Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রবির ৯২২ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির দাবি এনবিআরের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৫টি দাবিনামা জারি করেছে এলটিইউ ভ্যাট
স্টাফ রিপোর্টার : মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ৯২২ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে বলে দাবি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অবৈধভাবে রেয়াত গ্রহণ, রবি-এয়ারটেলের মার্জার ফি ও স্পেকট্রাম চার্জের বিপরীতে এবং ইন্টারকানেকশন চার্জের বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ না করে এ বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে জানানো হয়। গতকাল (রোববার) ভ্যাট ফাঁকির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে ১৫ দিনের মধ্যে ভ্যাট পরিশোধ করতে পৃথক ৫টি দাবিনামা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্ত বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট)।
এলটিইউ’র নিরীক্ষায় ৭১১ কোটি ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন: এলটিইউ’র সহকারী কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সীর নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরীক্ষা দল রবির এসএপি সফটওয়্যার নিরীক্ষা করে। এ নিরীক্ষায় এলটিইউ ভ্যাট দেখতে পায়, এসএপি সফটওয়্যার বাবদ ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ও উৎসে ভ্যাট বাবদ ১৫৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ভ্যাট কম পরিশোধ করেছে রবি। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসভিত্তিক এসএপি সফটওয়্যারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। অথচ দাখিলপত্রে ভ্যাট দিয়েছে ২ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা কম পরিশোধ করেছে। আবার এসএপি সফটওয়্যারের তথ্য মতে, উৎসে ভ্যাট বাবদ ৫৫৩ কোটি টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও দাখিলপত্রে ৩৯৫ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়েছে প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রেও ১৫৮ কোটি টাকা কম পরিশোধ করা হয়েছে। আইন বহিভর্‚তভাবে রেয়াত গ্রহণ: আলোচ্য সময়ের রবির আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে নিরীক্ষা দল। এ আমদানির তথ্য প্রতিষ্ঠানটির ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-১৬), চলতি হিসাব পুস্তক (মূসক-১৮) ও দাখিলপত্রের (মূসক-১৯) সাথে যাচাই করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষাকালীন সময়ে ব্যাটারি, ক্যাবল, প্রিন্টেড বোর্ড, রাউটার, সুইচ খাতে ১১৬ কোটি টাকার রেয়াত গ্রহণ করেছে। যেটি ভ্যাট আইনের ৯(১)(ঙ) ধারা লংঘের শামিল ও ৯(২) ধারায় বাতিলযোগ্য। এছাড়াও ব্যাটারি, ক্যাবল, প্রিন্টেড বোর্ড, রাউটার, সুইচ বিধি দ্বার নির্ধারিত পদ্ধতিতে অর্থাৎ যথাযথভাবে ক্রয় হিসাব পুস্তকে এন্ট্রি করা হয়নি। এসব অনিয়মের প্রেক্ষিতে কেন রেয়াত বাতিল করা হবে তা জানাতে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে দাবিনামা জারি করা হয়েছে।
ইন্টারকানেকশন চার্জের বিপরীতে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি: ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রবির সঙ্গে বিটিসিএলের (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড) ইন্টারকানেশকন চার্জের বিপরীতে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করার কথা থাকলেও সেটি পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। নিয়ম অনুযায়ী বিটিসিএলের সঙ্গে ইন্টারকানেশন চার্জ বাবদ ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেয়ার কথা আছে। এ ভ্যাট আদায়ে পৃথক দুটি দাবিনামা জারি করা হয়েছে।
মার্জার ফি ও স্পেকট্রাম চার্জের ওপর ৯১ কোটি টাকা অনাদায়ী: এলটিইউ নিরীক্ষায় দেখতে পায়, রবি আজিয়াটা ও এয়ারটেলের একীভ‚তকরণের ক্ষেত্রে মার্জার ফি বাবদ ১০০ কোটি টাকা এবং এয়ারটেলের ২০১১ সালের সর্বশেষ ২জি লাইসেন্সের আওতায় নবায়নকৃত তরঙ্গ মূল্য সমন্বয় বাবদ ৫০৭ কোটি টাকার ওপর ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি। মোট ৬০৭ কোটি টাকার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধের কথা থাকলেও সেটি পরিশোধ করা হয়নি। তাই মার্জার ফি ও স্পেকট্রাম চার্জের ওপর ৯১ কোটি টাকা অনাদায়ী ভ্যাট পরিশোধ করতে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এয়ারটেল ও রবি একীভ‚ত হওয়ায় এয়ারটেলের সব দায়দেনা রবিকে পরিশোধ করতে হবে। তাই রবি-এয়ারটেলের কোন কোন ক্ষেত্রে ভ্যাট বকেয়া আছে সেটি নির্ধারণের জন্য পূর্ণাঙ্গ অডিট করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো কোন মোবাইল অপারেটরকে এ ধরণের অডিট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমিউনিকেশন্স এন্ড কর্পোরেট রেসপনসিবিলিটি ইকরাম কবীর বলেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ একটি নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ এবং আমরা এসব নোটিশের আইনগত যুক্তি প্রেরণ করে থাকি। তিনি বলেন, রবি আইন অনুযায়ি সবধরণের ট্যাক্সের পক্ষে কিন্তু টেলিকম খাতে যখন ট্যাক্সের বিষয় আসে তখন এই খাতকে ভিন্নভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়। মার্জার এবং অন্যান্য ফি’র বিষয়গুলো এখন বিচারাধীন রয়েছে উল্লেখ করে ইকরাম কবীর বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) যদি সবধরনের ভ্যাট গ্রহণের রেজিস্টার কর্তৃপক্ষ হতো তাহলে এর সমাধান হয়ে যেতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এনবিআর আইন অনুযায়ী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বরং অপারেটরদেরকে চাপ দিচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ