Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রসিক নির্বাচনে নৌকা পেতে মরিয়া ১০ নেতা তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি তরুণ নেতৃত্ব

| প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : গত ৫ নভেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। রসিক এর এই দ্বিতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই নগরীতে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দলীয় মনোনয় নিতে আ’লীগ ও বিএনপির অনেকেই হাই কমান্ডে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী অনেক আগেই নির্ধারণ করা হলেও ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ এবং বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি এখনও। ফলে দুই দলেরই একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশায় দৌড়-ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য এখন পর্যন্ত ১২/১৩ জন প্রার্থী মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। দলীয় মনোয়ন নিতে শেষ চেষ্টা হিসেবে ঢাকায় অবস্থান করছেন অনেকেই। তবে তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে এবার নতুন নেতৃত্বের দাবী উঠেছে জোরালোভাবে।
আসন্ন নির্বাচনে নৌকার কান্ডারি কে হচ্ছেন এখনও তার স্পষ্ট কোনো সংকেত না আসলেও নির্বাচনী মাঠে আছেন দলের ১০/১২ জন প্রার্থী। তারা প্রত্যেকেই নগরীর অলি-গলিতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রায় দু’মাস আগে থেকেই। প্রায় সকলেই তাদের নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন গনসংযোগ, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে। কেউ হাল ছাড়তে নারাজ। নৌকার কান্ডারি হতে মরিয়া হয়ে যোগাযোগ করে চলেছেন দলের হাই কমান্ডে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন বর্তমান সিটি মেয়র শরফ উদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, রংপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম, সাবেক পৌর মেয়র ও সাবেক জাপা নেতা এ কে এম আব্দুর রউফ মানিক, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, রংপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল।
রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর একাধিক সূত্র এবং তৃণমুলের নেতাকর্মীরা বলছেন, সুখে-দুঃখে পাশে থাকাসহ বিতর্কিত নন এবং ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকেই দলীয় প্রার্থী চান তারা। বিশেষ করে তরুন এবং নতুন নেতৃত্বকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা। সেক্ষেত্রে রাশেক রহমানের বিকল্প নেই বলেও দাবী তুলেছেন তৃণমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে রাশেক রহমানের পক্ষে কয়েক হাজার নেতাকর্মী গত রোববার বর্তমান মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর বিরুদ্ধে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগ তুলে নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও এবং নগরীতে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেছেন। তারা মনে করেন, স্থানীয় এই সিটি নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের অনেকটা প্রভাব ফেলবে আগামী সংসদ নির্বাচনে।
রংপুর সিটি করপোরেশন ২০১২ সালের ২৮ জুন সিটি করপোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরপর প্রথম নির্বাচনে শরফুউদ্দিন আহাম্মেদ ঝন্টু ২৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
মোস্তফা-ঝন্টু ওই নির্বাচনে সরাসরি দলের হয়ে নির্বাচন না করলেও মোস্তফাকে বেশ কিছুদিন আগেই এবার সিটি মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত কয়েকদিন আগে তাকেই চুড়ান্তভাবে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি। তবে চাচা এরশাদের এই সিন্ধান্তে বাধ সেধেছেন ভাতিজা সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার। তিনিও নিজেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পাশাপাশি সভা-সমাবেশ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নৌকার জন্য দলের হাই কমান্ডে লিয়াজো চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনিও বেশ আশাবাদী। তবে তিনি শুধুমাত্র নৌকার জন্যই বসে নেই। ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান। নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন আশাবাদী। বেশ ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি থাকায় তিনি সেটাকে কাজে লাগিয়ে অনেকটা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা একেএম আব্দুর রউফ মানিক এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনিও বেশ আশাবাদী। রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলনও আশা করেন দলের প্রাথী হবে। জোরেশোরে গণসংযোগ চালাচ্ছেন তিনি। ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। দল মনোনয়ন দিলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন এমন আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছেন মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন তিনি। সে কারণে চেষ্টার তদবিরে পিছিয়ে নেই এই্ বীর মুক্তিযোদ্ধা। লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলও।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিতে হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন কাওছার জামান বাবলা। তিনি গত নির্বাচনেও বিএনপির মনোনয়নে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। তবে এবারে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা যুবদলের প্রার্থী নাজমুল আলম নাজু। তিনিও নগরীর বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ