিচালিত করছে। যদিও তিনি দলের নাম উল্লেখ করেননি। তারপরও আমরা বলতে চাই অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্য মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমরা এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। অ্যাটর্নি জেনারেল দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়কে রাজনৈতিক কার্যালয় বানিয়েছেন, যা খুবই দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে বলেছেন, তিনি এজলাসে বসলে আদালত অবমাননা হবে। এ ধরনের বক্তব্যই কার্যত আদালত অবমাননার নামান্তর। আমরা বলতে চাই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংবিধান মোতাবেক শপথ নিয়ে ‘প্রধান বিচারপতি’ হয়েছেন। সুস্থ থাকার পরও সরকার তাকে অসুস্থ প্রচার করে বিদেশে পাঠিয়েছে। অথচ প্রধান বিচারপতি বিদেশ যাওয়ার আগে বলেছেন ‘আমি অসুস্থ নই; সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আমি বিদেশ যাচ্ছি তবে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমি আবার দেশে ফিরে আসব।’ আমরা জানি প্রধান বিচারপতি যেখানেই থাকুন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি। ‘প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসলে আদালত অবমাননা হবে’ অ্যাটর্নি জেনারেলের এ ধরনের বক্তব্য আদালত অবমাননাকর। রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে তিনি দেশের সংবিধান এবং দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন না। তাই অ্যাটর্নি জেনারেলের এ ধরনের বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থী।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা সব সময় দেখে আসছি বছরে একবার অথবা দুইবার প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন। ইদানীং একটু ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রেসনোট দেয়া হলো। সেখানে বলা হলো আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। প্রেসিডেন্ট তাদের কাছে প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন। সে কারণে তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এজলাসে বসবেন না। আমাদের প্রশ্ন হলো, দেশের প্রেসিডেন্ট কি প্রধান বিচারপতি বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের ডাকতে পারেন কি না? সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদের বলে তিনি বিচারপতিদের ডেকেছেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন- তিনি (প্রেসিডেন্ট) কি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে সংঘটিত করে আইনি অভ্যুত্থান করতে প্ররোচনা দিতে পারেন? প্রেসিডেন্ট এটা পারেন কি না। যদি তিনি পারেন তাহলে আমার মনে হয় বঙ্গভবন থেকে প্রেস রিলিজ দিয়ে জাতিকে জানানো উচিত যে, এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি (প্রেসিডেন্ট) প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে পাঁচজন বিচারপতিকে ডাকতে পারেন। বিচারপতিদের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ যাতে আনা হয় সে ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি যদি সংবিধানের অনুচ্ছেদ দেখাতে পারেন তাহলে আমরা উত্তর দেবো। সংবিধান তো একটাই। তার জন্য একটা, সারা বাংলাদেশের জন্য অন্যটা নয়। সবাই আইনের মধ্যে।
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সমগ্র বিচার বিভাগেই ক্যান্সার ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি যদি সংবিধান অনুযায়ী এসব না পারেন; তাহলে তাঁর কি পদে থাকা উচিত কি না আপাতত এ সিদ্ধান্ত তাকে দিলাম। তিনি আরো বলেন, আমাদের বিচারপতিরা সংবিধান অনুযায়ী শপথ নেন। সংবিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেন। তারা কি বলতে পারেন প্রেসিডেন্ট তাদের বলেছেন এ জন্য তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এজলাসে বসবেন না? তারা তো উচ্চ আদালতে বিচার করেন। প্রেসনোটে কথাটা বললেন। প্রেসনোটটা আমরা মনে করি তাদেরই বক্তব্য। এটা কি তারা বলতে পারেন? বিচারপতিদের অধিকার আছে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসব না বলার? তারাই তো বলেন, নিম্ন আদালতে কোনো বিচারক যদি বসতে না চান কনটেম্পট অব কোর্ট হবে। শপথ ভঙ্গ হবে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট অভিযোগ আনলেন। কোথায় অভিযোগ! এক মাস পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারলেন না। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। শুধু সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছে। আপনার প্রেসনোটে যে কথাটা বলেছেন সেটা কি বলা উচিত হয়েছে? কি অভিযোগ আপনাদের কাছে এলো সেটা আপনারা প্রকাশ করলেন না। এখানে ভোটাভুটির ব্যাপার না। আপনারা শপথ নিয়েছেন, আপনারা এজলাসে বসবেন। এখানে মেজরিটি-মাইনরোটি করতে হলে চাকরি ছেড়ে পার্লামেন্টে চলে যান।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধান বিচারপতির ক্যান্সার হয়েছে বলা হলো। তিনি (প্রধান বিচারপতি) নিজেই বললেন তিনি অসুস্থ না। প্রেসনোটে অসুস্থতার কথা বলা হয়নি। সরকার ক্যান্সারের কথা বলে সম্পূর্ণ বিচার বিভাগে ক্যান্সার সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিচার বিভাগে ক্যান্সারের যে জার্ম ঢুকেছে আমরা সেটাকে কিভাবে কন্ট্রোল করব জানি না। অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব ক’দিন পরই এ কথা বলেন। তিনি দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। তিনি প্রধান বিচারপতিকে ধমক দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন এস কে সিনহার প্রধান বিচারপতির পদে বসা সুদূরপরাহত। তিনি থ্রেড দিচ্ছেন। থ্রেড দেয়ার অধিকার অ্যাটর্নি জেনারেলের নেই। সাংবিধানিক পদ প্রধান বিচারপতিকে থ্রেড দেয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে যে শপথ নিয়েছেন সেটা তিনি ভেঙে ফেলেছেন। এখন কি করবেন সে সিদ্ধান্ত তিনি নিজে নিলেই ভালো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।