Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে পুলিশে দিলেন মা

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৭ পিএম

মায়ের চোখে জল, ছেলের এক হাত শক্ত করে ধরে আছেন। এই ছেলেকেই তিনি নিয়ে এসেছেন পুলিশের হাতে তুলে দিতে। ছেলের বিরুদ্ধে অন্যকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তাকে ধরার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছিল। ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে আবার বাড়ি ফিরে গেলেন মা।

সুনামগঞ্জে এক অটোরিকশাচালককে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ ছিল পুলিশের তথ্যদাতা (সোর্স) সালমান ইসলামের (২৬) বিরুদ্ধে। আড়াই মাস পলাতক থাকার পর অবশেষে এই সালমান ইসলামকে তার মা স্বপ্না বেগম নিজেই পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

আজ সোমবার সকালে সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষের কার্যালয়ে সালমানকে নিয়ে আসেন স্বপ্না বেগম। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সালমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৈন্দা গ্রামে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ পৌর শহরের একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে জগন্নাথপুর উপজেলার পূর্ব বুধারাইল গ্রামের সিএনজি অটোরিকশাচালক নূর মিয়াকে (৩৮) আটক করে পুলিশ। পুলিশ এ সময় তার অটোরিকশা থেকে একটি লোহার তৈরি পাইপগান উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় নূর মিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। পরে পুলিশ জানতে পারে—নূর মিয়া নির্দোষ। গ্রাম্য বিরোধের জের ধরে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এক মাস ১১ দিন কারাভোগের পর ছাড়া পান নূর মিয়া।

পুলিশ বলছে, মামলায় নূর মিয়া ও তার দুই চাচাতো ভাই আকবুল মিয়া ও সুমিম মিয়াকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছিলেন গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী কয়েছ মিয়া এবং একই গ্রামের আনিছুর রহমান ও সালমান ইসলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নূর মিয়াকে অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে ধরিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তারা নিজেরাই ফেঁসে যান। ওই মামলায় কয়েছ মিয়া, আনিছুর রহমান ও সালমান ইসলামকে আসামি করা হয়। কয়েছ মিয়াকে (৩৫) গত ২৯ অক্টোবর সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আনিছুর রহমান জামিনে আছেন।
সালমান ইসলাম বলেন, আমি ভুল করেছি। মা ফোনে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার কথা বললে আমি রাজি হই। আমি ভালো হতে চাই।
স্বপ্না বেগম বলেন, ‘সালমান আমার একমাত্র ছেলে। আমার পাঁচ মেয়ে, সবাই লেখাপড়া করছে। কিন্তু ছেলেকে মানুষ করতে পারিনি। আমি চাই, সে দোষ করে থাকলে তার শাস্তি হোক। সে যেন আর এমন অপরাধ না করে।’
সুনামগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, পুলিশ বিষয়টি জানার পরই সালমানকে ধরার জন্য খুঁজছিল। বিষয়টি তার মা অনুধাবন করতে পেরে ছেলেকে বোঝান। পরে তিনি আত্মসমর্পণ করতে রাজি হন। আমরা সালমানের পরিবার, বিশেষ করে তার মায়ের এই উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। এখন তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।



 

Show all comments
  • মোঃ জাকির ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ৫:১৮ পিএম says : 0
    এই রকম মা থাকলে সন্তানের পক্ষে অপরাধ করা অসম্ভব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ