Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদালত প্রাঙ্গণে দ্বিমুখী আলোচনা

প্রধান বিচারপতির ফেরা প্রসঙ্গ

মালেক মল্লিক | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেশে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে চলছে দ্বিমুখী আলোচনা। আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। আর মাত্র তিন দিন পর প্রধান বিচারপতি ছুটির শেষে দায়িত্ব নিচ্ছেন কি না এ নিয়ে চলছে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণ সূদুর পরাহত। তবে সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, অ্যাটর্নী জেনারেল একটু বেশি বলছেন। উথাপিত অভিযোগগুলো তদন্তের হওয়ার আগে এসব বলা বন্ধ করা উচিত। কারণ তিনি (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) এখনও প্রধান বিচারপতি এটা মনে রাখতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেস্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণ করা আইনত বাধা নেই। ছুটি এসে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলছেন, প্রধান বিচারপতি দায়িত্বে ফিরে বাস্তবতার নিরিখে কোনভাবেই সম্ভব নয়।
এদিকে কবে নাগাদ প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরছেন এ বিষয়ে কোন কথা বলেছেন না সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে পরিবারের একটি সূত্রে বলেছেন, দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ছুটি শেষে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশে ফিরবেন। কারণ এটা নিয়ে তো কোন বির্তক থাকার কথা নয়। তিনি আরো বলেন, উনি (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) এখনো প্রধান বিচারপতি এটা আমাদের বুঝতে হবে। দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূরপরাহত বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মন্তব্যের বিষয়ে সাবেক আইন মন্ত্রী বলেন, অ্যাটর্নী জেনারেল একটু বেশি বলছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল যদি আইনে শাসনে বিশ্বাস করেন তাহলে তিনি এসব কথা বলা বন্ধ করা উচিত। অ্যার্টনি জেনারেল কি বিচারের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন ? তিনি আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেই সব শুধু মাত্র কাগজে কলমে। এই সব প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ হলে আইন মোতাবেক মামলা হবে। আইনে শাসনে বিশ্বাস করলে তদন্তের আগে এমন বক্তব্য দেয়া ঠিক না।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেস্টা অ্যাডভোাকেট জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব গ্রহণ করা আইনত বাধা নেই। যদি তিনি পদত্যাগ না করেন। সরকার কি ভাবছেন এটা তো আমি জানি না। প্রধান বিচারপতি তো বিদেশ যাওয়ার আগে বেেলছেন, দেশে ফিরবেন। আমরা আশা করছি তিনি দেশে ফিরবেন। অ্যার্টনি জেনারেল এ বিষয়ে আরো ভাল বলতে পারবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মন্তব্যে বিষয়ে আইনজীবী নেতা বলেন, ইতোপূর্বে একজন প্রধান বিচারপতি চেয়ারে না বসে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ও আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, প্রধান বিচারপতির এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তার নৈতিকতা ও সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়াও আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিরা তার সঙ্গে বিচারকার্য বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ্রুপ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি হিসাবে তার দায়িত্বে ফিরে আসা ও বিচার কাজে অংশগ্রহণ বাস্তবতার নিরিখে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরেবেন কি না অথবা পদত্যাগ করবেন কিনা এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।
ষোড়শ সংশোধনী রিট কারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল প্রধান বিচারপতি ও সরকারের কাছের ব্যাক্তি উনি বলেছেন, ফিরে এসে দায়িত্ব গ্রহণ সদুর পরাহত। এখন আর কি বলব। উনি তো জানেন বেশি। তবে ভারতীয় হাইকমিশনার যে বক্তব্য দিয়েছেন সে অনুয়ারী তিনি ছুটির এসে দেশে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
অবকাশকালীন ছুটি শেষে গত ২ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন অসুস্থতার কথা জানিয়ে একমাসের ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এমন সংবাদ দেন আইন মন্ত্রনালয়। এরপর গত ১০ অক্টোবর ছুটির মেয়াদ আরো ১০ দিন বর্ধিত করা হয়। ওইদিনই সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটি চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কাছে পাঠানো হয়। এরপরই ১২ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি বর্ধিত ছুটিকালীন বিদেশে অবস্থানকালে ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত অথবা পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহন না করা পর্যন্ত বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
গত ১৩ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া যান প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আর এক পর্যায়ে কাগজে লেখা একটি বিবৃতি দেন তিনি। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানীং একটি রায় নিয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
প্রধান বিচারপতি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এরপর গত ১৫ অক্টোবর আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ উঠেছে, দুদক তার অনুসন্ধান করবে। রায় প্রকাশের পর এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থী আইনজীবীরা। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা করেন সংসদ সদস্য। এরপর রিভিউ করার জন্য অ্যার্টনি জেনারেল এর নেতৃত্বে ১১ সদস্য কমিটিও গঠন করে সরকার। গত ৪ অক্টোবর আইন মন্ত্রী অ্যার্টনি কার্যালয়ে গিয়ে রিভিউ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, আমি আগেও বলেছিলাম প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত। আজকেও তাই বলছি। কারণ অন্য বিচারপতিরা যদি উনার সঙ্গে না বসতে চান তাহলে তিনি কিভাবে বিচার করবেন? ।



 

Show all comments
  • হিমেল ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ২:২৩ এএম says : 0
    এগুলো নিয়ে কথা বললে আবার আমাদের দোষ হয়ে যাবে। তাই আমরা সাধারণ মানুষ চুপ চাপ সব কিছু দেখা ছাড়া কোন উপায় নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম উদ্দিন ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    সংবিধান মেনে যেন সব কিছু করা হয় এটাই আমরা চাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ